সম্প্রতি দেশের কয়েক লাখ ফ্রিল্যান্সার আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ৫ দিনে ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকা। চলতি বছরে এর ওপরে যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে, তার ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারের ওপর ফ্রিল্যান্সারদের অনেক প্রত্যাশা। তারা সরকারের কাছে কিছু দাবি জানিয়েছেন। যেগুলো পূরণ হলে দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন। এ বিষয়ে দুজন ফ্রিল্যান্সার জানিয়েছেন তাদের প্রত্যাশার কথা।
অ্যা ফোকাসড এজেন্সির কর্ণধার ইমরান হোসেন জানিয়েছেন, তিনি ইংরেজি ভাষা শেখার অ্যাপ Elsa Speak-এ প্রোডাক্ট ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন অ্যা ফোকাসড এজেন্সি। যেখানে কাজ করছেন ৮ জন। যারা ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্টে বিভিন্ন কোম্পানিকে ডিজাইন কনসালটেন্সি সার্ভিস দিচ্ছেন।
তিনি দাবি করেন-
১. পেপাল এবং ওয়াইজ পেমেন্ট গেটেওয়ের সম্পূর্ণ সার্ভিস কার্যক্রম বাংলাদেশের চালু করা।
২. ফ্রিল্যান্সিং আইডি কার্ডকে যথাযথ মর্যাদা সম্পন্ন করা। যাতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ভিসা, বিভিন্ন খাতে এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং এটি ব্যবহার করা যায়।
৩. ব্যাংক লোন কিংবা ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।
৪. ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক বিভিন্ন কোর্সের মাধ্যমে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। এর জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা করা হোক। যাতে কোর্সের মান বিবেচনা করে সেগুলো বিক্রির বৈধতা দেওয়া হয়।
৫. বর্তমানে আইটি সেক্টরে সরকারের যেসব প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু আছে; সেগুলোকে আরও উন্নত এবং আধুনিক করা হোক।
৬. ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নির্দিষ্ট ব্রডব্যান্ড কিংবা সিম সেবা চালু করা হোক। দেশের যে কোনো পরিস্থিতিতে যদি ইন্টারনেটের ঘাটতি দেখা যায়, ন্যূনতম যতটুকু থাকবে সেখান থেকে যেন ফ্রিল্যান্সাররা সুবিধা পায়।
৭. কিছু সেক্টরে ফ্রিল্যান্সারদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে যথেষ্ট পরিমাণের ডলারের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ফ্রিল্যান্সারদের সেই ডলারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।
স্বপ্ন একাডেমির কর্ণধার মেহেদী হাসান শুভ জানিয়েছেন, তিনি ফ্রিল্যান্সিং করার পাশাপাশি প্রায় ৩ হাজার মানুষকে একদম বিনা পয়সায় ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়েছেন। মাসে তার আয় ১৫০০ থেকে ২০০০ ডলার। তিনি পেয়েছেন রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড, গ্লোব্যাল চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড এবং মহাত্না গান্ধী অ্যাওয়ার্ড।
তিনি দাবি করেন-
১. নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা চাই।
২. আমাদের পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে পেপাল বাংলাদেশে চাই।
৩. ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য কমানো এবং মেয়াদ বাড়ানো। যাতে সাধারণ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে।
৪. ব্যাংকে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সব সুবিধা তৈরি করা।
৫. তরুণদের স্কুল-কলেজ পর্যায়ে আইটি খাতে দক্ষ করে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৬. আন্তর্জাতিক সব ই-কমার্স প্লাটফর্মের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিয়ে আসা।
৭. গ্রামপর্যায়ে ইন্টারনেট মানি মোবাইল ডেটা ও ওয়াইফাইয়ের দ্রুতগতির সার্ভিস চালু করতে হবে।
লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, সেলস অপারেশনস, ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড।