
বর্তমান বিশ্বে কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। আর বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ।
বর্তমান বিশ্বে কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। আর বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে কিডনি বিকল বা ফেইলর হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ না করল মস্তিষ্ক, ফুসফুস, হার্ট, যকৃৎও কাজ করতে পারে না। কেননা কিডনিই একমাত্র শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ রক্ষা করে। কিডনি বিকল রোগীদের বিভিন্ন রকম জটিলতা দেখা দেয় এবং অসময়ে মৃত্যু ঘটে। এ রোগের চিকিৎসা—কিডনি প্রতিস্থাপন, হেমোডায়ালাইসিস, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (সিএপিডি); অন্যথায় অসময়ে মৃত্যু।
বর্তমানে দেশে কিডনি বিকল রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। প্রতিবছর আরো ৪০ হাজার এতে যোগ হয়। আবার ডায়ালাইসিসযোগ্য রোগীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারে না। কারণ এটি ব্যয়বহুল, পরিবার ও সমাজের সহযোগিতার অভাব এবং দক্ষ জনবল ও ডায়ালাইসিস সেন্টারের স্বল্পতা রয়েছে। কিডনি রোগের বড় ঝুঁকির কারণ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট ও রক্তনালির রোগ, স্থূলতা, পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস এবং অন্যান্য।
কিডনি রোগ ২০৪০ সালের মধ্যে পৃথিবীর পঞ্চম প্রাণঘাতী রোগে পরিণত হবে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্তকরণসহ কিডনি রোগ প্রতিরোধ তথা আপনার কিডনির সুরক্ষা নিশ্চিত করাই এ সময়ের দাবি। এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হয়। সে হিসেবে আজ বিশ্ব কিডনি দিবস। এ বছর কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য—‘আপনার কিডনি কি সুস্থ? প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করুন, কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষা করুন।’
কেন কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত প্রয়োজন?
কিডনি রোগের অবনতি প্রতিরোধ: রোগটি সাধারণত ধীরে ধীরে খারাপ হয় এবং কিডনি বিকল হওয়ার আগে বোঝা যায় না। প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে কিডনি বিকল হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
সঠিক ও কার্যকর চিকিৎসা: প্রাথমিক অবস্থায় কার্যকর চিকিৎসা কিডনি বিকল হতে বাঁচায় এবং ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা কমাতে পারে।
জটিলতা কমায়: কিডনি রোগে রক্তশূন্যতা, উচ্চরক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, লবণ ও এসিডের মতো জটিলতা তৈরি হয়। এ জটিলতা পরিহার করা সম্ভব।
জীবনের গুনগত মানোন্নয়ন: প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে জীবনযাত্রার মান ভালো রাখা যায়।
ব্যয় কমানো: ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসার প্রয়োজন কমায়। মনে রাখবেন নিয়মিত চেকআপ ও কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতন হলে আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হবে।
রোগ শনাক্তে কী কী পরীক্ষা প্রয়োজন?
প্রস্রাবে প্রোটিন, রক্ত অথবা ইনফেকশন কেবল প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমেই শনাক্ত করা যায়। রক্তে BUN, Creatinine, Urea, electrlytes টেস্ট করেও কিডনি রোগ শনাক্ত হয়। GFR (Glomerula filtration rate)-এর মাধ্যমে বোঝা যায় কিডনির কার্যক্ষমতা। যদিও আমাদের দেশের মানুষের শারীরিক অবকাঠামো বিবেচনা করে এ টেস্টের কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। এছাড়া কিছু কিডনি রোগ শনাক্তের জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি, এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
কিডনির প্রধান সমস্য কী কী?
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ (Chronic Kidney disease-CKD)
হঠাৎ কিডনি বিকল (Acute Kidney Injury)
কিডনি ছাঁকনির প্রদাহ (Glomerulonephritis)
কিডনি সিস্ট (ADPKD/Cystic disease of Kidney)
কিডনি প্রদাহ (kidney Infection-UTI)
কিডনি পাথর (Renal stone)
কিডনি নালি বন্ধ হওয়া (Obstructive Nephropathy-Hydronephrosis)
অন্যান্য অসুখে কিডনির অসুখ: ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, SLE, RA
কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়
রোগ প্রতিরোধে কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা উচিত?
কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল ও পানি পান করা উচিত। লবণ খাওয়া সীমিত করুন, তাজা শাকসবজি গ্রহণ করুন, প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করুন। মাছ, মুরগি ও উদ্ভিদজাত প্রোটিনের মতো লীন প্রোটিন (ডাল, মটর, বাদাম) খান। লাল মাংস ও বেশি প্রোটিন কিডনি ক্ষতি করতে পারে, তাই এগুলো সীমিত করুন। অলিভ, অ্যাভোকাডো, বাদাম তেলসহ স্বাস্থ্যকর চর্বি ব্যবহার করুন। ট্রান্স ফ্যাট ও অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট পরিহার করুন। লাল চাল, সম্পূর্ণ গমের রুটি বেছে নিন; যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ফাইবার থাকে। প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পেতে তাজা সবুজ সবজি ও রঙিন ফল বেশি খান। কিডনির অসুখ থাকলে পটাশিয়াম ও ফসফরাস সম্পর্কে সচেতন থাকুন। রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক রাখার জন্য মিষ্টি ও চিনি খাওয়া কমান। দুধ, দইজাতীয় খাবার খেতে পারেন, তবে রক্তে ফসফরাসের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবাকারী অথবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
লেখক: মেডিসিন ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ
বর্তমান বিশ্বে কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। আর বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে কিডনি বিকল বা ফেইলর হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ না করল মস্তিষ্ক, ফুসফুস, হার্ট, যকৃৎও কাজ করতে পারে না। কেননা কিডনিই একমাত্র শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ রক্ষা করে। কিডনি বিকল রোগীদের বিভিন্ন রকম জটিলতা দেখা দেয় এবং অসময়ে মৃত্যু ঘটে। এ রোগের চিকিৎসা—কিডনি প্রতিস্থাপন, হেমোডায়ালাইসিস, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (সিএপিডি); অন্যথায় অসময়ে মৃত্যু।
বর্তমানে দেশে কিডনি বিকল রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। প্রতিবছর আরো ৪০ হাজার এতে যোগ হয়। আবার ডায়ালাইসিসযোগ্য রোগীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারে না। কারণ এটি ব্যয়বহুল, পরিবার ও সমাজের সহযোগিতার অভাব এবং দক্ষ জনবল ও ডায়ালাইসিস সেন্টারের স্বল্পতা রয়েছে। কিডনি রোগের বড় ঝুঁকির কারণ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট ও রক্তনালির রোগ, স্থূলতা, পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস এবং অন্যান্য।
কিডনি রোগ ২০৪০ সালের মধ্যে পৃথিবীর পঞ্চম প্রাণঘাতী রোগে পরিণত হবে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্তকরণসহ কিডনি রোগ প্রতিরোধ তথা আপনার কিডনির সুরক্ষা নিশ্চিত করাই এ সময়ের দাবি। এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হয়। সে হিসেবে আজ বিশ্ব কিডনি দিবস। এ বছর কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য—‘আপনার কিডনি কি সুস্থ? প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করুন, কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষা করুন।’
কেন কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত প্রয়োজন?
কিডনি রোগের অবনতি প্রতিরোধ: রোগটি সাধারণত ধীরে ধীরে খারাপ হয় এবং কিডনি বিকল হওয়ার আগে বোঝা যায় না। প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে কিডনি বিকল হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
সঠিক ও কার্যকর চিকিৎসা: প্রাথমিক অবস্থায় কার্যকর চিকিৎসা কিডনি বিকল হতে বাঁচায় এবং ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা কমাতে পারে।
জটিলতা কমায়: কিডনি রোগে রক্তশূন্যতা, উচ্চরক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, লবণ ও এসিডের মতো জটিলতা তৈরি হয়। এ জটিলতা পরিহার করা সম্ভব।
জীবনের গুনগত মানোন্নয়ন: প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে জীবনযাত্রার মান ভালো রাখা যায়।
ব্যয় কমানো: ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসার প্রয়োজন কমায়। মনে রাখবেন নিয়মিত চেকআপ ও কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতন হলে আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হবে।
রোগ শনাক্তে কী কী পরীক্ষা প্রয়োজন?
প্রস্রাবে প্রোটিন, রক্ত অথবা ইনফেকশন কেবল প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমেই শনাক্ত করা যায়। রক্তে BUN, Creatinine, Urea, electrlytes টেস্ট করেও কিডনি রোগ শনাক্ত হয়। GFR (Glomerula filtration rate)-এর মাধ্যমে বোঝা যায় কিডনির কার্যক্ষমতা। যদিও আমাদের দেশের মানুষের শারীরিক অবকাঠামো বিবেচনা করে এ টেস্টের কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। এছাড়া কিছু কিডনি রোগ শনাক্তের জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি, এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
কিডনির প্রধান সমস্য কী কী?
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ (Chronic Kidney disease-CKD)
হঠাৎ কিডনি বিকল (Acute Kidney Injury)
কিডনি ছাঁকনির প্রদাহ (Glomerulonephritis)
কিডনি সিস্ট (ADPKD/Cystic disease of Kidney)
কিডনি প্রদাহ (kidney Infection-UTI)
কিডনি পাথর (Renal stone)
কিডনি নালি বন্ধ হওয়া (Obstructive Nephropathy-Hydronephrosis)
অন্যান্য অসুখে কিডনির অসুখ: ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, SLE, RA
কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়
রোগ প্রতিরোধে কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা উচিত?
কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল ও পানি পান করা উচিত। লবণ খাওয়া সীমিত করুন, তাজা শাকসবজি গ্রহণ করুন, প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করুন। মাছ, মুরগি ও উদ্ভিদজাত প্রোটিনের মতো লীন প্রোটিন (ডাল, মটর, বাদাম) খান। লাল মাংস ও বেশি প্রোটিন কিডনি ক্ষতি করতে পারে, তাই এগুলো সীমিত করুন। অলিভ, অ্যাভোকাডো, বাদাম তেলসহ স্বাস্থ্যকর চর্বি ব্যবহার করুন। ট্রান্স ফ্যাট ও অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট পরিহার করুন। লাল চাল, সম্পূর্ণ গমের রুটি বেছে নিন; যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ফাইবার থাকে। প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পেতে তাজা সবুজ সবজি ও রঙিন ফল বেশি খান। কিডনির অসুখ থাকলে পটাশিয়াম ও ফসফরাস সম্পর্কে সচেতন থাকুন। রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক রাখার জন্য মিষ্টি ও চিনি খাওয়া কমান। দুধ, দইজাতীয় খাবার খেতে পারেন, তবে রক্তে ফসফরাসের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবাকারী অথবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
লেখক: মেডিসিন ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ