আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাপানের রাজধানী টোকিওসহ বিভিন্ন স্থানে শনিবার আঘাত হেনেছে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হাগিবিস। এই ঝড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছে আরো ১৫ জন। এছাড়া ঝড়ে আহত হয়েছে আরো দুই শতাধিক মানুষ। মঙ্গলবার স্থানীয় কর্মকর্তা ও উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স।
আরো পড়ুন: মেক্সিকোতে ভয়াবহ হামলায় ১৪ পুলিশ নিহত
শনিবার সন্ধ্যায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হাগিবিস দ্বীপের উপকূল দিয়ে জাপানের স্থলভাগের দিকে উঠে আসে। রবিবার সকালে দুর্বল হয়ে পড়া ঝড়টি পূর্ব উপকূলের দিকে এগিয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জাপানের নিগানো, নিগাতা, মিয়াগি, ফুকুসিমা, ইবারাকি, কানাগাওয়া এবং সাইতাম এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এসব স্থানে এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে।
তবে ঘূর্ণিঝড় হাগিবিসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুকুশিমা এলাকাটি। এখানেই মারা গেছে সবচেয়ে বেশি মানুষ। এই এলাকায় মা ও শিশুসহ কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জাপানের সরকারি বার্তা সংস্থা এনএইচকে জানিয়েছে।
জাপানে ভয়াবহ ওই ঘূর্ণিঝড়ে এখনও নিখোঁজ রয়েছে আরো ১৫ জন। তবে তাদের আর জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলোতে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি দমকল কর্মী, উপকূলীয় রক্ষী, পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
এনএইচকে জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে জাপানে এখনও ২৪ হাজার বাড়ি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এর আগে ১ লাখ ৬২ হাজার বাড়ি বিদ্যুবিহীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানানো হয়েছিলো। এছাড়া এখনও পনি সঙ্কটে রয়েছে আরো ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘরবাড়ি।
জাপনে ঘূর্ণিঝড় হাগিবিস আঘাত হানার আগেই ৭ লাখের বেশি মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে মাত্র ৫০ হাজার মানুষ সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ঝড়ের কারণে রাজধানীর নারিতা ও হানিদা বিমানবন্দরে বিমান উড্ডয়ন-অবতরণে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিলো ইতিমধ্যে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে রোববার-ও ৮০০ এর অধিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে জরুরি সভা আহ্বান করেছেন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘টাইফুনের আঘাতে আহতের প্রতি সমবেদনা ও নিহতদের প্রতি দুঃখপ্রকাশ করছি।’
তিনি বলেন, ‘ব্ল্যাকআউটস (বিদ্যুৎবিচ্ছিন্নতা), জলাবদ্ধতা ও পরিবহন পরিষেবা স্থগিতের বিষয়ে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আমরা সর্বসাধারণকে ভূমিধস ও অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলছি।’
প্রসঙ্গত, হাগিবিস শব্দটি এসেছে ফিলিপাইনের ট্যাগালগ ভাষা থেকে। ট্যাগালগ অর্থ গতি।
জাপনে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনো নতুন ঘটনা নয়। মাত্র এক মাস আগেই অন্য এক ঘূর্ণিঝড়ে দেশটির ৩০ হাজারের মতো ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল। তবে জাপানে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় বা টাইফুন আঘাত হেনেছিল ১৯৫৮ সালে। ক্যানোগাওয়া নামের ওই ঘূর্ণিঝড়ে তখন এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।