চোখ ফোলা ফোলা, জবা ফুলের মতো টকটুকে লাল। মনে হয় কোনো কারণে অনেক কান্নাকাটি করেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার কি হয়েছে?’
‘কিছু না।’ বলেই অন্যদিকে তাকালো।
তারপর বললো,
‘তুই দাঁড়া।’
বলেই ঘরে গিয়ে কয়েকটা দানাদার মিষ্টি আর একটা খাম ওড়নার মধ্যে লুকিয়ে এনে, দানাদারগুলো আমার হাতে দিয়ে, খামটা আমার পকেটে পুরে দিলো।
আর বললো,
‘এখন যা, আমি একটু শুয়ে থাকবো।’
ওদিনকার খামটা অন্যদিনের তুলনায় বেশ ভারি আর মোটা বলে মনে হলো। পকেটে যে কিছু আছে তা হাঁটতে গেলে বেশ অনুভব করা যাচ্ছিল। লোকমান ভাইদের বাড়ির কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়লো সে টমীকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছেন। আমাকে দূর থেকে দেখতে পেয়েই তড়িঘড়ি করে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
‘কিরে কি খবর দীপ্ত? কেমন আছিস?’
মাথা নেড়ে বললাম,
‘ভালো।’
বলেই পকেট থেকে খামটা বের করে লোকমান ভাইকে দিলাম। খামটা নিয়েই সে তার জিন্সের পকেটে ভরে নিলো। অন্য পকেট থেকে একটা কাগজে মোড়া কয়েকটা কদমা আমার হাতে দিয়েই তার বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালো। টমী তখনও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে, দাঁড়িয়ে লেজ নাড়ছে।
আমি একটা কদমা বের করে সেদিনের মতো উঁচু করে ছুঁড়ে দিলাম। টমী কদমাটাকে ক্যাচ ধরে লোকমান ভাইয়ের পিছু নিলো। লোকমান ভাই ঘাড় ঘুরিয়ে টমীকে কদমা দেওয়ার ব্যাপারটা দেখলো। তারপর একটু মুচ্কি হেসে তার বাড়ির দিকে চলে গেলো।
আগের পর্ব পড়ুন এখানে
এরপর আমার পিয়ন-ডিউটি সপ্তাহে একদিন থেকে বেড়ে সপ্তাহে দু’দিন হয়ে গেলো। খাম দিতে গেলেই প্রায়ই দেখতাম লোকমান ভাই টমীকে নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাকে আর খুঁজতে হতো না। আজকাল তাকে বেশ পেরেশান লাগে। লোকমান ভাইয়ের ছোট রিমোটের মতো একটা মোবাইল ফোন দিয়ে অনেক কথা বলতে দেখতাম।
ফোনে কথা বলতে বলতে সে অকারণে এদিক থেকে ওদিক, আবার ওদিক থেকে এদিক অযথা হাঁটাহাঁটি করত। ঈশরাত আপুর কোনো মোবাইল ফোন ছিল না। লোকমান ভাই হয়তো চাকরি বাকরি কিছু খুঁজছেন বা অন্য কোনো বিষয় থেকে থাকবে। ঈশরাত আপু আমার সঙ্গে বসে তেমন আর গল্প করত না। সব সময় কি যেন চিন্তা করত, অন্যমনস্ক থাকতো। দেখেই বোঝা যেত যে সেও বড় কোনো ধকলের মাঝে আছে।
এতদিনে আমি ঠিকই বুঝে গেছি যে, ঈশরাত আপুর সাথে লোকমান ভাইয়ের লাইন আছে। ওরা একে অন্যকে খুব পছন্দ করে ও খুব ভালোবাসে। ঈশরাত আপুর মনে হয় লোকমান ভাইয়ের সাথে বিয়ে হবে।
একদিন সন্ধ্যায় আমার ঘরে আমি পড়তে বসেছি। বারান্দায় আমার মায়ের সাথে আমার বাবার কথাবার্তা শুনে আমার খুব কানখাড়া হলো।
মা বাবাকে বলল,
‘শুনেছ, ও পাড়ার ঈশরাতের বিয়ে ঠিক হয়েছে।’
শুনেই আনন্দে আমার চোখ বড় বড় হয়ে কান আরও বেশি খাড়া হলো। লোকমান ভাইয়ের সাথে ঈশরাত আপুর বিয়ে, এটা তো ওরা দুজনের কেউই আমাকে বলেনি। লোকমান ভাইকে বলতে হবে যে আমি তার বিয়ের বরযাত্রী হবো। যদিও খুব কাছে কাছেই বিয়ে। লোকমান ভাইদের বাড়ি থেকে ঈশরাত আপুদের বাড়িতে যেতে হাঁটার দূরত্ব। তাতে কি? আমরা বাজি পোড়াতে পোড়াতে, নাচতে নাচতে আনন্দ করবো।