আজকের বিশ্ববাসীর সামনে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা সৃষ্টি করেছে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাবস্থা এবং বিশেষত ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা। সম্প্রতি ইসরায়েলের একতরফা আক্রমণ ও পারমাণবিক প্রকল্পের নামে প্রতিরোধমূলক যুদ্ধের যুক্তি আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন।
ইরান ৬০% ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে—এটি সত্য। কিন্তু এটিকে ‘আসন্ন পারমাণবিক হুমকি’ বলে চিহ্নিত করা, এবং সেই অজুহাতে বিমান হামলা চালানো—এই যুক্তি যেমন ছিল সাদ্দাম হোসেনের সময়েও, তেমনই ভ্রান্ত ও বিপজ্জনক। IAEA (আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা) বলেছে: “There are no credible indications of an ongoing undeclared structured nuclear program.” অর্থাৎ, ইরানের গোপনে বোমা তৈরির কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।
আমরা ভুলে যাইনি—২০১৮ সালে যখন ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক চুক্তি (JCPoA) বাতিল করলেন, তখন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ছিল মাত্র ৩.৬৭%। আজ তা ৬০%। দায় কার? যিনি সেই চুক্তি ছিঁড়ে ফেললেন—তাঁর।
আলোচনার টেবিলে বসে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বন্ধ করে দিয়ে হামলা চালানো কেবল যুদ্ধ উসকে দেয়। এটি আত্মরক্ষা নয়, এটি রাজনৈতিক সুযোগসন্ধান। ইরান যদি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত থাকে—যেমনটি তারা ওমানে করছিল—তবে তা বোমায় থামিয়ে দেওয়া চূড়ান্ত অন্যায়।
আর একটি প্রশ্ন: কেন ইরানকে প্রতিনিয়ত সন্দেহ করা হয়, যেখানে ইসরায়েল নিজের অস্ত্রগুদাম গোপন রাখে, IAEA-এর প্রবেশ নিষিদ্ধ করে, এবং NPT-তে স্বাক্ষরই করেনি? বিশ্ব জানে—ইসরায়েলের কাছে আগে থেকেই পারমাণবিক অস্ত্র আছে। তাহলে একটি পক্ষকে নিয়মের বাইরে রেখে অন্য পক্ষকে নিয়ম মানতে বাধ্য করা—এ কেমন আন্তর্জাতিক ন্যায়নীতি?
আমরা কি চাই আরও এক ইরাক, লিবিয়া, বা সিরিয়া? নাকি চাই একটি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত, আলোচনানির্ভর, ন্যায্য ও টেকসই মধ্যপ্রাচ্য?
এ মুহূর্তে একটাই বাস্তব ও নৈতিক সমাধান—
নতুন আলোচনার টেবিলে ফেরা, দ্বিপাক্ষিক চুক্তির নবায়ন, এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ।
যুদ্ধ নয়, বরং শান্তির পথে অগ্রসর হওয়াই আমাদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা।
✍️
মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগ
শিক্ষাবিদ, গবেষক ও মিডিয়া বিশ্লেষক