সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সংবিধানে বলা আছে। তবে কোনো কারণে প্রথম তিন মাসে নির্বাচন করা সম্ভব না হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার চাইলে আরও তিন মাস সময় পাবেন। আদালতের নির্দেশনা নিয়েও এই সমস্যা সমাধানের সুযোগ আছে।
তিন মাসের মধ্যে নতুন সরকারের পক্ষে ভোট আয়োজন করা কঠিন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তার মতে, নতুন সরকারকে ভোটের পরিবেশ তৈরি করার জন্য সময় দিতে হবে এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
এ বিষয়ে ইত্তেফাককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। তবে কোনো কারণে প্রথম তিন মাসে নির্বাচন করা সম্ভব না হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও তিন মাস সময় পাবেন। এছাড়া আদালতের নির্দেশনা নিয়েও এই সমস্যা সমাধানের সুযোগ আছে। আমরা যখন দায়িত্বে ছিলাম, তখন আদালত থেকে নির্দেশনা নিয়ে দুই বছর পার করেছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “তিন মাসের মধ্যে নতুন সরকারের পক্ষে ভোট করা কঠিন। তাদেরকে ভোটের পরিবেশ তৈরি করার জন্য সময় দিতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।”
সংবিধানের ১২৩(৩) (খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারলে আরও ৯০ দিন সংবিধান অনুযায়ী সময় পাবে নির্বাচন কমিশন। তবে ১২৩(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে, কোনো দৈব-দুর্বিপাকের কারণে এই দফার নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান যদি সম্ভব না হয়, তাহলে উক্ত মেয়াদের শেষ দিনের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তবে এটি বর্তমান বাস্তবতায় কঠিন হবে। এক্ষেত্রে দৈব-দুর্বিপাকের কারণে সংবিধানে যে আরো তিন মাসের কথা বলা হয়েছে, সেটি প্রাকৃতিক সংকট তৈরি হলে প্রযোজ্য হবে। বর্তমান যে রাজনৈতিক সংকট, সেটি প্রাকৃতিক নয়। ফলে ওই বিধানটি প্রযোজ্য হবে না।”
মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে না পারলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা নিতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশনা দেবে, সেই অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে নির্বাচন কমিশন।”
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ায় আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সময় বাড়াতে পারবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা না থাকায় মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী এখন ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা চলে এসেছে। এই সময়ের মধ্যেই গঠন করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও।