বিগত সরকারের দীর্ঘ ষোলো বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণের বহুমাত্রিক পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। এই আন্দোলনকে বিজয়ী করতে কোটা সংস্কার, শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা, কর্মসংস্থানের অভাব, এবং সরকারি দুর্নীতি প্রভাবিত করেছে। আন্দোলনকারী ছাত্ররা উন্নত শিক্ষার দাবিতে এবং রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে।
বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র ও জনগণের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। এই সরকারকে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনের পাশাপাশি দেশের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে নির্বাচনী কমিশন, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো, এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর সংস্কার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বর্তমান উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ
১. নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আয়োজন: ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ, কারণ নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে জনমনে একটি গভীর অবিশ্বাস রয়েছে।
২. অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভারসাম্য: ভয়ংকর এক লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল দেশে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পংগু করা হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন, যার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হচ্ছে। অর্থনৈতিক এবং সম্পদের ভারসাম্য ঠিক করা।
৩. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা: আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। পুলিশ এখনও পরিপুর্নভাবে কাজ করার মত পরিস্থিতিতে আসেনি এবং নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। সরকারের পরিবর্তনের সাথে সাথে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল হয়েছে। অপরাধ বৃদ্ধি, নিরাপত্তাহীনতা এবং জনগণের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
৪. সামাজিক অসন্তোষ: ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে সামাজিক অসন্তোষ ও বিভাজন বেড়েছে। হেরে যাওয়া মানুষগুলি গোপনে সংগঠিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের জনগণের মধ্যে ভীতি, উদ্বেগ এবং ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৫। দুর্নীতি: দেশে দুর্নীতি যেন একটা অলিখিত আইনে পরিনত হয়েছিল। এমন কোন প্রতিষ্টান ছিল না যেখানে দুর্নীতি হয়নি। সরকারি এবং বেসরকারি খাতে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের গতি কমে গিয়েছে এবং সেবার মান হ্রাস পেয়েছে।
৬। বৈষম্যহীন সামাজিক ব্যবস্থা এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠাঃ সব স্তরে সুবিচার প্রতিষ্টা, সমাজের সুযোগ-সুবিধা্র সুষম বন্টন এবং আকাশ ছোঁয়া বৈষম্য দূরীকরন ছাত্র-জনতার একটা মৌলিক দাবি। নারী, শিশু, এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা এবং তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ প্রদান।
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্ভাব্য করণীয়
১. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে যেন জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়। রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে সকল পক্ষের মতামত নেওয়া উচিত।
২. অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও টেকসই ব্যবস্থা: ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সংস্কার করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সরকারকে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের জন্য প্রণোদনা দিতে হবে এবং নিয়ম-কানুনের সুষম বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে আর্থিক সংকট মোকাবেলা করতে হবে।
অর্থনীতির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। টেকসই অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য, বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে উৎসাহিত করে স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি, কৃষি খাতের আধুনিকীকরণ এবং রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠা করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
৩. আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন: অতি দ্রুত আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে হবে তা-না হলে সামাজিক শংখলা ভেংগে পড়তে পারে। পুলিশ বিভাগকে প্রকৃতভাবে ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ এর দর্শনে গড়তে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশিক্ষণ প্রদান, দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। দ্রুত ও কার্যকর বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মামলা গ্রহণ এবং নিষ্পত্তির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
৪। শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন:শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কারসহ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ব্যাপকতার প্রসার ঘটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নতুন প্রজন্মকে গ্লোবাল মার্কেটে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে। বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার এবং নতুন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গঠন শিক্ষাব্যবস্থার একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে।
৫। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: সরকারি ও বেসরকারি খাতে দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সৎ ও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক প্রশাসনপদ্ধতি গঠন করে জনগণের আস্থার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনিক সংস্কার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এছাড়া, জনগণের মতামত এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সরকারী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত। সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আইন-শৃংখলা বাহিনীকে তদারকি করা, সুশাসন নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতি রোধ করার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা যেতে পারে।
৬। নির্বাচনী সংস্কার: একটি স্বাধীন এবং কার্যকরী নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা ছাত্রজনতার আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন অংশে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটি সুষম কাঠামো গড়ে তোলা যেতে পারে।
৭। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার: শিক্ষাব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, এবং সামাজিক ন্যায়বিচার সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলির সংস্কার জরুরি। বিশেষ করে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অটোনমি বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
৮। ছাত্রজনতার অংশগ্রহণ: ছাত্রজনতার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফোরাম গঠন করা যেতে পারে, যা সরকারের কর্মকাণ্ডের উপর নজরদারি রাখবে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবে। এই পরিষদকে স্বাধীন রাখা জরুরি, যাতে তা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করতে পারে। সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং জনগণের ভূমিকা
• সরকার: সরকারের সকল পর্যায়ে নিরপেক্ষ, দৃঢ় ও সৎভাবে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। স্থিতিশীলতা, আইন-শৃঙ্খলা এবং উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিয়ে কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান সময়টি খুবই নাজুক। তাই অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় প্রকার ষড়যন্ত্র এবং নাশকতা নস্যাৎ করবার প্রস্তুতি থাকতে হবে।
• রাষ্ট্রযন্ত্র: রাষ্ট্রযন্ত্রকে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
• জনগণ: জনগণকে সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করতে হবে এবং সরকারের সাথে মতবিনিময় করে সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সচেতনতা সমাজের উন্নয়নে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং সকল দুর্বলতা কাটাতে হলে সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। রাষ্ট্রযন্ত্র ও জনগণের যৌথ উদ্যোগে সমস্যাগুলির সমাধান সম্ভব। একটি শক্তিশালী, সুশাসিত ও সুস্থ সমাজ গঠন করতে হলে সবাইকে একত্রিতভাবে কাজ করতে হবে ।
বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র ও জনগণের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। এই সরকারকে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনের পাশাপাশি দেশের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে নির্বাচনী কমিশন, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো, এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর সংস্কার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বর্তমান উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ
১. নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আয়োজন: ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ, কারণ নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে জনমনে একটি গভীর অবিশ্বাস রয়েছে।
২. অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভারসাম্য: ভয়ংকর এক লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল দেশে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পংগু করা হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন, যার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হচ্ছে। অর্থনৈতিক এবং সম্পদের ভারসাম্য ঠিক করা।
৩. আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা: আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। পুলিশ এখনও পরিপুর্নভাবে কাজ করার মত পরিস্থিতিতে আসেনি এবং নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। সরকারের পরিবর্তনের সাথে সাথে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল হয়েছে। অপরাধ বৃদ্ধি, নিরাপত্তাহীনতা এবং জনগণের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
৪. সামাজিক অসন্তোষ: ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে সামাজিক অসন্তোষ ও বিভাজন বেড়েছে। হেরে যাওয়া মানুষগুলি গোপনে সংগঠিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের জনগণের মধ্যে ভীতি, উদ্বেগ এবং ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৫। দুর্নীতি: দেশে দুর্নীতি যেন একটা অলিখিত আইনে পরিনত হয়েছিল। এমন কোন প্রতিষ্টান ছিল না যেখানে দুর্নীতি হয়নি। সরকারি এবং বেসরকারি খাতে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের গতি কমে গিয়েছে এবং সেবার মান হ্রাস পেয়েছে।
৬। বৈষম্যহীন সামাজিক ব্যবস্থা এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠাঃ সব স্তরে সুবিচার প্রতিষ্টা, সমাজের সুযোগ-সুবিধা্র সুষম বন্টন এবং আকাশ ছোঁয়া বৈষম্য দূরীকরন ছাত্র-জনতার একটা মৌলিক দাবি। নারী, শিশু, এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা এবং তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ প্রদান।
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্ভাব্য করণীয়
১. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে যেন জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়। রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে সকল পক্ষের মতামত নেওয়া উচিত।
২. অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও টেকসই ব্যবস্থা: ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সংস্কার করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সরকারকে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের জন্য প্রণোদনা দিতে হবে এবং নিয়ম-কানুনের সুষম বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে আর্থিক সংকট মোকাবেলা করতে হবে।
অর্থনীতির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। টেকসই অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য, বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে উৎসাহিত করে স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি, কৃষি খাতের আধুনিকীকরণ এবং রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠা করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
৩. আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন: অতি দ্রুত আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে হবে তা-না হলে সামাজিক শংখলা ভেংগে পড়তে পারে। পুলিশ বিভাগকে প্রকৃতভাবে ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ এর দর্শনে গড়তে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশিক্ষণ প্রদান, দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। দ্রুত ও কার্যকর বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মামলা গ্রহণ এবং নিষ্পত্তির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
৪। শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন:শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কারসহ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং ব্যাপকতার প্রসার ঘটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নতুন প্রজন্মকে গ্লোবাল মার্কেটে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে। বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার এবং নতুন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গঠন শিক্ষাব্যবস্থার একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে।
৫। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: সরকারি ও বেসরকারি খাতে দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সৎ ও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক প্রশাসনপদ্ধতি গঠন করে জনগণের আস্থার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসনিক সংস্কার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এছাড়া, জনগণের মতামত এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সরকারী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত। সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আইন-শৃংখলা বাহিনীকে তদারকি করা, সুশাসন নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতি রোধ করার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা যেতে পারে।
৬। নির্বাচনী সংস্কার: একটি স্বাধীন এবং কার্যকরী নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যা ছাত্রজনতার আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন অংশে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে একটি সুষম কাঠামো গড়ে তোলা যেতে পারে।
৭। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার: শিক্ষাব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, এবং সামাজিক ন্যায়বিচার সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলির সংস্কার জরুরি। বিশেষ করে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অটোনমি বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
৮। ছাত্রজনতার অংশগ্রহণ: ছাত্রজনতার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফোরাম গঠন করা যেতে পারে, যা সরকারের কর্মকাণ্ডের উপর নজরদারি রাখবে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবে। এই পরিষদকে স্বাধীন রাখা জরুরি, যাতে তা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করতে পারে। সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং জনগণের ভূমিকা
• সরকার: সরকারের সকল পর্যায়ে নিরপেক্ষ, দৃঢ় ও সৎভাবে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। স্থিতিশীলতা, আইন-শৃঙ্খলা এবং উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিয়ে কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান সময়টি খুবই নাজুক। তাই অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় প্রকার ষড়যন্ত্র এবং নাশকতা নস্যাৎ করবার প্রস্তুতি থাকতে হবে।
• রাষ্ট্রযন্ত্র: রাষ্ট্রযন্ত্রকে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
• জনগণ: জনগণকে সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করতে হবে এবং সরকারের সাথে মতবিনিময় করে সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সচেতনতা সমাজের উন্নয়নে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং সকল দুর্বলতা কাটাতে হলে সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। রাষ্ট্রযন্ত্র ও জনগণের যৌথ উদ্যোগে সমস্যাগুলির সমাধান সম্ভব। একটি শক্তিশালী, সুশাসিত ও সুস্থ সমাজ গঠন করতে হলে সবাইকে একত্রিতভাবে কাজ করতে হবে ।