কুড়িগ্রাম, ৩০ জুলাই (মনিকা সোহাগ): কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত কুড়িগ্রামের নুর আলমের স্ত্রী খাদিজা বেগম (১৯) স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিয়ের এক বছরের মাথায় স্বামীকে হারিয়ে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা খাদিজা স্বামীর হত্যার বিচার দাবি করেছেন।
গত রবিবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লাপাড়ায় নিহত নুর আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, খাদিজা স্বামীর ছবি দেখে ডুকরে কেঁদে উঠছেন, আবার কখনো নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকছেন তার কবরের পাশে।
২০ জুলাই সকালে গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লাপাড়ার ২০ বছরের তরুণ নুর আলম। সেই সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ চলাকালে একটি গুলি তার চোখ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন নুর আলম। স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে ২১ জুলাই মোল্লাপাড়ায় তার বাড়ির পাশে তাকে দাফন করা হয়।
নুর আলমের এমন মৃত্যুতে শোকাহত তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা। মোল্লাপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, "নুর আলম খুবই ভালো ছেলে ছিল। কোনো দল বা রাজনীতি করত না। তারা গরিব মানুষ। ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে সে আজ গুলিতে মারা গেল। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।"
নিহত নুর আলমের স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, "আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নির্মমভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। যারা আমার স্বামীকে মেরেছে, তাদের বিচার চাই। সরকারের কাছে আমার ও পেটের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার দাবি করছি।"
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাঈদুর রহমান বলেন, "আমার ইউনিয়নের ভ্যানচালক আমির হোসেন ও নুর বানু দম্পতি জীবিকার তাগিদে দুই ছেলে ও এক ছেলের বউকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। হঠাৎ গুলিতে কর্মক্ষম বড় ছেলেকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি। এ অবস্থায় পরিবারটিকে সহায়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।" নুর আলমের হত্যার বিচার ও খাদিজার দাবি দেশের মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে এবং এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।