ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের সাথে ফলপ্রসূ আলাপ হয়েছে: ট্রাম্প
আপলোড সময় :
১৫-০৩-২০২৫ ০১:৫০:০৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৫-০৩-২০২৫ ০১:৫০:০৮ অপরাহ্ন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে 'ভালো এবং ফলপ্রসূ' আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই দিয়েছিলো।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মস্কোতে ভ্লাদিমির পুতিন ও বিশেষ মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে বৈঠকের পর ক্রেমলিন বলেছে যে তারা শান্তি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলাপ করেছে। রাশিয়া জানিয়েছে, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের মতো আশাবাদী, তবে 'সতর্কভাবে'।
এরপরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তরফ থেকে ওই মন্তব্য এলো।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে লেখেন, "এই ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান হওয়ার খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।"
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন যে, ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছেন।
আর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে "খেলতে" দেয়া যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদ জানালেও ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্য যুদ্ধের বিষয়ে এখনো অনেক অমীমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে। ইউক্রেনের অনেক এলাকা যেমন রাশিয়ার দখলে রয়েছে, তেমনি কুরস্ক অঞ্চলের রাশিয়ার কিছু এলাকা ইউক্রেনের সৈন্যরা দখল করে রেখেছে।
ফলে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনো পুরোপুরি আশাবাদী হতে পারছেন না বিশ্লেষকরা।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে ইউক্রেন মার্কিন প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নেয়ার কথা জানিয়েছে। তবে রাশিয়া এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এটি গ্রহণ করেনি।
বৃহস্পতিবার ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন যে যুদ্ধবিরতির ধারণাটি "সঠিক এবং আমরা এটিকে সমর্থন করি... তবে এখানে কিছু সূক্ষ্ম বিষয় আছে"।
ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর জন্য তিনি বেশ কিছু কঠিন শর্ত দিয়েছেন এবং তার প্রতিক্রিয়ায় মি. জেলেনস্কি আবার এটিকে "ধুর্ততা" বলে অভিহিত করেছেন।
শুক্রবার মি. জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) একাধিক পোস্ট দেন।
পোস্টগুলোতে তিনি সমালোচনা অব্যাহত রাখেন এবং লেখেন, "ভ্লাদিমির পুতিন এই যুদ্ধ থেকে সরে আসতে পারবেন না। কারণ এটি তাকে কিছুই দিবে না।"
"এ কারণেই তিনি এখন কূটনীতিকে ব্যর্থ করতে যুদ্ধবিরতির আগেই চরম কঠিন ও অগ্রহণযোগ্য শর্ত আরোপ করছেন," বলেন তিনি।
তার মতে, মি. পুতিন সবার সাথে অনন্তকাল ধরে আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
"তিনি এদিকে দিন, সপ্তাহ, মাস ধরে অর্থহীন আলোচনা করবেন। ওদিকে তার সৈন্যরা মানুষ হত্যা চালাতে থাকবে।"
"পুতিনের দেওয়া প্রতিটি শর্তই কূটনীতিকে ব্যাহত করার একটি চেষ্টা। এভাবেই রাশিয়া কাজ করে এবং আমরা এটি সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক করেছি," বলেন মি. জেলেনস্কি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের ব্যাপারে ক্রেমলিনের "উপেক্ষা" প্রমাণ করে যে মি. পুতিন "শান্তি প্রক্রিয়ার বিষয়ে সিরিয়াস না।"
"রাশিয়া যদি শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে আসে, তাহলে আমাদেরকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। আর যদি না আসে, তাহলে যুদ্ধ বন্ধ করতে আমাদেরকে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়াতে হবে," বলেন তিনি।
কিছুদিন আগে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে যে শান্তিরক্ষী মিশন নিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেই বিষয়ে আলোচনা করার জন্য মি. স্টারমার ২৫ জনের মতো নেতার সাথে ভিডিও কলে কথা বলবেন আজ।
এটিকে তিনি "ইচ্ছুকদের জোট" বলে অভিহিত করেছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্র-প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে কাজ করবে।
যারা রাশিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাদের প্রত্যেককে যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মি. জেলেনস্কি। কারণ পুতিন স্বেচ্ছায় যুদ্ধ থামাবেন না বলে তিনি মনে করেন।
শুক্রবার এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেছেন, "পুতিন যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতি, নিহতদের সংখ্যা এবং তার অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে মিথ্যা বলছেন" এবং মি. পুতিন "কূটনীতিকে ব্যর্থ করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করছেন।"
তবে হোয়াইট হাউজ বিশ্বাস করে যে দুই পক্ষ "এর আগে কখনও শান্তির এত কাছে ছিল না।"
সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, বৃহস্পতিবার মস্কোতে মি. পুতিন ও মি. উইটকফের মধ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মি. ট্রাম্প "পুতিন এবং রাশিয়ানদের সঠিক কাজটি করতে চাপ দিচ্ছেন।"
এদিকে মি. ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে "জোরালোভাবে অনুরোধ" করেছেন যে ভ্লাদিমির পুতিন যেন রুশ বাহিনীর দ্বারা বেষ্টিত ইউক্রেনীয় সেনাদের জীবন রক্ষা করেন।
রাশিয়ার ভেতরে কুরস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকা ইউক্রেনের সৈন্যরা ছয় মাস ধরে রেখেছে। এখন ওই সৈন্যদের ঘেরাও করে রেখেছে রাশিয়ান বাহিনী। তাদের হয় 'আত্মসমপর্ণ অথবা মৃত্যু' পথ খোলা আছে বলে জানিয়েছেন পুতিন।
সেখানে হত্যাকাণ্ড চালানো হলে সেটা "দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড" হবে বলে বর্ণনা করেছেন ট্রাম্প।
রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করে এবং এখন তারা দেশটির ২০ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে।
যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হয়ে লড়াই করা ৯৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে।
ইউক্রেন সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাদের হতাহতের পরিসংখ্যান জানিয়েছিল। তখন ভলোদিমির জেলেনস্কি সেনা ও সামরিক কর্মকর্তাসহ ৪৩ হাজার মানুষের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছিলেন। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করেন এই সংখ্যা হয়তো আরও বেশি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin
কমেন্ট বক্স