টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে নোয়াখালীতে যে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে তাতে ডুবেছে ঘরদোর, চুলা জ্বলছে না বেশির ভাগেরই। খাদ্যসংকটে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। পানিবন্দী এসব মানুষের কাছে ত্রাণসহায়তা দিতে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিপর্যায়ে অনেকে এগিয়ে এসেছেন।
তবে নোয়াখালীর বানভাসিরা বলছেন, বিপুল পরিমাণ ত্রাণ আসছে, কিন্তু ‘অব্যবস্থাপনা’র কারণে তা সবাই পাচ্ছেন না। মুখ ফুটে বলতে না পেরে নিদারুণ দিন কাটছে মধ্যবিত্তের। আবার প্রান্তিক এলাকায় সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
একজন সিএনজি চালক বলেন, “দেখা গেছে আমি গরিব, আমি একজনের সামনে দাঁড়াই খুঁজি নিতে পারব। কিন্তু আরেকজন, এমনও মানুষ আছে যে মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির। ও খুঁজি নিতে পাইরতেছে না শরমে, লইজ্জার কারণে। মেইন সমস্যাটা ওই জায়গায় বাজি (আটকে) রইছে।"
একই কথা বলছেন ভয়াল বন্যার মুখে পড়া ফেনীর বাসিন্দারা। সেখানকার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর নিতে গেলে অনেকের কথায় উঠে এলো ত্রাণ বণ্টনে অব্যবস্থাপনার চিত্র।
তাদের ভাষ্য, কিছু মানুষ সবসময়ই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকে, কেউ কিছু নিয়ে আসলে তাদেরকেই দেয়। আর কেউ আছে একবারও কিছু পায়নি, কারণ তারা রাস্তায় এসে দাঁড়াতে পারেন না, আবার কাউকে বলতেও পারেন না।
ফেনী মুন্সিরহাটের কমুয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, অনেকে ত্রাণ আইসছে, কিন্তু সমস্যা হইতেছে সবাই পাইতেছে না। কেউ ১০ বার নিতেছে, কেউ একবারও পাইতেছে না। আমার কিছু লাইগত নো, আল্লাহ আমারে যেমন রাখছে চলি যাইতেছে দিন। কিন্তু আমি চাই যারা ক্ষতিগ্রস্থ হইছে- সবাই সাহাইয্য পাক। যে লোকটা রাস্তায় দাঁড়াই ত্রাণ নিতেছে- সে ক্ষতিগ্রস্ত হইছে, আবার যে বাড়ি আছে- সেও ক্ষতিগ্রস্ত হইছে। লোক ধরি ধরি দিলে এই সমস্যাটা হয় না।
বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তাতে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেকেই।
বেগমগঞ্জের একলাশপুর এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, “সারাজীবন মাইনষেরে দিছি, এখন যতো কষ্টেই থাকি নিতামনো, দি-ই (দিয়ে) যাইয়ুম। মঙ্গলবার একটা ফ্যামিলিরে চাল-ডাল কিনি দি আসছি গোপনে, লোকটা এতো খুশি হইছে। তারা চাইতেও পারে না, খাইতেও পারে না। কিন্তু এরা খুবই অভাবে আছে।
“কে কোন অবস্থায় আছে- এইডাতো ঢাকার কেউ জানে না। এরাতো আনতেছে দিতেছে, ভালো কাজ। এইডাও দেক, মানুষ পাইতেছে। কিন্তু আমাগো সমাজে যারা বিত্তশালী আছে- এরাতো ঘুমাই গেছে। যহন পানি টান দিবো (পানি নেমে গেলে) তহন তারা বাইর হইবো।"
এই ব্যবসায়ী বলেন, “অনেকের সিএনজি আছে। সিএনজি চালাই ধরেন ডেইলি এক হাজার পাইতো। এক হাজারই কিন্তু ডেইলি শেষ হই যাইতো। এইযে তাগো ১০ দিন সিএনজি বন্ধ, তারা চলবো কেমনে?
“কিন্তু সবাই জানে হেতার সিএনজি আছে। আদৌ তার কাছে কোন ক্যাশ ক্যাপিটাল আছে নি, এডাতো কেউ বুঝে না।"
প্রান্তিক এলাকায় ‘পৌঁছেনি’ ত্রাণ
বন্যায় পরশুরাম প্রথমে আক্রান্ত হয়ে ফেনী শহরের দিকে পানি আসতে থাকে। যখন পরশুরামের বাসিন্দাদের ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন, তখন ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। কয়েকদিনের মধ্যে পরশুরাম পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারলেও তা পায়নি প্রান্তিক এলাকার মানুষ।
সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন সহায়তা পাচ্ছেন প্রয়োজনের চেয়েও বেশি, আর দূরের মানুষ কিছুই পাচ্ছে না বলে জানালেন স্থানীয়রা।
পরশুরাম উপজেলার কাশীনগরের শাহজাহান বলেন, “সব ত্রাণ এদিক-ওদিক চলি যায়, আমরা কাশিনগর ও চম্পকনগরের মানুষ। আমি বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কোনোরকম খেয়ে আছি। তিনবারেরটা একবার খাই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তু ঘুরি আইলাম; কিছুই পাই নাই।"
বেগমগঞ্জের একলাশপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, “আমি ১০ দিনের বন্যায় গতকাল এক প্যাকেট মুড়ি পাইছি। আমার বাড়ির পাশে নাকি বাজার আছে, আমার বলে কষ্ট নাই। অথচ বন্যার শুরু হইতে রান্না করার কোনো ব্যবস্থা নাই। ঘরেই আছি, কোথাও যাইতামনো। বাঁচি-মরি ঘরেই থাইকমু।"
বন্যায় স্বেচ্ছাশ্রমের কাজ করা চৌমুহনী এলাকার শিক্ষার্থী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “পৌরসভার মধ্যে টুকটাক ত্রাণ যাইতেছে। হাজীপুর-দুর্গাপুরের মতো প্রান্তিক যে জায়গাগুলো আছে; ওই জায়গাগুলোতে ত্রাণও কম পৌঁছাইতেছে, মানুষের নজরটাও কম পড়তেছে।"
ফেনীতে কর্মরত এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “প্রশাসন চাইলেই ত্রাণের সুষ্ঠু বণ্টনের ব্যবস্থা করতে পারতেন। জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিলে ইউএনও'দের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে তালিকা ধরে ধরে ত্রাণ দেয়া কোনো বিষয়ই না। সবাই ত্রাণ নিয়ে আসতো, তালিকা ধরে ধরে দিলে আর এমনটি হতো না।"
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
তবে নোয়াখালীর বানভাসিরা বলছেন, বিপুল পরিমাণ ত্রাণ আসছে, কিন্তু ‘অব্যবস্থাপনা’র কারণে তা সবাই পাচ্ছেন না। মুখ ফুটে বলতে না পেরে নিদারুণ দিন কাটছে মধ্যবিত্তের। আবার প্রান্তিক এলাকায় সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
একজন সিএনজি চালক বলেন, “দেখা গেছে আমি গরিব, আমি একজনের সামনে দাঁড়াই খুঁজি নিতে পারব। কিন্তু আরেকজন, এমনও মানুষ আছে যে মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির। ও খুঁজি নিতে পাইরতেছে না শরমে, লইজ্জার কারণে। মেইন সমস্যাটা ওই জায়গায় বাজি (আটকে) রইছে।"
একই কথা বলছেন ভয়াল বন্যার মুখে পড়া ফেনীর বাসিন্দারা। সেখানকার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর নিতে গেলে অনেকের কথায় উঠে এলো ত্রাণ বণ্টনে অব্যবস্থাপনার চিত্র।
তাদের ভাষ্য, কিছু মানুষ সবসময়ই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকে, কেউ কিছু নিয়ে আসলে তাদেরকেই দেয়। আর কেউ আছে একবারও কিছু পায়নি, কারণ তারা রাস্তায় এসে দাঁড়াতে পারেন না, আবার কাউকে বলতেও পারেন না।
ফেনী মুন্সিরহাটের কমুয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, অনেকে ত্রাণ আইসছে, কিন্তু সমস্যা হইতেছে সবাই পাইতেছে না। কেউ ১০ বার নিতেছে, কেউ একবারও পাইতেছে না। আমার কিছু লাইগত নো, আল্লাহ আমারে যেমন রাখছে চলি যাইতেছে দিন। কিন্তু আমি চাই যারা ক্ষতিগ্রস্থ হইছে- সবাই সাহাইয্য পাক। যে লোকটা রাস্তায় দাঁড়াই ত্রাণ নিতেছে- সে ক্ষতিগ্রস্ত হইছে, আবার যে বাড়ি আছে- সেও ক্ষতিগ্রস্ত হইছে। লোক ধরি ধরি দিলে এই সমস্যাটা হয় না।
বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তাতে ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেকেই।
বেগমগঞ্জের একলাশপুর এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, “সারাজীবন মাইনষেরে দিছি, এখন যতো কষ্টেই থাকি নিতামনো, দি-ই (দিয়ে) যাইয়ুম। মঙ্গলবার একটা ফ্যামিলিরে চাল-ডাল কিনি দি আসছি গোপনে, লোকটা এতো খুশি হইছে। তারা চাইতেও পারে না, খাইতেও পারে না। কিন্তু এরা খুবই অভাবে আছে।
“কে কোন অবস্থায় আছে- এইডাতো ঢাকার কেউ জানে না। এরাতো আনতেছে দিতেছে, ভালো কাজ। এইডাও দেক, মানুষ পাইতেছে। কিন্তু আমাগো সমাজে যারা বিত্তশালী আছে- এরাতো ঘুমাই গেছে। যহন পানি টান দিবো (পানি নেমে গেলে) তহন তারা বাইর হইবো।"
এই ব্যবসায়ী বলেন, “অনেকের সিএনজি আছে। সিএনজি চালাই ধরেন ডেইলি এক হাজার পাইতো। এক হাজারই কিন্তু ডেইলি শেষ হই যাইতো। এইযে তাগো ১০ দিন সিএনজি বন্ধ, তারা চলবো কেমনে?
“কিন্তু সবাই জানে হেতার সিএনজি আছে। আদৌ তার কাছে কোন ক্যাশ ক্যাপিটাল আছে নি, এডাতো কেউ বুঝে না।"
প্রান্তিক এলাকায় ‘পৌঁছেনি’ ত্রাণ
বন্যায় পরশুরাম প্রথমে আক্রান্ত হয়ে ফেনী শহরের দিকে পানি আসতে থাকে। যখন পরশুরামের বাসিন্দাদের ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন, তখন ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। কয়েকদিনের মধ্যে পরশুরাম পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারলেও তা পায়নি প্রান্তিক এলাকার মানুষ।
সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন সহায়তা পাচ্ছেন প্রয়োজনের চেয়েও বেশি, আর দূরের মানুষ কিছুই পাচ্ছে না বলে জানালেন স্থানীয়রা।
পরশুরাম উপজেলার কাশীনগরের শাহজাহান বলেন, “সব ত্রাণ এদিক-ওদিক চলি যায়, আমরা কাশিনগর ও চম্পকনগরের মানুষ। আমি বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কোনোরকম খেয়ে আছি। তিনবারেরটা একবার খাই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তু ঘুরি আইলাম; কিছুই পাই নাই।"
বেগমগঞ্জের একলাশপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, “আমি ১০ দিনের বন্যায় গতকাল এক প্যাকেট মুড়ি পাইছি। আমার বাড়ির পাশে নাকি বাজার আছে, আমার বলে কষ্ট নাই। অথচ বন্যার শুরু হইতে রান্না করার কোনো ব্যবস্থা নাই। ঘরেই আছি, কোথাও যাইতামনো। বাঁচি-মরি ঘরেই থাইকমু।"
বন্যায় স্বেচ্ছাশ্রমের কাজ করা চৌমুহনী এলাকার শিক্ষার্থী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “পৌরসভার মধ্যে টুকটাক ত্রাণ যাইতেছে। হাজীপুর-দুর্গাপুরের মতো প্রান্তিক যে জায়গাগুলো আছে; ওই জায়গাগুলোতে ত্রাণও কম পৌঁছাইতেছে, মানুষের নজরটাও কম পড়তেছে।"
ফেনীতে কর্মরত এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “প্রশাসন চাইলেই ত্রাণের সুষ্ঠু বণ্টনের ব্যবস্থা করতে পারতেন। জেলা প্রশাসক উদ্যোগ নিলে ইউএনও'দের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে তালিকা ধরে ধরে ত্রাণ দেয়া কোনো বিষয়ই না। সবাই ত্রাণ নিয়ে আসতো, তালিকা ধরে ধরে দিলে আর এমনটি হতো না।"
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম