একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরের ইতিহাসে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বর্তমানে সবচেয়ে শীতল। এর আগে আমাদের কোনও সরকারের সঙ্গে অতীতে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এতটা নাজুক হয়নি।
গত কয়েক মাস ধরে ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের দেশের মিডিয়ায় বা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যে প্রচারণা চালাচ্ছে সেটাকে এক ধরনের মিডিয়া যুদ্ধ বলছেন অনেকে। কারণ এই অপপ্রচার বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। যা দু দেশের জন্যই বিপদ জনক।
ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের কথা তো আমাদের সবার মনে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া তো বিশ্বব্যাপী প্রচার করেছিল যে ইরাকের ব্যাপক মাত্রায় বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে যার মধ্যে আছে রাসায়নিক এবং জীবাণু অস্ত্র। বিশ্ব জনমতের সমর্থনের জন্য এই ন্যারেটিভ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগী দেশগুলো খুব ভালোভাবে ব্যবহার করে এবং বিশ্ববাসী তা বিশ্বাস করা শুরু করে। পরবর্তীতে ইরাক ধ্বংসের পরে এর কোনও সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এর মূল্য তো ইরাককে দিতে হয়েছে।
মনে রাখতে হবে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে এ অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। দু’দেশের জনগণই উপকৃত হবে। কিন্তু এ সম্পর্ক ন্যায্যতা ও সাম্যের ভিত্তিতে হতে হবে, সেটিই বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন বা দেশের কথিত ইসলামাইজেশন নিয়ে ভারতীয় একশ্রেণির মিডিয়ার বাড়াবাড়িতো ইতিমধ্যে অনেকদূর গড়িয়েছে। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর এ প্রচারণার ফলাফল কী হতে পারে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচনের আগমুহূর্তে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে ট্রাম্পের টুইটের কারণে এ শঙ্কা জাগিয়েছে।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ভারতের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে কড়া ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন। বিজেপি সমর্থিত ভারতীয় গণমাধ্যমে রাজনৈতিক সহিংসতাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হিসেবে প্রচারের ক্রমাগত মিথ্যাচারের পাশাপাশি দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-সমর্থকদের উসকানি, ভারতে বাংলাদেশের উপ-মিশনে হামলা ও জাতীয় পতাকার অবমাননা, সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।
নানা কারণে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও দৃশ্যমান ভারতবিরোধিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতে, শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পাশাপাশি ভারত সরকারের সমালোচনাও করা যেত না। একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। এখন সরকারি তরফে কোনও বাধা না থাকায় বাংলাদেশের জনগণও প্রকাশ্য ভারত সরকারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করছেন।
প্রকাশ্য ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গুম-খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ শোনা যায়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির মধ্যম সারির জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণসহ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হয়েছিলেন। সরকারের একজন অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান সরকারবিরোধী লেখার কারণে যে-সব লেখা ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছিল সে কারণে গুম হয়েছেন বলে মনে করেন।
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে ব্রি. (অব.) আযমীও অভিযোগ করেছেন, তিনি ভারতবিরোধিতার কারণে গুমের শিকার হন। বুয়েটের ছাত্র আবরার ভারত ও বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের নীরবতা এবং ভারতবিরোধিতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখার কারণে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বেসরকারি ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তাজবির হোসেন শিহানও ভারতীয় আধিপত্যবাদ নিয়ে লেখালেখি করায় খুন হয়েছেন বলে তার সহপাঠীরা অভিযোগ করেছেন। এমন উদাহরণ আরও অনেক রয়েছে।
আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা তো কেউ অস্বীকার করে না। দক্ষিণ এশিয়ায় তো এটি একটি অপরিহার্য বাস্তবতা। ভারতেও মুসলমানরা তো ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। বিগত সরকারের সময় যে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়নি তা নয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান বিচারপতিকে তো ভয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। এরকম অনেক ঘটনাই রয়েছে। কিন্তু সে সময় ভারতীয় মিডিয়াতো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এরকম ভয়াবহ প্রচারণা চালায়নি? এখন কেন এতো অপপ্রচারে নেমেছে?
ভারতীয় মিডিয়া ইদানীং যা প্রচার করেছে তা অনেকাংশেই বিগত সরকারের সময়ে সৃষ্ট। আওয়ামী লীগের সরকার ভারত এবং পশ্চিমের অনেক দেশকেই বোঝাতে চেয়েছে যে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকাতে আওয়ামী লীগ অপরিহার্য। সেটা গণতন্ত্রের বিনিময়ে হলেও হোক। সেই প্রচারণা যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়নি সেটা আওয়ামী লীগের দীর্ঘশাসন প্রমাণ করে।
বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদি যে ক’বার এসেছেন প্রতিবারই ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিবাদ করেছে। এসব রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিতে, ভারতে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙেছে মোদির দল বিজেপি ও আরএসএস। তারা মুসলমানদের হত্যা করেছে। গুজরাট দাঙ্গায় মোদির নিষ্ক্রিয়তার কারণে শত শত নিরীহ মুসলিম খুন হয়েছে। এ কারণে মোদির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞাও পর্যন্ত আরোপ করেছিল। মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেক রাজ্যে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন বেড়েছে। মোদির সফরের বিরোধিতা করায় ইসলামি দলগুলোর নেতাকর্মীরাও গুম-খুন-হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে সেসব ঘটনায় একাধিক হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
আর একটি বিষয় বলতে চাই, ভারত প্রতিবছর বিভিন্ন সেক্টর থেকে ১০০ জন তরুণকে সে দেশে নিয়ে যায় ভারত সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য। ভারতসহ বিশ্বের কয়টি দেশের সাথে বাংলাদেশের এধরনের প্রোগ্রাম আছে? নেই। বিশ্বের কয়টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফ্যাকাল্টি ও স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম আছে? নেইতো। আজ যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অনেক ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি থাকতো, তারাই তো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে কথা বলতেন। বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার বিবেচনা করবেন আশা করি।
এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কী করতে পারে? ভারতের সাথে অবশ্যই আমাদের সুসম্পর্ক থাকতে হবে এবং তা হতে হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। ভারতকে এটা বোঝাতে হবে যে, তাদের দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হতে হবে বাংলাদেশের জনগণের সাথে, কোনও নির্দিষ্ট একটি দলের সাথে নয়। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সকল পথই বাংলাদেশকে খুঁজতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে এ অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। দু’দেশের জনগণই উপকৃত হবে। কিন্তু এ সম্পর্ক ন্যায্যতা ও সাম্যের ভিত্তিতে হতে হবে, সেটিই বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক।
গত কয়েক মাস ধরে ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের দেশের মিডিয়ায় বা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যে প্রচারণা চালাচ্ছে সেটাকে এক ধরনের মিডিয়া যুদ্ধ বলছেন অনেকে। কারণ এই অপপ্রচার বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। যা দু দেশের জন্যই বিপদ জনক।
ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের কথা তো আমাদের সবার মনে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া তো বিশ্বব্যাপী প্রচার করেছিল যে ইরাকের ব্যাপক মাত্রায় বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে যার মধ্যে আছে রাসায়নিক এবং জীবাণু অস্ত্র। বিশ্ব জনমতের সমর্থনের জন্য এই ন্যারেটিভ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগী দেশগুলো খুব ভালোভাবে ব্যবহার করে এবং বিশ্ববাসী তা বিশ্বাস করা শুরু করে। পরবর্তীতে ইরাক ধ্বংসের পরে এর কোনও সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এর মূল্য তো ইরাককে দিতে হয়েছে।
মনে রাখতে হবে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে এ অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। দু’দেশের জনগণই উপকৃত হবে। কিন্তু এ সম্পর্ক ন্যায্যতা ও সাম্যের ভিত্তিতে হতে হবে, সেটিই বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন বা দেশের কথিত ইসলামাইজেশন নিয়ে ভারতীয় একশ্রেণির মিডিয়ার বাড়াবাড়িতো ইতিমধ্যে অনেকদূর গড়িয়েছে। ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর এ প্রচারণার ফলাফল কী হতে পারে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচনের আগমুহূর্তে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে ট্রাম্পের টুইটের কারণে এ শঙ্কা জাগিয়েছে।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ভারতের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে কড়া ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন। বিজেপি সমর্থিত ভারতীয় গণমাধ্যমে রাজনৈতিক সহিংসতাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হিসেবে প্রচারের ক্রমাগত মিথ্যাচারের পাশাপাশি দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-সমর্থকদের উসকানি, ভারতে বাংলাদেশের উপ-মিশনে হামলা ও জাতীয় পতাকার অবমাননা, সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।
নানা কারণে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও দৃশ্যমান ভারতবিরোধিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীতে, শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পাশাপাশি ভারত সরকারের সমালোচনাও করা যেত না। একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। এখন সরকারি তরফে কোনও বাধা না থাকায় বাংলাদেশের জনগণও প্রকাশ্য ভারত সরকারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করছেন।
প্রকাশ্য ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গুম-খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ শোনা যায়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির মধ্যম সারির জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণসহ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হয়েছিলেন। সরকারের একজন অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান সরকারবিরোধী লেখার কারণে যে-সব লেখা ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছিল সে কারণে গুম হয়েছেন বলে মনে করেন।
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে ব্রি. (অব.) আযমীও অভিযোগ করেছেন, তিনি ভারতবিরোধিতার কারণে গুমের শিকার হন। বুয়েটের ছাত্র আবরার ভারত ও বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের নীরবতা এবং ভারতবিরোধিতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখার কারণে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বেসরকারি ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তাজবির হোসেন শিহানও ভারতীয় আধিপত্যবাদ নিয়ে লেখালেখি করায় খুন হয়েছেন বলে তার সহপাঠীরা অভিযোগ করেছেন। এমন উদাহরণ আরও অনেক রয়েছে।
আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা তো কেউ অস্বীকার করে না। দক্ষিণ এশিয়ায় তো এটি একটি অপরিহার্য বাস্তবতা। ভারতেও মুসলমানরা তো ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। বিগত সরকারের সময় যে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়নি তা নয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান বিচারপতিকে তো ভয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। এরকম অনেক ঘটনাই রয়েছে। কিন্তু সে সময় ভারতীয় মিডিয়াতো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এরকম ভয়াবহ প্রচারণা চালায়নি? এখন কেন এতো অপপ্রচারে নেমেছে?
ভারতীয় মিডিয়া ইদানীং যা প্রচার করেছে তা অনেকাংশেই বিগত সরকারের সময়ে সৃষ্ট। আওয়ামী লীগের সরকার ভারত এবং পশ্চিমের অনেক দেশকেই বোঝাতে চেয়েছে যে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকাতে আওয়ামী লীগ অপরিহার্য। সেটা গণতন্ত্রের বিনিময়ে হলেও হোক। সেই প্রচারণা যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়নি সেটা আওয়ামী লীগের দীর্ঘশাসন প্রমাণ করে।
বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদি যে ক’বার এসেছেন প্রতিবারই ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিবাদ করেছে। এসব রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিতে, ভারতে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙেছে মোদির দল বিজেপি ও আরএসএস। তারা মুসলমানদের হত্যা করেছে। গুজরাট দাঙ্গায় মোদির নিষ্ক্রিয়তার কারণে শত শত নিরীহ মুসলিম খুন হয়েছে। এ কারণে মোদির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞাও পর্যন্ত আরোপ করেছিল। মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেক রাজ্যে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন বেড়েছে। মোদির সফরের বিরোধিতা করায় ইসলামি দলগুলোর নেতাকর্মীরাও গুম-খুন-হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে সেসব ঘটনায় একাধিক হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
আর একটি বিষয় বলতে চাই, ভারত প্রতিবছর বিভিন্ন সেক্টর থেকে ১০০ জন তরুণকে সে দেশে নিয়ে যায় ভারত সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য। ভারতসহ বিশ্বের কয়টি দেশের সাথে বাংলাদেশের এধরনের প্রোগ্রাম আছে? নেই। বিশ্বের কয়টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফ্যাকাল্টি ও স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম আছে? নেইতো। আজ যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অনেক ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি থাকতো, তারাই তো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে কথা বলতেন। বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার বিবেচনা করবেন আশা করি।
এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কী করতে পারে? ভারতের সাথে অবশ্যই আমাদের সুসম্পর্ক থাকতে হবে এবং তা হতে হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। ভারতকে এটা বোঝাতে হবে যে, তাদের দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হতে হবে বাংলাদেশের জনগণের সাথে, কোনও নির্দিষ্ট একটি দলের সাথে নয়। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সকল পথই বাংলাদেশকে খুঁজতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে এ অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। দু’দেশের জনগণই উপকৃত হবে। কিন্তু এ সম্পর্ক ন্যায্যতা ও সাম্যের ভিত্তিতে হতে হবে, সেটিই বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক।