মেয়েকে বাঁচাতে জাহাজ থেকে সমুদ্রে ঝাঁপ
আপলোড সময় :
০২-০৭-২০২৫ ১১:১৭:৫০ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
০২-০৭-২০২৫ ১১:১৭:৫০ পূর্বাহ্ন
বাহামা দ্বীপপুঞ্জ ঘুরে চা রাতের ভ্রমণ শেষে ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেলের দিকে ফিরছিল ১৪ তলা, ৪ হাজার যাত্রী ধারণক্ষমতার ডিজনি ড্রিম ক্রুসশিপ। রোববার বিকেল, সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। ঠিক তখনই ৪ তলা ডেকের রেলিংয়ের ধারে ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ সাগরে পড়ে যায় ছোট্ট একটি মেয়ে। বিন্দুমাত্র দেরি না করে কাঁধের ব্যাগ ছুড়ে ফেলে পানিতে ঝাঁপ দেন তার বাবা। রেলিং ঘেষে দাঁড়ানো সহযাত্রীরা হতবাক, মুহূর্তেই নিস্তব্ধ হয়ে যায় জাহাজের মধুর কলরব।
এরপরই ভেসে আসে ক্রুদের হুঙ্কার “MOB, Port side!” বা Man Overboard। জাহাজের ইঞ্জিন ধীর হয়ে যায়, ব্রিজ থেকে সাইরেন বাজে। মিনিটের মধ্যে হলুদ রঙের টেন্ডার বোট নামানো হয় সমুদ্রে; ক্রুরা লাইফ রিং ছুড়ে দেন। বাবার বাহুতে জড়িয়ে ভেসে থাকা মেয়েটিকে টেনে তোলে উদ্ধারদল। প্রায় ১০–১৫ মিনিট উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই শেষে যখন তাঁদের ছোট বোটে তুলে আনা হয়, পালঙ্কের মতো ভর করে আশ্বাস দেন মেডিকেল টিম। আর সেই মুহূর্তে ৪ হাজার যাত্রীর কণ্ঠে একযোগে গর্জে ওঠে উল্লাস-“হিরো ড্যাড!”
ডেকে দাঁড়িয়ে মা ছিলেন শ্বাসরুদ্ধ, কাঁপুনি হাত, চোখ ছলছল। যাত্রী ট্রেসি রবিনসন ও হিউজ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ওই মানুষটা সত্যিকারের নায়ক। তাঁর ঝাঁপ না থাকলে কী হতো কে জানে!” আরেক যাত্রী লরা জানালেন, “জাহাজ এত দ্রুত চলছিল যে তারা মুহূর্তেই বিন্দু হয়ে যাচ্ছিল; ক্যাপ্টেন তৎক্ষণাৎ গতি কমিয়ে জাহাজ ঘুরিয়ে দেন।” মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করা সেই ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল-মিলিয়নের বেশি ভিউ, অসংখ্য ‘ব্রেভেস্ট ড্যাড’ কমেন্ট।
সমুদ্রে কেউ পড়ে গেলে সফল উদ্ধার ঘটে মাত্র এক চতুর্থাংশ ক্ষেত্রে। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের ২১২ টি ‘ওভারবোর্ড’ ঘটনার মধ্যে প্রাণে বেঁচেছেন মাত্র ৪৮ জন, মোটে ২৮ শতাংশ। সেই পরিসংখ্যানে এ বাবা মেয়ের ফেরা যেন এক অলৌকিক ছোঁয়া। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অতল জলরাশিতে পড়ে গেলে শান্ত থাকা ও ফ্লোট করার কৌশল জানাটা জীবন মৃত্যুর ফারাক গড়ে দেয়।
ডিজনি ক্রুজ লাইনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমাদের ক্রুদের দক্ষতা ও দ্রুত পদক্ষেপের ফলেই দুই অতিথিকে আমরা মিনিটের মধ্যেই নিরাপদে জাহাজে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি, আমরা গর্বিত।” জাহাজের মেডিকেল সেন্টারে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর বাবা মেয়ে দু’জনই স্বাভাবিক ছিলেন; সামান্য হাইপোথারমিয়ার ঝুঁকি থাকায় তাদের রাখা হয় কম্বলে জড়িয়ে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin
কমেন্ট বক্স