ঢাকা , শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫ , ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি

আপলোড সময় : ১০-০৭-২০২৫ ১০:৪০:৪৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১০-০৭-২০২৫ ১০:৪০:৪৩ অপরাহ্ন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়ে আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। 

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় দফা সংলাপের ১১তম দিনের আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিং-এ অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, দলগুলোর সাথে কমিশনের আলোচনায় প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত দুটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন ও রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া। আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল। 

অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়ে গত ৭ জুলাইয়ের আলোচনায় সংবিধানের  অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) সংশোধন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা যেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার না হয়, এ দুটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। আলোচনায় অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) সংশোধনের ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধান অপসারণ এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে এ বিষয়টা আরো সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে আরো কী কী বিষয় সংযুক্ত করা যায়, সেসব আগামী সপ্তাহের আলোচনায় সুস্পষ্ট হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ক দুটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এমন একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যা কার্যতঃ যতদূর সম্ভব ত্রুটিহীন হয় এবং যে ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান আন্দোলন-সংগ্রামের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। এই বিষয়েও আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের ২ জনের মধ্যে থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন। এক্ষেত্রে কোন অসদাচরণের অভিযোগ না থাকলে আপিল বিভাগের যে কোন জ্যৈষ্ঠ বিচারককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রস্তাব করেছে বিএনপি। 

তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত। তবে আগের একই কাঠামো থাকবে কি না, সেই বিষয়ে আলোচনা চলছে। এক্ষেত্রে বিচারবিভাগকে বাইরে রাখা যেতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতিকে বাইরে না রেখে বরং কোন বিকল্প তৈরি করার পর রাষ্ট্রপতিকে বাদ দেওয়া যেতে পারে, এমন মতামত এসেছে।  

জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানে উল্লিখিত জরুরি অবস্থা জারি সংক্রান্ত বিধানে অভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্য/বিদ্রোহ শব্দটি জরুরি অবস্থা জারি এই অভ্যন্তরীণ শব্দটি বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। আর জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরের বিধান না রেখে সংসদীয় কমিটির স্বাক্ষর করার বিধান রাখা যেতে পারে। এছাড়া জরুরি অবস্থায় লেখার ও বলার স্বাধীনতা বহাল রাখা, নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতম আচরণ করা যাবে না এবং বিচার পাওয়ার অধিকার রাখার পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপি।

একটি রাজনৈতিক দলের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের একটি প্রস্তাবনা বিএনপির কাছে দিয়েছে সরকার, এনিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যের বৈঠকে আলোচনাও হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানকে যথাযথ মর্দাযায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চায় বিএনপি। ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত থাকে না। স্বাধীনতার পর জনপ্রতিনিধিরা ঘোষণাপত্র তৈরি করেছিলেন, তারা আলোচনা করে সংবিধান প্রণয়ন করেন পরবর্তীতে ঘোষণাপত্রকে সংবিধানে সংযুক্ত করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়ে একমত এনসিপি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান নির্বাচনে আমরা সর্বদলীয় একটি কমিটি গঠনের কথা বলেছি। জরুরি অবস্থা জারি বিষয়ে ১৪১-ক অনুচ্ছেদের সংশোধনী আনতে মত দিয়েছি। এক্ষেত্রে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি মাধ্যমে জরুরি অবস্থা জারি করা যেতে পারে। আগামীতে জরুরি অবস্থা বিরোধী দল দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠতে না পারে, এমন কয়েকটি বিধান স্থগিত করার পক্ষে এনসিপি। 

তিনি বলেন, এনসিপি মনে করে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রয়নয় করতে হবে এবং জুলাই আন্দোলনের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রয়োজন। আমরা রাষ্ট্রপরিচালনায় নতুন সংবিধানে মূলনীতি হিসেবেই জুলাই সনদের স্বীকৃতি চাই। 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, তত্ত্বাবধায়ক নয়, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তদারকি সরকার চান তারা। সেই সরকারের রুটিন কাজ হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা, স্থানীয় নির্বাচন করা তাদের কাজ নয়। স্থানীয় নির্বাচন করবে নির্বাচিত সরকার। একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করাই হবে নির্বাচনকালীন সরকারের কাজ। অতীতে দেখেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার মূল কাজের বাইরেও অতিরিক্ত কাজে জড়িয়ে দীর্ঘদিন থাকার চেষ্টা করেছে। এতে সমস্যা আরো বেড়ে যায়। তাই আমরা নাম পরিবর্তনের কথা বলেছি। 

রাষ্ট্রপতি ও বিচার বিভাগকে বাইরে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও বিচার বিভাগকে যুক্ত করার কারণে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছিল। বিচার বিভাগকে এখানে যুক্ত করার কারণে কেবল বিচার বিভাগ দলীয়করণ হয়নি, পুরো বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার মধ্যে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছিল। 

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ