বন্ধ পাকিস্তানের আকাশসীমা, খরচ বেড়েছে ভারতের
আপলোড সময় :
৩০-০৪-২০২৫ ১২:১৬:১৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
৩০-০৪-২০২৫ ১২:১৬:১৮ অপরাহ্ন
জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এই উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। এদিকে পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ায় খরচ বেড়েছে ভারতীয় এয়ারলাইনগুলোর।
বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচল ট্র্যাকার সংস্থা ফ্লাইটর্যাডার২৪-এর ব্লগ অনুযায়ী, পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে না পারার কারণে দিল্লি থেকে উত্তর আমেরিকার শহরগুলোতে যেতে হলে মাঝপথে জ্বালানি ভরতে হচ্ছে। এয়ার ইন্ডিয়া ভিয়েনা এবং কোপেনহেগেনে রিফুয়েলিং (জ্বালানি নেওয়া) করার জন্য থামছে।
দূরত্ব বেড়ে যাওয়া এবং রিফুয়েলিংয়ের জন্য বিরতি দেওয়ার কারণে এয়ারলাইনগুলোর খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এই বাড়তি খরচের বোঝা যাত্রীদের ঘাড়েও পড়বে কিনা তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
ওয়েবসাইটটি জানিয়েছে, দিল্লি থেকে শিকাগোর এআই ১২৭ ফ্লাইটটি আগে পাকিস্তানের আকাশসীমা দিয়ে যেত। তখন ১২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে ১৪ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট লাগত। এখন পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার কারণে প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার যেতে হচ্ছে এবং এতে সময় লাগছে ১৯ ঘণ্টার বেশি।
কিছু এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট উত্তর আমেরিকা থেকে ভারতে আসার সময় ভিয়েনা বা কোপেনহেগেনে থামছে। সান ফ্রান্সিসকো থেকে দিল্লিগামী এআই ১৭৪ ফ্লাইটটি আগে ১৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে সরাসরি পৌঁছে যেত। এখন ভিয়েনাতে থামার কারণে ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।
ব্লগটিতে আরও বলা হয়েছে, আঞ্চলিক ফ্লাইটগুলোও প্রভাবিত হচ্ছে। ইনডিগো ৬ই১৮০৬ ফ্লাইটটি আগে দিল্লি থেকে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে যেতে ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিট লাগত, এখন সেটির ইরান ও তুর্কমেনিস্তানের ওপর দিয়ে যেতে ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট লাগছে।
এ বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে জানিয়েছে, উত্তর আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা কিছু ফ্লাইটের জন্য অন্য পথ ধরতে হবে।
ইনডিগো একটি ভ্রমণ নির্দেশিকায় জানিয়েছে, পাকিস্তান আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট প্রভাবিত হয়েছে।
এদিকে পেহেলগামে হামলার পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিসরি জানান, পাকিস্তানি নাগরিকেরা সার্ক ভিসা ছাড় প্রকল্পের অধীনে ভারতে আসতে পারবে না।
এদিকে ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালাতে পারে- এমন ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে পাকিস্তানের হাতে। এমন অবস্থায় ভারতের যেকোনও আগ্রাসনের পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এআরওয়াই নিউজ।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন।
এই আলাপচারিতায়দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে কাশ্মিরের পেহেলগাম হামলা ও ভারতের সাম্প্রতিক আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শেহবাজ শরিফ।
সরকারি সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, পাকিস্তান সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে এবং এই বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে দেশটি যে বিপুল ত্যাগ স্বীকার করেছে, সেটিও তিনি মহাসচিবকে স্মরণ করিয়ে দেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং পেহেলগাম হামলার ঘটনায় একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান।
তিনি বলেন, কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলনকে “সন্ত্রাসবাদ” আখ্যা দিয়ে ভারত দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। এছাড়া তিনি অভিযোগ করেন, ভারত কাশ্মিরের দখলকৃত অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ আরও বলেন, ২৪ কোটিরও বেশি মানুষের জীবননির্ভর পানিপ্রবাহকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ভারত। বিশেষ করে সিন্ধু নদের পানি চুক্তিকে একতরফাভাবে স্থগিত করার হুমকি নিয়ে তিনি তীব্র উদ্বেগ জানান।
তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবকে আহ্বান জানান ভারতকে দায়িত্বশীল আচরণে উৎসাহিত করতে এবং সংযম বজায় রাখার পরামর্শ দিতে।
শেহবাজ বলেন, ‘ভারত যদি আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়, তবে পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ড রক্ষায় পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব দেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, কাশ্মির সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা আসবে না এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের উচিত এ বিষয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া।
নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin
কমেন্ট বক্স