ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫ , ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

বিপ্লব সব সময় বিপ্লবীদের খেয়ে ফেলে : গোলাম মাওলা রনি

আপলোড সময় : ০২-০৭-২০২৫ ১১:৩৮:১৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ০২-০৭-২০২৫ ১১:৩৮:১৪ পূর্বাহ্ন
বিপ্লব সব সময় বিপ্লবীদের খেয়ে ফেলে : গোলাম মাওলা রনি
গত বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত গণআন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আন্দোলনের প্রাপ্তি ও ব্যর্থতা নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের নিয়মিত আলোচনায় কথা বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। আলোচনায় তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্টে বাঙালির বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঐতিহ্য নতুন মাত্রা পায়।

তবে তিনি একে বিপ্লবের বদলে ‘গণবিস্ফোরণ’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘আমাদের দেশের এটাকে আমরা এখন বিপ্লব বলতে পারছি না। এর কারণ হলো একটা বিপ্লব দীর্ঘদিন ধরে নেতা নির্বাচন করে।

যুদ্ধ করে বিপ্লবকে জনপ্রিয় করে। এটা ছিল অনেকটা গণবিস্ফোরণের মতো ঘটনা। আপনি লক্ষ করবেন যে, জুলাই এবং আগস্টে গৃহবধূ রাস্তায় নেমে এসেছে, শিশুরাও রাস্তায় নেমে এসে একটা ঢিল ছুড়েছে।’

তার মতে, ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১০–১২ কোটি মানুষ এই বিস্ফোরণে শারীরিক বা মানসিকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।

এছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হিসেবে রনি বলেন, ‘বিপ্লব সবসময় তার বিপ্লবীদের খেয়ে ফেলে।’

অভ্যুত্থানের পর নেতৃত্বের অভাবের বিষয়ে রনি বলেন, ‘আন্দোলনের গতি ছিল, আবেগ ছিল; কিন্তু কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল না। কৃতিত্ব কে নেবে—এই প্রশ্ন নিয়ে অনেকেই বিভক্ত হয়ে পড়েন।’

বর্তমান তরুণ নেতৃত্বেরও সমালোচনা করেন রনি।

তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন উদ্দীপনাদায়ক ভাষণ, মানুষের অন্তরে পৌঁছানোর মতো ক্যারিশমা—যা এখন আর দেখা যাচ্ছে না।’

আন্দোলনের এক বছর পরও জনজীবনে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন না আসায় হতাশা প্রকাশ করে রনি বলেন, যাদের একসময় মানবতাবাদী মনে করা হতো, তারাই আজ ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। নতুন ধরনের দরবেশ, চাঁদাবাজ ও জালেমের আবির্ভাব হয়েছে।

বর্তমান রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে থাকা নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও মত দেন রনি। তার মতে, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির দাবি জোরালো হচ্ছে।

এটি বড় দলগুলোর জন্য অস্বস্তির কারণ হলেও, এতে করে ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিপত্তি নিয়ে রনি বলেন, ‘দেড় লাখে যদি আপনি একটা করে আসন দেন তাহলে আমি হয়তো সারা দেশের ভোট মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০টি আসন পেতে পারি। এটা দিয়ে আমার ভাই, ভাগিনা, স্ত্রী, পুত্র যারা আমার পছন্দের তাদের সবাইকে আমি এমপি বানাতে পারলাম। আমি এই সুযোগটা বাদ দিয়ে কেন বিএনপি-আওয়ামী লীগের পেছনে ঘুরতে যাব?’

আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন রনি। তিনি বলেন, নির্বাচনের এক নম্বর স্টেকহোল্ডার হলো বিএনপি। তারা বিশ্বাস করেন নির্বাচন যেকোনো ভাবে হলেও তারা অন্তত ২৮০টা সিট পেয়ে জয় লাভ করবে। তো রাষ্ট্রীয় সম্পদ বা ট্যাক্সমুক্ত গাড়ির দিকে তাকিয়ে তারা চিন্তা করে এইগুলো তো সবই আমাদের প্রাপ্য। আর এইসব পাওয়ার পথে যারা বাধা দিচ্ছে তারা জাতির শত্রু।

রনি মনে করেন, আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। বলেন, ভালো কাজ ও জনকল্যাণ ছাড়া দেশে কোনো স্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমান নেতৃত্বে সে ধারা দেখা যাচ্ছে না।

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ