ঢাকা , শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ , ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

তোপের মুখে স্থগিত ওয়াক্ফ আইন

আপলোড সময় : ১৮-০৪-২০২৫ ১০:৪২:৫৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ১৮-০৪-২০২৫ ১০:৪২:৫৮ পূর্বাহ্ন
তোপের মুখে স্থগিত ওয়াক্ফ আইন
তোপের মুখে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সংশোধিত ওয়াক্ফ আইনের বিরুদ্ধে করা মামলার শুনানিতে এই আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করেছেন। 

বুধবার (১৬ এপ্রিল) থেকে এই আইনের বিরুদ্ধে করা ৭৩টি পিটিশনের শুনানি শুরু হয়। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ সংশোধিত ওয়াক্ফ আইন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইন স্থগিতের পর সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে নিশ্চিত করা হয়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ওয়াক্ফ বোর্ডে নতুন নিয়োগ বা সম্পত্তির অবস্থা পরিবর্তন করা হবে না। পুরোনো ওয়াক্ফ এবং ‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’ সম্পত্তিও আগের মতো থাকবে। তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরও দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রসঙ্গত, ‘ওয়াক্ফ বাই ইউজার’ এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধর্মীয় বা দানের কাজে ব্যবহৃত সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ হিসেবে দাবি করতে পারে। এমনকি কাগজপত্র না থাকলেও তারা এর দাবিদার। তবে, নতুন আইনে বলা হয়েছে, বিরোধপূর্ণ বা সরকারি জমিতে এটি প্রযোজ্য হবে না। 

বুধবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, দিল্লি হাইকোর্ট ওয়াক্ফ জমির ওপর। সব ওয়াক্ফ বাই ইউজার ভুল নয়।

তিনি জানান, ১৩শ, ১৪শ বা ১৫শ শতাব্দীর মসজিদের জন্য কাগজপত্র পাওয়া অসম্ভব। তিনি সরকারকে প্রশ্ন করেন, আপনারা কি বলছেন, আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত ওয়াক্ফ এখন বাতিল হবে? আইন দিয়ে আদালতের রায় বাতিল করা যায় না।

আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, হাজার বছর আগে ওয়াক্ফ তৈরি হলে এখন কাগজপত্র চাওয়া সমস্যা। আইনজীবী অভিষেক সিংভি জানান, ভারতের আট লাখ ওয়াক্ফ সম্পত্তির মধ্যে চার লাখই ওয়াক্ফ বাই ইউজার।

নতুন আইনে কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বিধান আছে। এতে মুসলিম সদস্যের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। কাউন্সিলে ২২ জনের মধ্যে ৮ জন এবং রাজ্য বোর্ডে ১১ জনের মধ্যে ৪ জন মুসলিম থাকবে। এই বিধান মুসলিম সম্প্রদায় ও বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনারা কি হিন্দু দেবোত্তর বোর্ডে মুসলিম সদস্য রাখতে দেবেন? খোলাখুলি বলুন। এছাড়া, তিনি এই আইন নিয়ে সহিংসতা ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেন।

বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন আইনের ৯ ও ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো নিয়োগ করা হবে না। এই ধারাগুলো কাউন্সিল ও বোর্ডে সদস্য নিয়োগের বিষয়ে। সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতা মামলার জবাব দেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় চান, যা আদালত মঞ্জুর করেছে। আদালত বলেছে, আবেদনকারীরা সরকারের জবাবের পর পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন।

সুপ্রিম কোর্ট ৭৩টি পিটিশনের মধ্যে পাঁচটি নিয়ে আলোচনা করবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ১০০ বা ২০০টি পিটিশন নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। বাকিগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে বলে ধরা হবে।

বুধবার আদালত সংশোধিত ওয়াক্ফ আইনের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সময় চাওয়ায় পিছিয়ে যায়। হিংসাত্মক বিক্ষোভ বন্ধ করতে স্থগিতাদেশের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।

চলতি মাসে সংসদে ওয়াক্ফ আইন সংশোধনের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, যা তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। 

তৃণমূল বলেছে, তারা এই আইন রাজ্যে কার্যকর করবে না। তবে, বিজেপি অভিযোগ করেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী নির্বাচনের আগে ‘তোষণের রাজনীতি’ করছেন।

বিরোধী দলগুলো— কংগ্রেস, আপ, ডিএমকে, সিপিআই— এই আইনের বিরোধিতা করেছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের জেডিইউ, যারা বিজেপির সঙ্গে জোটে আছে, এটির বিরোধিতা করছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিহারে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি এবং এই বছর সেখানে বিধানসভা নির্বাচন হবে। জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দ ও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মতো ধর্মীয় সংগঠনও আপত্তি জানিয়েছে। কিছু আবেদনকারী আইন বাতিলের দাবি করেছেন, অন্যরা স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

শুনানির শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করেন, তারা আইন তৈরির প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করবেন না। কারণ, সংবিধানে ক্ষমতার বিভাজন স্পষ্ট। তবে, সংবিধানের রক্ষক হিসেবে আদালত আবেদনকারীদের কথা শুনছেন। পিটিশন আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, ওয়াক্ফ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 

তিনি বলেন, কয়েক হাজার বছর আগে ওয়াক্ফ তৈরি হলেও এখন কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে। এটি বড় সমস্যা ও সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করছে। সংবিধানের এই ধারা প্রত্যেক মানুষকে স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণের অধিকার দিয়েছে।

আইনজীবী কপিল সিবাল আরও বলেন, ওয়াক্ফ বোর্ডে জেলা প্রশাসককে রাখা হয়েছে। তিনি সরকারের অংশ। তিনি ওয়াক্ফ সম্পত্তি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা অসাংবিধানিক হবে।

আদালত এখন তিনটি বিষয় বিবেচনা করছে— প্রথম, আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত ওয়াক্ফ বাই ইউজার বাতিলের সম্ভাবনা; দ্বিতীয়, কাউন্সিল ও বোর্ডে অমুসলিম সদস্যের সংখ্যা বাড়ানো; তৃতীয়, বিতর্কিত বা তদন্তাধীন সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ হিসেবে গণ্য না করা। 

প্রধান বিচারপতি বলেন, কিছু ওয়াক্ফের অপব্যবহার হয়েছে, কিন্তু অনেকগুলো আসল। এগুলোর নিবন্ধন কীভাবে হবে?

প্রসঙ্গত, ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত ওয়াক্ফ বিলে সম্মতি দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এর মধ্য দিয়ে বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে। তবে এই আইন নিয়ে শুনানিতে রাজি হয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতার পত্রিকা আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, এ আইনের সাংবিধানিক গ্রহণযোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে গত কয়েক দিনে বেশ কিছু মামলা জমা পড়েছে শীর্ষ আদালতে। এর ভিত্তিতেই আজ শুনানি হয়। এ সময় আদালত পক্ষে-বিপক্ষে অনেকের কথা শোনেন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ