হাসিনাকে প্রধান করে ৩ সিইসির বিরুদ্ধে বিএনপির মামলা
আপলোড সময় :
২২-০৬-২০২৫ ০১:৩০:১৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২২-০৬-২০২৫ ০১:৩০:১৮ অপরাহ্ন
আগের তিন জাতীয় নির্বাচনে সংবিধান লঙ্ঘন করে অনিয়মের কারণে পলাতক ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দায়িত্বে থাকা তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ দায়ের করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এরপর শেরেবাংলা নগর থানায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামা আসামি রেখে মামলা দায়ের করে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আবেদন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান (মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক) এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রোববার (২২ জুন) সকাল সোয়া ১০টার সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করেন। এসময় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. মিজানুর রহমান, মো. ইকবাল হোসেন, শরিফুল ইসলাম, নাঈম হাসান প্রমুখ।
এতে শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়াও সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্যান্য কমিশনার ও সচিবসহ ১৯ জন এবং অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে এ অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি। তবে তালিকাটি চূড়ান্ত নয়। তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান মো. সালাহউদ্দিন খান।
তিনি আরও জানান, যারা নির্বাচন পরিচালনা করেছেন সেসব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর আগে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে নির্বাচনি জালিয়াতিতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোট পরিচালনাকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে বিএনপি। মামলার আবেদনের কপি নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল প্রথমে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়।
তিনি বলেন, বিতর্কিত এই তিন নির্বাচনকে ঘিরে বারবার অভিযোগ করার পরও তৎকালীন সিইসি ও সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা আশা করি বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। আমরা বিএনপির মহাসচিবের এ সংক্রান্ত চিঠি জমা দিয়েছি। যেহেতু নির্বাচন ভবন আগারগাঁও এলাকায়, সেজন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে যান। সেই সংসদকে ‘বিনা ভোটের সংসদ’ আখ্যা দিয়ে ভোট বর্জন করা বিএনপি।
২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনের পর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ভোটের আগের রাতেই আওয়ামী লীগের পক্ষে ব্যালটে সিল মারা হয়। ফলাফলও হয় একতরফা। নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট পায় ২৮৮টি আসন।
অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র ৮টি আসন। তখনকার কে এম নূরুল হুদা কমিশন বিষয়টি জানার পরও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো ধামাচাপা দেয়। ওই কমিশনের সিইসি ছিলেন কে এম নুরুল হুদা। ওই কমিশনের নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। আরেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মারা গেছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় ও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন করে ‘আমি-ডামি ভোট’ উপাধি পায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ওই কমিশনের বেশিরভাগ কার্যক্রম নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ওই নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়। ভোটের দিন বেলা ৩টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ ভাগ ভোট পড়ে বলে জানানো হলেও এক ঘণ্টার ব্যবধানে ভোটের হার ৪০ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়।
অবশ্য ভোটের হার ঘোষণার সময় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রথমে ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলে পরে তা সংশোধন করে ৪০ শতাংশের কথা বলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হাবিবুল আউয়াল লোকচক্ষুর অন্তরালে অবস্থান করছেন। ওই কমিশনের নির্বাচন কমিশনার ছিলেন-ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, মো. আনিছুর রহমান, মো. আলমগীর ও বেগম রাশেদা সুলতানা।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিইসি, ইসি ও সচিবদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মামলার পদক্ষেপ এলো।
নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin
কমেন্ট বক্স