বিশ্বজুড়ে মহাযুদ্ধের পূর্বাভাস: বাস্তবতার আয়নায় এক শঙ্কিত প্রতিচ্ছবি

আপলোড সময় : ২০-০৬-২০২৫ ১১:১২:০৬ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২০-০৬-২০২৫ ১১:১২:০৬ পূর্বাহ্ন
আধুনিক বিশ্বের রাজনীতিক, সামরিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট এক অভূতপূর্ব রূপ নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে অস্থিরতা ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে, তা কেবল নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই—এটি এখন এক সর্বব্যাপী বৈশ্বিক সঙ্কটে রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে মনে হয়, পৃথিবী ধীরে ধীরে একটি মহাযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই একে কেবল কাকতালীয় বললেও, বাস্তবতা যেন ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে।

 

মুসলিম উম্মাহ: সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু থেকে বিশ্বমঞ্চে:
একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্ন থেকেই মুসলিম বিশ্ব ছিল বৈশ্বিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিনসহ অসংখ্য মুসলিম ভূখণ্ড পরিণত হয় যুদ্ধক্ষেত্রে। ইসলামি জাগরণ, খেলাফতপন্থি চিন্তাধারা ও মুসলিমদের সামষ্টিক আত্মপরিচয়ের প্রতি একটি বৈশ্বিক শত্রুতা যেন সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হয়েছে। তবে আজকের বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, এই সংঘাত শুধু মুসলিম জাতিকে ঘিরে সীমাবদ্ধ নেই। একে একে তাতে জড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী সব ধর্ম-বর্ণ-জাতির পরাশক্তিগুলো।

 

বর্তমানে ই-স-রা-ই-ল ও ই-রা-নে-র মুখোমুখি অবস্থান, ই-উ-ক্রে-ন-রাশিয়া যুদ্ধ, চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা, দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক উসকানি, মধ্যপ্রাচ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, কেউ আর নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না, কোথায় এই সংঘাত থেমে যাবে।

 

এ সংঘাত মহাযুদ্ধে রুপ নিলে পৃথিবীতে বর্তমান জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হারিয়ে যাবে। বিশাল একটি অংশ পঙ্গুত্ব বরণ করবে। আর এ ভোগান্তির স্বীকার হবে বেশীর ভাগই নিরীহ সাধারণ জনগণ আর মূল অপরাধীরা দম্ভভরে বেচে থাকবে, ষুদ্ধ পরবর্তীতে মোড়ল হওয়ার নেশা তাদরকে বিভোর রাখবে। প্রথম মহাযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল ৪০ মিলিয়ন এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে বেড়ে হয়েছিল ৬০ মিলিয়ন। আর এবারের যুদ্ধে......?

 

আগুন ছড়িয়ে পড়ছে সবার ঘরে:
আগুন কেবল মাজলুমদের ঘরেই নয়, ছড়িয়ে পড়ছে জালিমদের ঘরেও। যুদ্ধের আগুন আর কোনো নির্দিষ্ট সীমানায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। শহর, বন্দর, মসজিদ, গির্জা, উপাসনালয়—সবকিছুই আজ ধ্বংসের ঝুঁকিতে। প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা, নারীরা, সাধারণ মানুষ। বিশ্বের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, খাদ্যঘাটতি তৈরি হচ্ছে, জ্বালানির অভাবে স্থবির হয়ে পড়ছে শিল্প-প্রযুক্তি।
বিশ্বের বড় বড় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো একদিকে শান্তির কথা বললেও, অন্যদিকে তারা নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষায় পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়ছে। সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে, পারমাণবিক অস্ত্রের প্রস্তুতি নিচ্ছে, নতুন জোট গঠন করছে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, এই সংঘাত এক ভয়াবহ চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

কুরআনের দৃষ্টিতে প্রস্তুতির আহ্বান:
এই ক্রান্তিকালে একজন মুসলমানের অবস্থান কেমন হওয়া উচিত? কুরআন স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে—
“তাদের বিরুদ্ধে তোমরা প্রস্তুত করো যতদূর সম্ভব শক্তি ও রশীদ অশ্বসামগ্রী, যাতে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যায়।” (সূরা আনফাল: ৬০)
এ আয়াতে কেবল শারীরিক বা সামরিক শক্তির কথা নয়, বরং সব ধরনের কুওয়াত বা সক্ষমতা অর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—অর্থনৈতিক, মানসিক, কৌশলগত ও আধ্যাত্মিক দিক থেকেও। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সে পথ না বেছে নিয়ে বারবার আপোষের নীতিকে প্রাধান্য দিয়েছি। পশ্চিমা সংস্কৃতি ও রাজনীতির অনুকরণেই নিরাপত্তা ও উন্নয়নের আশ্রয় খুঁজেছি। এর পরিণাম আজ চোখের সামনে স্পষ্ট।

 

আজকের ডাক: প্রস্তুতির সময় এখনই:
সময়ের এই সন্ধিক্ষণে আর বিলম্বের অবকাশ নেই। আজ আমাদের প্রয়োজন সর্বাত্মক প্রস্তুতি—ই’দাদ। বসে থাকা, হা-হুতাশ করা কিংবা ক্ষুদ্র অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই।
প্রত্যেক মুসলমান, বিশেষত যারা নেতৃত্বে রয়েছেন, তাদের উচিত কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিসরে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জাগ্রত করা এবং শক্তি, সাহস ও চেতনায় প্রস্তুত করা।

 

উপসংহার:
আজকের বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে—শুধু কূটনৈতিক ভাষণ ও নীতিকথা দিয়ে এ সংঘাত মোকাবিলা সম্ভব নয়। প্রয়োজন বাস্তবসম্মত প্রস্তুতি, আন্তরিক আত্মসমালোচনা এবং কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক কার্যকর কর্মপরিকল্পনা।

 

বিশ্বের উত্তপ্ত বাতাসে হয়তো মালহামার সূচনা ঘটতে চলেছে। এই মহাসংঘাতে কে থাকবে বিজয়ী, আর কে হবে ধ্বংসস্তূপে? এর উত্তর নির্ভর করছে আজকের প্রস্তুতির উপর।
এখনও সময় আছে—কিন্তু খুব বেশি নয়।

 

লেখক:
ড. এটিএম মাসুম বিল্লাহ আল-আযহারী (বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক) 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক: মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগ

প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক: রেজাউল করিম

অফিস :

প্রধান কার্যালয়ঃ ২৪/২৫, দিলকুশা, সাধারণ বীমা ভবন, লিফট-৪ (৫ম তলা), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ ।

রেজিঃ নং ডিএ ৬৪৪২।  নিবন্ধিত দৈনিক পত্রিকার অনলাইন নিউজ পোর্টাল নং ৮৪।