ঢাকা , রবিবার, ২২ জুন ২০২৫ , ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

ইরানে মার্কিন হামলা, পরিণতি কী হতে পারে

আপলোড সময় : ২২-০৬-২০২৫ ১০:৪০:৪৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ২২-০৬-২০২৫ ১০:৪০:৪৬ পূর্বাহ্ন
ইরানে মার্কিন হামলা, পরিণতি কী হতে পারে
হামলা পাল্টা হামলায় কদিন ধরেই আলোচনায় ইরান-ইসরায়েল। চারদিক যখন যুদ্ধের দামামা ঠিক তখনই এই উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের মূল পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করা হয়েছে। এ অবস্থায় এখন ইরান কি ব্যবস্থা নেয় তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার (২২ জুন) বাংলাদেশ সময় সকাল পৌন ৬টার দিকে সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে লিখেন, ‘আমরা ইরানে পারমাণবিক কেন্দ্রতে সফলভাবে হামলা সম্পন্ন করেছি। যারমধ্যে আছে ফর্দো, নাতানজ এবং ইসফাহান। (হামলায় অংশ নেওয়া) সব বিমান এখন ইরানি আকাশসীমার বাইরে রয়েছে।’

ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, মাটির ২৬২ ফুট গভীরে থাকা ফর্দো পরমাণু কেন্দ্রে ভারি বোমা ফেলেছেন তারা। হামলা চালানো বিমানগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি পুরোনো এক সতর্কবার্তা আবারও সামনে এনেছেন। শনিবার খামেনির টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রকে।

ভিডিওতে খামেনি বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে প্রবেশ করে, তবে তারা নিজেরাই ভয়াবহ ক্ষতির মুখোমুখি হবে। এই ক্ষতি হবে ইরানের ক্ষতির চেয়েও অনেক বেশি।’

খামেনির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ভিডিও বার্তাটিকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি একটি কৌশলগত বার্তা হিসেবে দেখছেন। 

এছাড়া আলজাজিরার আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পর প্রথম হুমকি এসেছে ইয়েমের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতির পক্ষ থেকে। 

গোষ্ঠীটি বলেছে, এই আঘাতের মধ্য দিয়ে ‘যুদ্ধের সূচনা’ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

হুতির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ আল-ফারাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে ট্রাম্প চান যুদ্ধ দ্রুত হোক এবং যুদ্ধের অবসান হোক। এখানে-সেখানে পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা যুদ্ধের শেষ নয় বরং এর শুরু।’

হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে, হুতির পক্ষ থেকে হুমকি দেয়া হয়েছিল যে ট্রাম্প যদি ইরান আক্রমণে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দেন তবে লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজগুলোতে আক্রমণ করবে তারা।

এর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এনবিসি নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ওয়াশিংটন ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যোগ দিলে তেহরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক অবস্থানে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে প্রস্তুত থাকবে। 

রুশ বার্তা সংস্থা তাসের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন আক্রমণ আসলে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করবে কিনা- সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন যুদ্ধ হয়, তখন উভয়পক্ষই একে অপরকে আক্রমণ করে। এটা বেশ বোধগম্য এবং আত্মরক্ষা প্রতিটি দেশের বৈধ অধিকার।’

মার্কিন হামলার পর যা বলল ইরান

পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা (এইওআই)।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এইওআই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সমালোচনা করে ‘উদাসীন’ এবং ‘এমনকি জড়িত’ বলেও সমালোচনা করেছে।

এইওআই বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই হামলার নিন্দা জানাতে এবং ইরানের সঠিক অবস্থানকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছে।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, শত্রুদের বিদ্বেষপূর্ণ পরিকল্পনা সত্ত্বেও বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা দেশের পরমাণু শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

এছাড়া এই হামলার ঘটনায় আইনি পদক্ষেপসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে এইওআই।

এদিকে ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ফোরদোতে মার্কিন হামলার পর স্থানীয় বাসিন্দারা বড় ধরনের কোনো বিস্ফোরণের লক্ষণ বুঝতে পারেনি। 

এছাড়া আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আগেই সাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

এদিকে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা চরমভাবে অসাংবিধানিক বলে জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স।

তিনি বলেন,  ‘আমি একমত। আর আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই। এই খবরটা শুধু ভীতিকরই নয়, বরং এটি চরমভাবে অসাংবিধানিক। আপনারা সবাই জানেন, কেবল মার্কিন কংগ্রেসেরই এই দেশকে যুদ্ধে পাঠানোর ক্ষমতা আছে। প্রেসিডেন্টের সেই অধিকার নেই।’

জাতিসংঘের উদ্বেগ

ইরানের মার্কিন হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

সামাজিক মাধ্যম এক্সে করা পোস্টে মহাসচিব বলেন, ইরানে মার্কিন হামলায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানের হামলা বিপজ্জনক উত্তেজনা সৃষ্টি করবে যা ইতিমধ্যে চরম অবস্থায় রয়েছে এবং এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।

তিনি আরও বলেন, এই সংঘাত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে–যার পরিণতি বেসামরিক নাগরিক, অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে উত্তেজনা কমাতে এবং জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য নিয়মের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতা বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন,  এই বিপজ্জনক সময়ে বিশৃঙ্খলা এড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক কোনো সমাধান নেই। সামনের একমাত্র পথ হলো কূটনীতি। একমাত্র আশা হলো শান্তি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ