ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাজারো ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন পরিত্যক্ত একটি কারাগারে। এই কারাগারটি এখন তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসে অবস্থিত এই পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় সংশোধন ও পুনর্বাসনকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ইয়াসমিন আল দারদাসি ও তার পরিবার। ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি হারানোর পর প্রথমে গাছের নিচে রাত কাটিয়ে পরে কারাগারের প্রার্থনাকক্ষে আশ্রয় নেন তারা। ইয়াসমিন বলেন, "এখানে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, এর চেয়ে বেশি কিছু না।"
ইয়াসমিনের স্বামী কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। তাদের সঙ্গে নেই কোনো তোশক বা কম্বল। ইয়াসমিন ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি পরিবার ভয়ে আছেন যে, এখান থেকেও তাদের উচ্ছেদ করা হতে পারে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজার ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই বর্তমানে বাস্তুচ্যুত।
সারিয়া আবু মোস্তাফা ও তার পরিবারকে ইসরায়েলি সেনারা ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেছিল। হাতে সময় না থাকায় প্রার্থনার কাপড় পরেই বের হয়ে আসেন তারা। খোলা আকাশের নিচে ধুলাবালুর মধ্যে রাত কাটানোর পর তারা আশ্রয় নিয়েছেন পরিত্যক্ত এই কারাগারে। সারিয়া বলেন, "আমরা আমাদের সঙ্গে কিছু নিয়ে আসতে পারিনি। শিশুরাও আমাদের সঙ্গে হেঁটে এসেছে। এখানে খাবার পানি খুঁজে পাওয়া খুব দুঃসাধ্য।"
ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হয়েছেন সারিয়ার ভাতিজির বাবা ও ভাই। যুদ্ধের মধ্যেই তার জন্ম হয়েছে।
ইসরায়েলের তথ্যমতে, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ১,২০০ জন নিহত হয়েছেন এবং ২৫০ ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৩৯,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হলে ফিলিস্তিনিরা আরও অনেকবার বাস্তুচ্যুত হতে পারেন।
হানা আল-সাইয়েদ আবু মুস্তাফা, যিনি ছয়বার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এই পরিত্যক্ত কারাগারে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, "আমরা কোথায় যাব? সব জায়গাই বিপজ্জনক।"
সূত্র: রয়টার্স