ঢাকা, ১৫ আগস্ট: ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা। তাকে ঢাকার শ্যামলী এলাকা থেকে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে গোপন বন্দীশালায় আটক থাকার পর অবশেষে ৬ আগস্ট ২০২৪ সালে তিনি মুক্তি পেয়েছেন।
মাইকেল চাকমা জানিয়েছেন, তাকে একটি গোপন বন্দীশালায় বন্দী রাখা হয়েছিল, যা অনেকের কাছে 'আয়নাঘর' নামে পরিচিত। সেখানে কাটানো দিনগুলো ছিল তার জীবনের সবচেয়ে অমানবিক এবং মানসিকভাবে অত্যাচারিত সময়। তিনি জানান, বন্দীশালার কক্ষগুলো ছিল ছোট, অন্ধকার এবং কোনো আলো বা বাতাস প্রবেশ করতে পারত না। এসব কক্ষে তিনি প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কাটিয়েছেন, যেখানে কোনো মানবিকতার চিহ্ন ছিল না।
মাইকেল চাকমা বলেন, বন্দীদশায় থাকার সময় তিনি জানতেন না যে তার বাবা পুত্রশোকে মারা গেছেন এবং পরিবার তাকে মৃত ধরে নিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন এই মর্মান্তিক সত্যটি।
বন্দীদশায় থাকা অবস্থায় মাইকেল চাকমা আরও বেশ কয়েকজন বন্দীকে দেখতে পেয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের নাম সাইদুল, যিনি রংপুরের বাসিন্দা, এবং আরেকজনের নাম এরশাদ, যিনি ঢাকার কচুক্ষেতের কাছাকাছি থাকতেন। এছাড়া, মাইকেল চাকমা পাশের কক্ষে জাকির নামে একজন বন্দীর কথাবার্তা শুনেছেন, যিনি কোনো বাহিনীর সদস্য বলে মনে হয়।
মাইকেল চাকমা এখন সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করছেন এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার জীবন থেকে যে সাড়ে পাঁচ বছর হারিয়ে গেছে, এর ক্ষতিপূরণ দাবি করবেন তিনি।
এদিকে, সরকার পতনের পর গোপন বন্দীশালা থেকে আরও কয়েকজন মুক্তি পেয়েছেন, তবে এখনো অনেক নিখোঁজ ব্যক্তির কোনো খোঁজ মেলেনি। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনদের সন্ধানের দাবি জানাচ্ছেন এবং এই গোপন বন্দীশালার নৃশংসতার বিচার চাইছেন।