ঢাকা , বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ , ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

গাজার জন্য বাংলাদেশ—ঐতিহাসিক দায় ও ঈমানি অঙ্গীকার

আপলোড সময় : ১৫-০৪-২০২৫ ১০:৪৭:৪৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৫-০৪-২০২৫ ১০:৪৭:৪৭ অপরাহ্ন
গাজার জন্য বাংলাদেশ—ঐতিহাসিক দায় ও ঈমানি অঙ্গীকার প্রতীকী ছবি

ঢাকার রাজপথে অনুষ্ঠিত “March for Gaza” কেবল একটি প্রতিবাদী পদযাত্রা ছিল না—এটি ছিল ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ঈমানদার জনগণের একটি শপথ, একটি অঙ্গীকার, একটি দৃপ্ত প্রত্যয়। এমন এক সময়ে, যখন বিশ্বশক্তি নীরব বা পক্ষপাতদুষ্ট, তখন বাংলাদেশ দাঁড়িয়েছে একটি নৈতিক ও ঈমানি অবস্থানে।

এই গণজমায়েতে ঘোষিত অঙ্গীকারনামা ছিল চার স্তরে ভাগ করা—আন্তর্জাতিক সমাজ, মুসলিম উম্মাহ, বাংলাদেশ সরকার এবং আমাদের নিজেদের প্রতি।

জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বহুদিন ধরে মানবাধিকার ও গণহত্যা রোধে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। কিন্তু গাজার ধ্বংসস্তূপে আজ সেই প্রতিশ্রুতির মৃত্যু ঘটেছে। প্রতিদিন শিশুরা মরছে, হাসপাতাল গুঁড়িয়ে যাচ্ছে, মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারাচ্ছে—তবু বিশ্ব নীরব। অনেক পশ্চিমা রাষ্ট্র এমনকি সরাসরি ইজরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ এবং কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘায়িত করছে।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক ও মানবিক। গাজায় গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করা, যুদ্ধবিরতির ধোঁয়াশা নয়—কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।

মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি আত্মপরীক্ষার সময়। গাজা কেবল একটি শহর নয়—এটি উম্মাহর মানচিত্রে ঈমানের একটি রেখা। এখানে আজ যারা মরছে, তারা কেবল ফিলিস্তিনের মানুষ নয়—তারা উম্মাহর আত্মা। ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন, বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপ, গাজার জনগণের সহায়তায় এগিয়ে আসা এবং হিন্দুত্ববাদী ভারতের মুসলিম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ—এইসব এখন কেবল কূটনৈতিক দাবি নয়, বরং ঈমানের দাবি।

বাংলাদেশ সরকারের দিকেও দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে এই অঙ্গীকারনামা। বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যমে। তাই গাজা প্রসঙ্গে সরকারের নিরবতা জনগণের ঈমানি চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। পাসপোর্টে ‘Except Israel’ শর্ত পুনর্বহাল, ইজরায়েলের সাথে থাকা সকল চুক্তি বাতিল, গাজায় ত্রাণ পাঠানোর উদ্যোগ, জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশ এবং পাঠ্যবইয়ে আল-আকসা ও ফিলিস্তিনের সংগ্রামী ইতিহাস সংযোজন—এসবই আজ ইতিহাসের সামনে বাংলাদেশের কর্তব্য।

সবশেষে, এই অঙ্গীকারনামা নিজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দেয়। গাজা কেবল আমাদের দো‘আ চায় না—গাজা আমাদের প্রস্তুতি চায়। আমাদের সন্তানদের ঈমান, কুরবানী ও দায়িত্ববোধে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ঘর, সমাজ, ভাষা, সংস্কৃতি, শিক্ষা—সবখানে এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে।

আজ যারা শহীদ হচ্ছেন—তাঁদের চোখে ছিল প্রতিরোধের অগ্নিশিখা। তাঁদের রক্তের ঋণ আমাদের ঈমানি দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের পক্ষে গাজার পক্ষে দাঁড়ানো কোনো রাজনৈতিক স্ট্যান্স নয়—এটি আমাদের ঈমানের প্রমাণ। গাজা আমাদের আয়না, আর এই আয়নায় যেন আমরা নিজের সাহস, দায়িত্ব আর ঐক্যকে দেখতে পাই।

হে আল্লাহ, গাজার সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানিয়ে দাও, যার উপর গিয়ে ভেঙে পড়বে জায়োনিস্টদের সব ষড়যন্ত্র।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ