ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫ , ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

যানজট নিরসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বছিলা ও ধানমন্ডি ২৭-এ ট্রাফিক পুলিশের স্বতন্ত্র উদ্যোগ

আপলোড সময় : ০১-০৬-২০২৫ ০৪:২৯:১৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০১-০৬-২০২৫ ০৪:২৯:১৩ অপরাহ্ন
যানজট নিরসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বছিলা ও ধানমন্ডি ২৭-এ ট্রাফিক পুলিশের স্বতন্ত্র উদ্যোগ
ঢাকা শহরের অন্যতম ব্যস্ত ও যানজটপ্রবণ এলাকা বছিলা ও ধানমন্ডি ২৭-এর পরিস্থিতি সম্প্রতি নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। আর এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের নেতৃত্বে গৃহীত এক ব্যতিক্রমী ও স্বতন্ত্র উদ্যোগ - ‘বছিলা ও ধানমন্ডি ২৭ ট্রাফিক প্রজেক্ট’।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, পর্যাপ্ত পরিকল্পনা, দক্ষ নেতৃত্ব এবং সদিচ্ছা থাকলে সীমিত সম্পদেও জনগণের দুর্ভোগ লাঘব সম্ভব। ২০২৫ সালের ৩মে থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদপুর জোন, তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের মোঃ আসলাম সাগর। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ- তানিয়া সুলতানা, পিপিএম, মাঠপর্যায়ে ছিলেন (টি আই) মোঃ জহিরুল ইসলাম। তারা এ মহতী উদ্যোগে দক্ষ সমন্বয় ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

বিশেষ দিকটি হলো, এই প্রকল্পে প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো সরকারি প্রকৌশল সংস্থার সহায়তা ছাড়াই ট্রাফিক বিভাগ নিজেই বাস্তব কার্যক্রম শুরু করে।

 মূল উদ্যোগ ও বাস্তবায়িত কার্যক্রম

 প্রকল্পটির আওতায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: 

 ১. অস্থায়ী মিড আইল্যান্ড স্থাপন-

 বছিলা, গাবতলি ও রায়েরবাজার সংযোগ সড়কে সিমেন্ট ব্লক ব্যবহার করে মিড আইল্যান্ড তৈরি করা হয় এর ফলে যানবাহনের গতি ও লেন ডিসিপ্লিন নিশ্চিত হয়।

 ২. জরুরি রাস্তা সংস্কার-

 ডিপিডিসি কর্তৃক খননকৃত এলাকাগুলো স্থানীয় শ্রমিক ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ করা হয়। কাদা-মাটিতে ভরা রাস্তাগুলো ইটের খোয়া ও রাবিশ দিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়।

 ৩. লেভেলিং ও সড়ক মসৃণকরণ, 

 গুরুত্বপূর্ণ উঁচু-নিচু এলাকাগুলো লেভেল করে চলাচলের উপযোগী করা হয়, বিশেষ করে বেরিবাঁধ কালভার্ট রোডে।

 ৪. পরিচ্ছন্নতা অভিযান

 বছিলা ইউটার্ন ও সংলগ্ন এলাকায় ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয়।

 ৫. স্ট্যান্ড পুনর্বিন্যাস

 সিএনজি ও ইজিবাইকের স্ট্যান্ড সামনে সরিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়, ফলে চলাচলের পথ উন্মুক্ত হয়।

 ফলাফল: দৃশ্যমান ও তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন

 বর্তমানে গাবতলী থেকে সদরঘাট বা বছিলা থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়কে যানজট প্রায় নেই বললেই চলে। আগে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতো গাড়ি, সেখানে এখন অবাধ ও দ্রুতগামী যানচলাচল হচ্ছে।

 এই পরিবর্তনের সুফল-
 
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা প্রতিবেদককে বলেন ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার, কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম স্যারের এই মহতী উদ্যোগের ফলে আমাদের কর্মঘণ্টা যেমন সাশ্রয় হয়েছে, তেমনি জ্বালানি ব্যয়ও হ্রাস হয়েছে ও যাত্রী ও চালকদের মানসিক প্রশান্তি হয়েছে। এর জন্য অত্র এলাকাবাসী ও চালক এবং উক্ত পথে যাতায়াতকারি যাত্রী-সাধারণ, ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার, মোঃ রফিকুল ইসলামকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এ এক রূপকথার গল্পের মতো বাস্তবতা, যা অনেকেই কখনোই কল্পনাও করেননি।

 চ্যালেঞ্জ: যা এখনও অতিক্রমযোগ্য নয়

 এই সাফল্যের পাশাপাশি প্রকল্পটিকে প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের—

 ভ্রাম্যমাণ দোকান ও হকারদের পুনঃস্থাপনের চেষ্টা 

 ইজিবাইক ও সিএনজি চালকদের সাথে নিয়ন্ত্রণজনিত বিরোধ 

 যত্রতত্র ময়লা ফেলার অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা 

 বর্ষায় কাদা ও গর্ত তৈরি হয়ে যান চলাচলে সমস্যা।

 ইউটার্ন এলাকায় ধুলাবালির কারণে পুলিশ সদস্যদের স্বাস্থ্যঝুঁকি,

 স্থানীয় অংশগ্রহণ: সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ের অনন্য দৃষ্টান্ত এবং 

 প্রকল্প বাস্তবায়নে বছিলা ক্লাব ও ট্যাগ সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি প্রমাণ করে, শহরের উন্নয়ন শুধু প্রশাসনের একক দায়িত্ব নয় —বরং এতে নাগরিক অংশগ্রহণ, স্থানীয় সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর যৌথ ভূমিকা অপরিহার্য।

 দ্বিতীয় প্রজেক্ট: ধানমন্ডি ২৭ বাস্তবায়নের  ফলে

ধানমন্ডি ২৭ এর পশ্চিমে বাংলাদেশ আই হাসপাতালের সামনে কোণ দিয়ে একটি বাম লেন তৈরি করা হয়েছে যার ফলে বাম লেন দিয়ে বিরতিহীনভাবে এখন গাড়ী চলাচল করতে পারছে এবং পূর্বে যেখানে ৩টি সিগন্যাল পড়তো এখন ২টি সিগন্যালে গাড়ী চলাচল করতে পারছে। যার ফলে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সাত মসজিদ এবং সাত মসজিদ থেকে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড/ ধানমন্ডি ২৭ এর পূর্বে খুব সহজেই যাওয়া যাচ্ছে। যানজট এই এলাকায় অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।

 ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুপারিশ

 যদিও এই প্রকল্প তাৎক্ষণিক সমাধান এনেছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতার জন্য এখন জরুরি— 

 সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশল সহায়তায়

 স্থায়ী সড়ক কার্পেটিং ও সিটি কর্পোরেশনের সুসমন্বিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম

 ট্রাফিক সংস্কৃতির স্থায়ী রূপদান

 বাংলাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত 

বছিলা ও ধানমন্ডি ২৭ ট্রাফিক প্রজেক্ট গুলো শুধুমাত্র যানজট নিরসনের একটি উদ্যোগ নয়, এটি বাংলাদেশ পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যেমন সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের দার উন্মোচন করেছে, তেমনি এই উদ্যোগ তাদের জন্য  অনন্য  সাফল্যও বয়ে এনেছে এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য 

 শহিদুল ইসলাম খোকন

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ