লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ব্যাপারে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও আলোচনা চলছে। শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন এই প্রত্যাশায় দিন গুনছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় এবং আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের তারিখ প্রায় চূড়ান্ত হওয়ায় তার ফেরার বিষয়টি আরও জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে।

দলের অনেকের ভাষ্য, তিনি আগামী জুলাই মাসের শেষ দিকে দেশে ফিরবেন।

দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, শিগগিরই, এমনকি আগামী ৩ মাসের মধ্যে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। এমনকি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যখন ইচ্ছা দেশে ফিরতে পারবেন তারেক রহমান।

দলের একাধিক সূত্রের দাবি, তারেক রহমান নির্বাচনের অনেক আগেই দেশে ফিরবেন। জুলাই মাসের শেষ দিকে তার ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে গুলশান-২ এলাকার ফিরোজায় অবস্থান করছেন। তারেক রহমান দেশে ফিরলে প্রতিদিন তিনি ব্যস্ত সময় পার করবেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অসংখ্য নেতাকর্মীর সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার বিশ্রামে বিঘ্ন ঘটতে পারে, তাই সেখানে তিনি উঠবেন না। তারেক রহমানের জন্য ফিরোজার কাছেই একটি বাসভবন নেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে তিনি রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সেখানে তার নিরাপত্তার জন্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও বিএনপির নিজস্ব সিকিউরিটি ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে।

তারেক রহমান ২০০৭ সালের ৭ মার্চ ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়ে গ্রেফতার হন। পরের বছর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান এবং এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে গেলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তারেক রহমান। তারপর থেকে দল পরিচালনা করছেন তিনি।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে পাঁচ মামলায় সাজা দেওয়া হয় এবং প্রায় শতাধিক মামলা করা হয়। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত সব মামলায় খালাস পেয়েছেন। একই প্রক্রিয়ায় অন্য সব মামলা থেকেও মুক্ত হন এবং বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ১৭ বছর পর গত ৬ মে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান। ঢাকায় অবস্থানকালে তাকে পুরো নিরাপত্তা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দলের সিকিউরিটি ফোর্স এবং বিএনপির নেতারা। কোনোরকম অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিষয়টি তারেক রহমান দেশে ফেরার জন্য ইতিবাচক। জুবাইদা রহমান কয়েক দিন দেশে অবস্থান করে লন্ডনে ফিরে যাওয়া তারেক রহমানের দেশে ফেরার আগে পরীক্ষামূলক সফর বলা যায়।

দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে আইনগত কোনো বাধা নেই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেছেন, তারেক রহমান যখন চাইবেন ফিরতে পারবেন। এটা বিএনপির জন্য বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে একটা বড় মেসেজ। তিনি শিগগিরই ফিরবেন, তবে কবে ফিরবেন তা তিনিই নির্ধারণ করবেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সবাই নিশ্চিত করেছেন তার দ্রুত দেশে ফেরার বিষয়ে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দ্রুতই দেশে ফিরবেন।’

দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে সময় খুব বেশি নেই। প্রস্তুতির একটা বিষয় আছে। সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে। সমমনা দলগুলোর সঙ্গে, ইসির সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। এ ছাড়া নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। এসব বিবেচনায় দুয়েক মাসের মধ্যেই ফিরতে পারেন তারেক রহমান।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এখন বলতে পারি যে উনি শিগগিরই ফিরবেন ইনশাল্লাহ। দিন-তারিখ বলতে পারব না। তবে আগামী ৩ মাসের আগে দেশে ফিরবেন তিনি।

বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ড. রফিকুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের নেতা, এই বাংলাদেশের নেতা তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন। এর সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তিনি যেকোনো সময় ফিরতে পারেন। আমি মনে করি তারেক রহমানও আগামী মাসে দেশে ফিরতে পারেন। বিএনপির নেতাকর্মীসহ পুরো জাতি তার অপেক্ষায় দিন গুনছে।

তারেক রহমানের ফেরার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি যখন ইচ্ছা তখন দেশে ফিরতে পারবেন।’