বিএসএফের ফেলে যাওয়া ৭৮ জনকে সুন্দরবন থেকে উদ্ধার

আপলোড সময় : ১২-০৫-২০২৫ ০২:৪৭:১১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১২-০৫-২০২৫ ০২:৪৭:১১ অপরাহ্ন
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ফেলে যাওয়া ৭৮ জনকে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বন বিভাগ তাদেরকে উদ্ধারের পর শনিবার (১০ মে) রাত ১১টার দিকে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করে। সেখান থেকে রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

তাদের সবাইকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার দোতলার একটি কক্ষে রাখা হয়েছে।

বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্প থেকে তাঁকে জানানো হয়েছিল, উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা কয়েক দিন না খেয়ে থাকার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের হাত ভেঙে গেছে, আরও কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় খাবার, স্যালাইন ও পানি নিয়ে তিনি সেখানে পৌঁছান।’

শ্যামনগর থানা পুলিশ জানিয়েছে, বিএসএফ যে ৭৮ জনকে ফেলে রেখে গেছে, তাদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি এবং ৩ জন ভারতীয় নাগরিক। গত শুক্রবার তাদের শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ফেলে রেখে যায় বিএসএফ।  তাদের অনেকে অসুস্থ, কারও কারও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আছে। একজনের হাত ভাঙা। বেশির ভাগই কয়েক দিন না খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।  কয়েকজন জানিয়েছেন, ১৫ দিন পর এই প্রথম থানায় এসে ভাত খেতে পেরেছেন তারা।

থানার দোতলায় একসঙ্গে থাকা ৭৮ জনের মধ্যে নড়াইল জেলার ৬৩ জন, বাকি ৮ জনের বাড়ি সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল ও ঢাকা জেলায়। তিনজন ভারতীয় নাগরিকের বাড়ি ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে।

ভারতে থেকে আসা হারুন শেখ (৬০) গণমাধ্যমকে জানান, তার বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাধবপাশা গ্রামে। ৩৭ বছর ধরে ভারতে ভাঙারির ব্যবসা করতেন তিনি। থাকতেন আহমেদাবাদের সুরাট বস্তিতে। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ আসা-যাওয়া করতেন। গত ২৬ এপ্রিল দেশটির ক্রাইম পুলিশ বস্তিতে বসবাসকারী ৫০০-৬০০ জনকে আটক করে। এ সময় তাদের সামনে বছরের পর বছর ধরে থেকে আসা বস্তিটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

তিনি জানান, পরে তাদের একটি পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর নারী, পুরুষ ও শিশুদের আলাদাভাবে করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে। তাদের ৭৮ জনকে একটি দলে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে চোখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়। এ সময় তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। দুপুরে খেতে দেওয়া হতো একটি রুটি ও পানি। অন্য সময় দুটি করে বিস্কুট। ৬ মে তাদের চোখ বেঁধে আহমেদাবাদ থেকে উড়োজাহাজে করে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার ভারতের সন্দেহখালীতে। সেখানে দিনে রাখার পর আবার চোখ বেঁধে একটি বড় লঞ্চ তুলে ৯ মে ভোর চারটার দিকে সুন্দরবনের গহিনে তাদের নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে সকাল ৯টার দিকে বন বিভাগের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা স্টেশনের মান্দারবাড়িয়া ক্যাম্পে আশ্রয় নেন তাঁরা।

এদিকে কোস্টগার্ডের সদস্যরা ৭৮ জনের মধ্যে ৩ জনকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা হলেন আবদুর রহমান (২০), হাসান শাহ (২৪) ও সাইফুল শেখ (১৯)। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে তাদের পৈতৃক বাড়ি হলেও তাঁদের জন্ম হয়েছে গুজরাটের ওই বস্তিতে। তাদের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাকি ৭৫ জনকে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। স্বজনেরা এলে তাদের হস্তান্তর করা হবে।’

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক: মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগ

প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক: রেজাউল করিম

অফিস :

প্রধান কার্যালয়ঃ ২৪/২৫, দিলকোশা, সাধারণ বিমা ভবন, লিফট-৪ (৫ম তলা), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ ।

রেজিঃ নং ডিএ ৬৪৪২।  নিবন্ধিত দৈনিক পত্রিকার অনলাইন নিউজ পোর্টাল নং ৮৪।