সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। অন্তর্বর্তী সরকার বয়সসীমা ৩২ বছর করলেও তা প্রত্যাখ্যান করে ৩৫ দাবি করেছেন তারা। এ দাবির পেছনে তাদের প্রধান যুক্তি হলো—বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা। সবশেষ সাতটি বিসিএসের দিকে তাকালে প্রার্থীদের এ দাবির সত্যতাও মেলে।
সাধারণ প্রত্যেকটি বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করতে সাড়ে তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যায়। যারা চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন, তাদের গেজেট প্রকাশের জন্য আরও ছয়মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। অর্থাৎ, এক বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চার বছরের নিচে বিসিএসে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারছে না সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এক বছরে বিসিএস শেষ করার রোডম্যাপ করেও তাতে ব্যর্থ সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
‘৪৬তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ হয়ে এখন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু কবে লিখিত পরীক্ষা হবে, তা জানি না। দেরি হওয়ায় কিছুটা হতাশ। তবে পিএসসিতে যে পরিবর্তন এসেছে এতে খুশি।’-পরীক্ষার্থী শেফায়েত হোসেন
শিক্ষাবিদ ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এক বছরে না হলেও ১৫ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে বিসিএস শেষ করা সম্ভব। এজন্য পিএসসিকে ঢেলে সাজাতে হবে। সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্বে এনে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কঠোর হওয়া জরুরি।
পিএসসির কর্মকর্তারা অবশ্য এ সংকটের পেছনে নিজেদের চেয়ে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে বেশি দায়ী করেছেন। তাদের ভাষ্য, বিসিএসে জট কাটাতে তারা একটি রোডম্যাপ করেছিলেন। জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাতসহ বিভিন্ন কারণে সেই রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিয়ে এখন নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে এ জট খুলতে চান তারা।
‘পিএসসি বহুবার বলে এসেছে তারা এক বছরে বিসিএস শেষ করবে। অথচ সময় নিয়েছে তিন থেকে চার বছর। এখন সব জায়গায় সংস্কার হচ্ছে। পিএসসিতেও নতুনরা দায়িত্বে এসেছেন। তাদের কাছে আমরা প্রত্যাশা করবো—যেন দ্রুত ৪৬তম বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করা হয়।’-পরীক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম
প্রিলি-লিখিত-মৌখিক পরীক্ষায় সাড়ে ৩ বছর
পিএসসি সবশেষ যে পাঁচটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে তিনটি সাধারণ এবং দুটি বিশেষ। বিশেষ দুটি বিসিএস এক বছরের মধ্যে শেষ হলেও ভিন্নচিত্র দেখা গেছে সাধারণ তিন বিসিএসে।
৪০ ও ৪১তম বিসিএসে সময় লাগে ৪ বছরের বেশি
পিএসসির সবশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী—সাধারণ তিনটি বিসিএসের মধ্যে ৪০তম-তে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে পিএসসির সময় লেগেছে তিন বছর ৬ মাস ২০ দিন। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০২২ সালের ৩০ মার্চ ৪০তম বিসিএসে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে পিএসসি। এর সাত মাস পর একই বছরের ১ নভেম্বর এ বিসিএসে চূড়ান্ত নিয়োগের গেজেট প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ, বিজ্ঞপ্তি থেকে চূড়ান্ত নিয়োগ বা গেজেট প্রকাশের জন্য সময় লেগেছে চার বছর এক মাস ২০ দিন।
‘বিসিএস শেষ করতে পিএসসির দীর্ঘসূত্রতা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে চাকরিপ্রার্থীদের যেমন ক্ষতি, রাষ্ট্রের তার চেয়েও বেশি ক্ষতি। আশা করছি, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেই সমস্যা কাটিয়ে পিএসসির কাজে গতিশীলতা ফেরাবেন।’-অধ্যাপক সাদিক হাসান
৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর। সব প্রক্রিয়া শেষে এ বিসিএসে নিয়োগের সুপারিশ করা হয় ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট। অর্থাৎ, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ফল প্রকাশে সময় লেগেছে তিন বছর ৮ মাস ৭ দিন। সুপারিশপ্রাপ্তদের গেজেট প্রকাশিত হয় গত ২১ মার্চ। অর্থাৎ, চূড়ান্ত নিয়োগ পেতে একজন প্রার্থীকে চার বছর তিন মাস ২৪ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।
৪৩তম বিসিএসে তুলনামূলক কিছুটা কম সময় লেগেছে। এ বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। তিন বছর ২৭ দিন পর ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এর প্রায় ১০ মাস পর গত ১৫ অক্টোবর এ বিসিএসের গেজেট প্রকাশ করা হয়। ফলে ৪৩তম বিসিএসে চূড়ান্ত নিয়োগ দিতে সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর ১০ মাস ১৬ দিন।
‘সম্প্রতি প্রশ্নফাঁসের অভিযোগসহ নানান ইস্যুতে পিএসসি সম্পর্কে জনমনে যে নেতিবাচক বিষয় ছড়িয়েছে, তা কাটিয়ে ভাবমূর্তি ফেরানোটা আমাদের প্রথম লক্ষ্য। আমরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা দিয়ে কাজ করতে চাই। এগুলো নিশ্চিত করা গেলে বাকি পথ সহজ হয়ে যাবে।’-পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম
৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসের প্রক্রিয়া চলমান
বর্তমানে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসের প্রক্রিয়া চলমান। ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। সাড়ে তিন বছর আগে এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশে আরও ছয় থেকে আট মাস সময় লাগতে পারে।
৪৫তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা হলেও ফল প্রকাশিত হয়নি। দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও কবে এ বিসিএস শেষ হবে তা জানেন না খোদ পিএসসি কর্মকর্তারাও। ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি হলেও লিখিত পরীক্ষা হয়নি। কবে এ পরীক্ষা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়নি।
‘আমার মেয়াদকালেও হয়তো পারিনি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি পিএসসি এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে। জনবল কাঠামোতে সংস্কার ও পরীক্ষাগ্রহণে সরকারের সহযোগিতা পেলে ঠিক এক বছরে না হলেও ১৫ থেকে ১৮ মাসে অন্তত একটি বিসিএস শেষ করা সম্ভব।’-পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ
বিশেষ বিসিএসে সময় কম
অন্যদিকে ৩৯তম ও ৪২তম বিসিএস ছিল বিশেষ। ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে সময় লেগেছে এক বছর ২২ দিন। ৪২তম বিসিএসে সময় লেগেছে মাত্র ১০ মাস ৬ দিন।
পিএসসি জানায়, বিশেষ বিসিএসে শুধু এমসিকিউ ধরনের লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেজন্য কম সময় লাগে। পাশাপাশি প্রার্থীও কম থাকে।
বিসিএসে জট খোলার রোডম্যাপ যেমন ছিল
আগে থেকেই বিসিএসে জট ছিল। করোনাকালে তা আরও দীর্ঘ হয়। সার্বিক দিক বিবেচনায় জট কাটিয়ে উঠতে ২০২১ সালে একটি রোডম্যাপ করেছিল পিএসসি। সেখানে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত কোন ধাপে কত সময় ব্যয় করবে, তা ঠিক করেছিল সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
পিএসসি সূত্র জানায়, রোডম্যাপ অনুযায়ী—বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশের কাজ শেষ হবে ৯৫ দিনে। প্রিলির এ কার্যক্রম চলার সময়ই লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশনের কাজ চলবে।
সে চাকরির বিধি লঙ্ঘন করেছে, এটা বড় অপরাধ: বরখাস্ত উর্মির মা
বিসিএসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয় যে ধাপে সেটি লিখিত পরীক্ষা ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন। রোডম্যাপ অনুযায়ী— পিএসসি এ ধাপটি শেষ করতে চেয়েছিল ১২৭ দিনে। যার মধ্যে সাতদিন বরাদ্দ ছিল আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা নিতে, ১২ দিন ছিল পদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৭৫ দিন। বাকি ৩৩ দিনে লিখিত ফল প্রণয়ন, প্রকাশসহ বাকি কাজগুলো শেষ করা হবে।
মৌখিক পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ করার জন্য সময় ধরা হয়েছিল ১১০ দিন। এরমধ্যে ১০০ দিন নেওয়া হবে প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা। বাকি দিনগুলোতে আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। সব মিলিয়ে ৩৩২ দিনের মধ্যে একটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে চেয়েছিল পিএসসি।
পিএসসিতে রদবদল, আশায় বুক বাঁধছেন প্রার্থীরা
দেশের লাখ লাখ গ্র্যাজুয়েটের বড় লক্ষ্য থাকে বিসিএসের মাধ্যমে ভালো চাকরি পাওয়া। গত এক দশকে বিসিএসের চাকরির আকর্ষণ বেড়েছে বহুগুণ। বিপরীতে একেকটি বিসিএস শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগায় প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভও রয়েছে। তবে সরকার পতনের পর পিএসসিতেও সম্প্রতি যে পরিবর্তন এসেছে, তা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন চাকরিপ্রার্থীরা। পিএসসির নতুন চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে তাদের প্রত্যাশা—স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে পিএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন শেফায়েত হোসেন। দুটি বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন। একটিতে মৌখিক পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছেন। ভাগ্যের শিঁকে ছেড়েনি। তার শেষ প্রচেষ্টা ৪৬তম বিসিএস।
শেফায়েত জাগো নিউজকে বলেন, ‘৪৬তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ হয়ে এখন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু কবে লিখিত পরীক্ষা হবে, তা জানি না। দেরি হওয়ায় কিছুটা হতাশ। তবে পিএসসিতে যে পরিবর্তন এসেছে এতে খুশি। আশা করি, নতুন চেয়ারম্যান ও অন্যরা আমাদের এটুকু নিশ্চিত করবেন যে সুপারিশ, অনিয়ম করে আর নিয়োগ হবে না। পাশাপাশি দ্রুত পরীক্ষাগুলো নিয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হোক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা আতিকুল ইসলামেরও একই দাবি। তিনিও ৪৬তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আতিকুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘পিএসসি বহুবার বলে এসেছে তারা এক বছরে বিসিএস শেষ করবে। অথচ সময় নিয়েছে তিন থেকে চার বছর। এখন সব জায়গায় সংস্কার হচ্ছে। পিএসসিতেও নতুনরা দায়িত্বে এসেছেন। তাদের কাছে আমরা প্রত্যাশা করবো—যেন দ্রুত ৪৬তম বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করা হয়।’
নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে আশাবাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিক হাসানও। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিসিএস শেষ করতে পিএসসির দীর্ঘসূত্রতা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে চাকরিপ্রার্থীদের যেমন ক্ষতি, রাষ্ট্রের তার চেয়েও বেশি ক্ষতি। আশা করছি, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেই সমস্যা কাটিয়ে পিএসসির কাজে গতিশীলতা ফেরাবেন।’
প্রত্যাশার চাপ কাঁধে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করছে পিএসসি
গত ৯ অক্টোবর পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম। একই সঙ্গে চারজন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৫ অক্টোবর তারা শপথ নেন।
তাদের কাছে চাকরিপ্রার্থীদের প্রত্যাশা, তা পূরণে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে পিএসসি—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। তবে হ্যাঁ, কাজগুলো সম্পর্কে একেবারে অবগত ছিলাম না, তা নয়। এখন সরাসরি দেখছি, কাজ শুরু করছি। আমাদের নিশ্চয়ই কিছু কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো প্রাথমিকভাবে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনাও করেছি। সম্প্রতি প্রশ্নফাঁসের অভিযোগসহ নানান ইস্যুতে পিএসসি সম্পর্কে জনমনে যে নেতিবাচক বিষয় ছড়িয়েছে, তা কাটিয়ে ভাবমূর্তি ফেরানোটা আমাদের প্রথম লক্ষ্য। আমরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা দিয়ে কাজ করতে চাই। এগুলো নিশ্চিত করা গেলে বাকি পথ সহজ হয়ে যাবে।’
এক বছরে বিসিএস শেষ করার জন্য সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান একটি রোডম্যাপ করেছিলেন। সেটা স্পষ্টত ব্যর্থ হয়েছে। ওই রোডম্যাপ ধরে কাজ এগিয়ে নিতে চান, নাকি নতুন কোনো পরিকল্পনা করা হবে—এমন প্রশ্নে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা করতে চাই। আগে যদি তেমন কোনো পরিকল্পনা থাকে, সেটা সময়োপযোগী বলে বিবেচিত হলে সেটাকে এগিয়ে নেওয়া হবে। এক কথায় স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে বিসিএস শেষ করতে তৎপর থাকবে পিএসসি।’
দক্ষ জনবল ও সরকারের সহযোগিতা পেলে এক বছরে বিসিএস শেষ করা সম্ভব বলে মনে করেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার মেয়াদকালেও হয়তো পারিনি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি পিএসসি এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে। জনবল কাঠামোতে সংস্কার ও পরীক্ষাগ্রহণে সরকারের সহযোগিতা পেলে ঠিক এক বছরে না হলেও ১৫ থেকে ১৮ মাসে অন্তত একটি বিসিএস শেষ করা সম্ভব।’
সাধারণ প্রত্যেকটি বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করতে সাড়ে তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যায়। যারা চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন, তাদের গেজেট প্রকাশের জন্য আরও ছয়মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। অর্থাৎ, এক বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চার বছরের নিচে বিসিএসে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারছে না সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এক বছরে বিসিএস শেষ করার রোডম্যাপ করেও তাতে ব্যর্থ সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
‘৪৬তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ হয়ে এখন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু কবে লিখিত পরীক্ষা হবে, তা জানি না। দেরি হওয়ায় কিছুটা হতাশ। তবে পিএসসিতে যে পরিবর্তন এসেছে এতে খুশি।’-পরীক্ষার্থী শেফায়েত হোসেন
শিক্ষাবিদ ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এক বছরে না হলেও ১৫ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে বিসিএস শেষ করা সম্ভব। এজন্য পিএসসিকে ঢেলে সাজাতে হবে। সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্বে এনে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কঠোর হওয়া জরুরি।
পিএসসির কর্মকর্তারা অবশ্য এ সংকটের পেছনে নিজেদের চেয়ে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে বেশি দায়ী করেছেন। তাদের ভাষ্য, বিসিএসে জট কাটাতে তারা একটি রোডম্যাপ করেছিলেন। জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাতসহ বিভিন্ন কারণে সেই রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিয়ে এখন নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে এ জট খুলতে চান তারা।
‘পিএসসি বহুবার বলে এসেছে তারা এক বছরে বিসিএস শেষ করবে। অথচ সময় নিয়েছে তিন থেকে চার বছর। এখন সব জায়গায় সংস্কার হচ্ছে। পিএসসিতেও নতুনরা দায়িত্বে এসেছেন। তাদের কাছে আমরা প্রত্যাশা করবো—যেন দ্রুত ৪৬তম বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করা হয়।’-পরীক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম
প্রিলি-লিখিত-মৌখিক পরীক্ষায় সাড়ে ৩ বছর
পিএসসি সবশেষ যে পাঁচটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে তিনটি সাধারণ এবং দুটি বিশেষ। বিশেষ দুটি বিসিএস এক বছরের মধ্যে শেষ হলেও ভিন্নচিত্র দেখা গেছে সাধারণ তিন বিসিএসে।
৪০ ও ৪১তম বিসিএসে সময় লাগে ৪ বছরের বেশি
পিএসসির সবশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী—সাধারণ তিনটি বিসিএসের মধ্যে ৪০তম-তে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে পিএসসির সময় লেগেছে তিন বছর ৬ মাস ২০ দিন। ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০২২ সালের ৩০ মার্চ ৪০তম বিসিএসে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করে পিএসসি। এর সাত মাস পর একই বছরের ১ নভেম্বর এ বিসিএসে চূড়ান্ত নিয়োগের গেজেট প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ, বিজ্ঞপ্তি থেকে চূড়ান্ত নিয়োগ বা গেজেট প্রকাশের জন্য সময় লেগেছে চার বছর এক মাস ২০ দিন।
‘বিসিএস শেষ করতে পিএসসির দীর্ঘসূত্রতা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে চাকরিপ্রার্থীদের যেমন ক্ষতি, রাষ্ট্রের তার চেয়েও বেশি ক্ষতি। আশা করছি, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেই সমস্যা কাটিয়ে পিএসসির কাজে গতিশীলতা ফেরাবেন।’-অধ্যাপক সাদিক হাসান
৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর। সব প্রক্রিয়া শেষে এ বিসিএসে নিয়োগের সুপারিশ করা হয় ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট। অর্থাৎ, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ফল প্রকাশে সময় লেগেছে তিন বছর ৮ মাস ৭ দিন। সুপারিশপ্রাপ্তদের গেজেট প্রকাশিত হয় গত ২১ মার্চ। অর্থাৎ, চূড়ান্ত নিয়োগ পেতে একজন প্রার্থীকে চার বছর তিন মাস ২৪ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।
৪৩তম বিসিএসে তুলনামূলক কিছুটা কম সময় লেগেছে। এ বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। তিন বছর ২৭ দিন পর ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এর প্রায় ১০ মাস পর গত ১৫ অক্টোবর এ বিসিএসের গেজেট প্রকাশ করা হয়। ফলে ৪৩তম বিসিএসে চূড়ান্ত নিয়োগ দিতে সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর ১০ মাস ১৬ দিন।
‘সম্প্রতি প্রশ্নফাঁসের অভিযোগসহ নানান ইস্যুতে পিএসসি সম্পর্কে জনমনে যে নেতিবাচক বিষয় ছড়িয়েছে, তা কাটিয়ে ভাবমূর্তি ফেরানোটা আমাদের প্রথম লক্ষ্য। আমরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা দিয়ে কাজ করতে চাই। এগুলো নিশ্চিত করা গেলে বাকি পথ সহজ হয়ে যাবে।’-পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম
৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসের প্রক্রিয়া চলমান
বর্তমানে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসের প্রক্রিয়া চলমান। ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। সাড়ে তিন বছর আগে এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশে আরও ছয় থেকে আট মাস সময় লাগতে পারে।
৪৫তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা হলেও ফল প্রকাশিত হয়নি। দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও কবে এ বিসিএস শেষ হবে তা জানেন না খোদ পিএসসি কর্মকর্তারাও। ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি হলেও লিখিত পরীক্ষা হয়নি। কবে এ পরীক্ষা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়নি।
‘আমার মেয়াদকালেও হয়তো পারিনি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি পিএসসি এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে। জনবল কাঠামোতে সংস্কার ও পরীক্ষাগ্রহণে সরকারের সহযোগিতা পেলে ঠিক এক বছরে না হলেও ১৫ থেকে ১৮ মাসে অন্তত একটি বিসিএস শেষ করা সম্ভব।’-পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ
বিশেষ বিসিএসে সময় কম
অন্যদিকে ৩৯তম ও ৪২তম বিসিএস ছিল বিশেষ। ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে সময় লেগেছে এক বছর ২২ দিন। ৪২তম বিসিএসে সময় লেগেছে মাত্র ১০ মাস ৬ দিন।
পিএসসি জানায়, বিশেষ বিসিএসে শুধু এমসিকিউ ধরনের লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেজন্য কম সময় লাগে। পাশাপাশি প্রার্থীও কম থাকে।
বিসিএসে জট খোলার রোডম্যাপ যেমন ছিল
আগে থেকেই বিসিএসে জট ছিল। করোনাকালে তা আরও দীর্ঘ হয়। সার্বিক দিক বিবেচনায় জট কাটিয়ে উঠতে ২০২১ সালে একটি রোডম্যাপ করেছিল পিএসসি। সেখানে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত কোন ধাপে কত সময় ব্যয় করবে, তা ঠিক করেছিল সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
পিএসসি সূত্র জানায়, রোডম্যাপ অনুযায়ী—বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশের কাজ শেষ হবে ৯৫ দিনে। প্রিলির এ কার্যক্রম চলার সময়ই লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশনের কাজ চলবে।
সে চাকরির বিধি লঙ্ঘন করেছে, এটা বড় অপরাধ: বরখাস্ত উর্মির মা
বিসিএসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয় যে ধাপে সেটি লিখিত পরীক্ষা ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন। রোডম্যাপ অনুযায়ী— পিএসসি এ ধাপটি শেষ করতে চেয়েছিল ১২৭ দিনে। যার মধ্যে সাতদিন বরাদ্দ ছিল আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা নিতে, ১২ দিন ছিল পদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৭৫ দিন। বাকি ৩৩ দিনে লিখিত ফল প্রণয়ন, প্রকাশসহ বাকি কাজগুলো শেষ করা হবে।
মৌখিক পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ করার জন্য সময় ধরা হয়েছিল ১১০ দিন। এরমধ্যে ১০০ দিন নেওয়া হবে প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা। বাকি দিনগুলোতে আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। সব মিলিয়ে ৩৩২ দিনের মধ্যে একটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে চেয়েছিল পিএসসি।
পিএসসিতে রদবদল, আশায় বুক বাঁধছেন প্রার্থীরা
দেশের লাখ লাখ গ্র্যাজুয়েটের বড় লক্ষ্য থাকে বিসিএসের মাধ্যমে ভালো চাকরি পাওয়া। গত এক দশকে বিসিএসের চাকরির আকর্ষণ বেড়েছে বহুগুণ। বিপরীতে একেকটি বিসিএস শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগায় প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভও রয়েছে। তবে সরকার পতনের পর পিএসসিতেও সম্প্রতি যে পরিবর্তন এসেছে, তা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন চাকরিপ্রার্থীরা। পিএসসির নতুন চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে তাদের প্রত্যাশা—স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে পিএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন শেফায়েত হোসেন। দুটি বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন। একটিতে মৌখিক পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছেন। ভাগ্যের শিঁকে ছেড়েনি। তার শেষ প্রচেষ্টা ৪৬তম বিসিএস।
শেফায়েত জাগো নিউজকে বলেন, ‘৪৬তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ হয়ে এখন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু কবে লিখিত পরীক্ষা হবে, তা জানি না। দেরি হওয়ায় কিছুটা হতাশ। তবে পিএসসিতে যে পরিবর্তন এসেছে এতে খুশি। আশা করি, নতুন চেয়ারম্যান ও অন্যরা আমাদের এটুকু নিশ্চিত করবেন যে সুপারিশ, অনিয়ম করে আর নিয়োগ হবে না। পাশাপাশি দ্রুত পরীক্ষাগুলো নিয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হোক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা আতিকুল ইসলামেরও একই দাবি। তিনিও ৪৬তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আতিকুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘পিএসসি বহুবার বলে এসেছে তারা এক বছরে বিসিএস শেষ করবে। অথচ সময় নিয়েছে তিন থেকে চার বছর। এখন সব জায়গায় সংস্কার হচ্ছে। পিএসসিতেও নতুনরা দায়িত্বে এসেছেন। তাদের কাছে আমরা প্রত্যাশা করবো—যেন দ্রুত ৪৬তম বিসিএসের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করা হয়।’
নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে আশাবাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিক হাসানও। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিসিএস শেষ করতে পিএসসির দীর্ঘসূত্রতা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে চাকরিপ্রার্থীদের যেমন ক্ষতি, রাষ্ট্রের তার চেয়েও বেশি ক্ষতি। আশা করছি, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেই সমস্যা কাটিয়ে পিএসসির কাজে গতিশীলতা ফেরাবেন।’
প্রত্যাশার চাপ কাঁধে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করছে পিএসসি
গত ৯ অক্টোবর পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম। একই সঙ্গে চারজন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৫ অক্টোবর তারা শপথ নেন।
তাদের কাছে চাকরিপ্রার্থীদের প্রত্যাশা, তা পূরণে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে পিএসসি—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। তবে হ্যাঁ, কাজগুলো সম্পর্কে একেবারে অবগত ছিলাম না, তা নয়। এখন সরাসরি দেখছি, কাজ শুরু করছি। আমাদের নিশ্চয়ই কিছু কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো প্রাথমিকভাবে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনাও করেছি। সম্প্রতি প্রশ্নফাঁসের অভিযোগসহ নানান ইস্যুতে পিএসসি সম্পর্কে জনমনে যে নেতিবাচক বিষয় ছড়িয়েছে, তা কাটিয়ে ভাবমূর্তি ফেরানোটা আমাদের প্রথম লক্ষ্য। আমরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা দিয়ে কাজ করতে চাই। এগুলো নিশ্চিত করা গেলে বাকি পথ সহজ হয়ে যাবে।’
এক বছরে বিসিএস শেষ করার জন্য সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান একটি রোডম্যাপ করেছিলেন। সেটা স্পষ্টত ব্যর্থ হয়েছে। ওই রোডম্যাপ ধরে কাজ এগিয়ে নিতে চান, নাকি নতুন কোনো পরিকল্পনা করা হবে—এমন প্রশ্নে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা করতে চাই। আগে যদি তেমন কোনো পরিকল্পনা থাকে, সেটা সময়োপযোগী বলে বিবেচিত হলে সেটাকে এগিয়ে নেওয়া হবে। এক কথায় স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে বিসিএস শেষ করতে তৎপর থাকবে পিএসসি।’
দক্ষ জনবল ও সরকারের সহযোগিতা পেলে এক বছরে বিসিএস শেষ করা সম্ভব বলে মনে করেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার মেয়াদকালেও হয়তো পারিনি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি পিএসসি এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে। জনবল কাঠামোতে সংস্কার ও পরীক্ষাগ্রহণে সরকারের সহযোগিতা পেলে ঠিক এক বছরে না হলেও ১৫ থেকে ১৮ মাসে অন্তত একটি বিসিএস শেষ করা সম্ভব।’