ইসলামি রাজনীতি কি ইবাদত?

আপলোড সময় : ১২-০৫-২০২৫ ০৪:২০:০১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১২-০৫-২০২৫ ০৪:২০:০১ অপরাহ্ন
আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে সৃষ্টির মৌলিক লক্ষ্যের আলোচনা করেছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানব ও জিন জাতি আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)। ইবাদতের অর্থ উপাসনা করা। উপাসনা করার শরিয়তসিদ্ধ সকল পদ্ধতির পাশাপাশি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। গোলাম তার মনিবের প্রতিটি নির্দেশ পালন করে। কিন্তু সে তার মনিবের উপাসনা করে না। এই জন্য তার আনুগত্যকে ইবাদত বলা হয় না। কিন্তু বান্দা তার মহান রবের আনুগত্য করে, উপাসনাও করে। আর একেই ইবাদত নামে অভিহিত করা হয়।

আবার ইবাদতও দুই ধরনের। একধরনের ইবাদত যেগুলোতে আল্লাহর উপাসনাই একমাত্র উদ্দেশ্য। যেমন, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ও কোরবানি। এগুলো প্রত্যক্ষভাবেই আল্লাহর ইবাদত। আরেক প্রকারের ইবাদত সেসকল কাজ, যেগুলো বান্দার পার্থিব উপকারিতা ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হয়। কিন্তু সেই কাজগুলোই যখন আল্লাহর আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পাদন করা হয়, আর সেগুলোর মাধ্যমেই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়, তখন সেগুলো ইবাদতে পরিণত হয়। এ ধরনের কাজগুলো পরোক্ষভাবে ইবাদত হতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রত্যক্ষভাবে ইবাদত নয়। তবে আল্লাহর নির্দেশনার আনুগত্য ও বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে এগুলো ইবাদতে রূপ নিতে পারে।

একইভাবে রাজনীতি ও রাষ্ট্রপরিচালনাও ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। আর সেটি হবে তখন, যখন এসব কিছু আল্লাহর বিধি অনুযায়ী পরিচালনা করা হবে। তাই এগুলো প্রত্যক্ষভাবে যদিও ইবাদতের প্রকারভুক্ত নয়, কিন্তু পরোক্ষভাবে এগুলো ইবাদতের তালিকাভুক্ত হবে।

আর যেহেতু মহান আল্লাহর ভাষ্যমতে, মানবসৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই আল্লাহর ইবাদত, তাই এই উভয়প্রকারের ইবাদতই মানবসৃষ্টির উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। উভয় ধরনের ইবাদাতের সম্মিলিত রূপই মানবসৃষ্টির লক্ষ্য। আবার ইবাদাতসমূহের মধ্যে কিছু আছে প্রত্যক্ষ ধরনের, আবার কিছু আছে পরোক্ষ। তাই বিশেষ কোনো ধরনের ইবাদাতকে মানবসৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। আবার পরোক্ষ ধরনের ইবাদাতগুলোর সবগুলো গুরুত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে সমমানের না। তন্মধ্যে যেগুলোর প্রভাব যত বেশি সর্বজনীন ও ব্যাপক হবে, সেগুলোর গুরুত্ব তত বেশি হবে। রাজনীতির অবস্থানও এভাবেই নির্ণয় করা যায়। যদি একবার সত্যিকারার্থে শরিয়াহ মোতাবেক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তাহলে এর ফলে সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইবাদতের পালন শুধু সহজসাধ্যই হবে না, এর ব্যাপ্তিও বহু পরিমাণে বেড়ে যাবে।

তাই এভাবে বলা যায় যে, ‘অন্যান্য পরোক্ষ ইবাদতসমূহের চেয়ে এর গুরুত্ব অধিক, এই বিবেচনায় এর ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করা উচিত।’ কিন্তু শুধু এটাকেই দ্বীনের মূল লক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে দ্বীনের অগ্রাধিকার বিন্যাসকে গুলিয়ে ফেলার নামান্তর। কেননা, এমন দৃষ্টিভঙ্গি কারও মনে বদ্ধমূল হয়ে গেলে তা থেকে আরো বহু ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হবে। (সূত্র: যুগজিজ্ঞাসার ইসলামি সমাধান, আল্লামা মুফতি তাকি উসমানি, অনুবাদ : মহিউদ্দিন কাসেমী, মাকতাবাতুল খিদমাহ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ১৩৫)

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক: মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগ

প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক: রেজাউল করিম

অফিস :

প্রধান কার্যালয়ঃ ২৪/২৫, দিলকোশা, সাধারণ বিমা ভবন, লিফট-৪ (৫ম তলা), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ ।

রেজিঃ নং ডিএ ৬৪৪২।  নিবন্ধিত দৈনিক পত্রিকার অনলাইন নিউজ পোর্টাল নং ৮৪।