ঢাকা , সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ , ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

ছাত্রদল, শিবির ও এনসিপির আয়ের উৎস কী?

আপলোড সময় : ১০-০৩-২০২৫ ১১:০১:০২ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ১০-০৩-২০২৫ ১১:০১:০২ পূর্বাহ্ন
ছাত্রদল, শিবির ও এনসিপির আয়ের উৎস কী?
দেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে এবার এক নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে— অর্থের উৎস নিয়ে। বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ও জামায়াতের ছাত্রশিবির একে অপরের ফান্ডিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এদিকে, গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র নেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অর্থের উৎস নিয়েও চলছে আলোচনা। এই বিতর্ক এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুনামি তৈরি করেছে।

সম্প্রতি, ছাত্র শিবির এবং এনসিপির আয়ের উৎস নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে প্রশ্ন তোলেন। এর পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

এদিকে, বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগও উঠেছে। একই ধরনের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেও উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে, ছাত্রদল অভিযোগকে ‘অপরিপক্ক’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং ছাত্রশিবিরও তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনেছে। এছাড়া, গণ অভ্যুত্থান নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন দল এনসিপি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ ছিল, কিন্তু ৫ আগস্টের পর ক্ষমতার পালাবদলে রাজনৈতিক চেহারা বদলালেও চাঁদাবাজির চিত্র বদলায়নি। অভিযোগ পাল্টাপাল্টি হলেও ছাত্রদের সংগঠনের আয়-ব্যয়ের তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হয়নি, এবং কীভাবে বিপুল অর্থ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি চালানো হচ্ছে তা জানানো হয়নি।

ছাত্রদলের অর্থের উৎস

ছাত্রদলের কর্মসূচি পরিচালনার সময় তার আয়-ব্যয়ের উৎস নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠেছে। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ছাত্রদল কর্মসূচি চালাতে পারলেও প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারেনি, কারণ ছাত্রলীগের দাপটে তারা কর্মসূচি পরিচালনা করতে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। সে সময় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, তদবির এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল। পরে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পরিবর্তনের পর ছাত্রদল আবারও ক্যাম্পাসগুলোতে প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করে। এরপর, দেশে বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর, ছাত্রদল জানিয়েছে, তাদের সবচেয়ে বড় খরচ হচ্ছে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এই চিকিৎসার খরচ বহনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ছাত্রদল বলছে— মূল খরচটা তারা নিজেদের পক্ষ থেকেই বহন করছে। এ অর্থ বরাদ্দ আসছে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গঠিত ‘বিএনপি পরিবার’ নামের একটি সংগঠন থেকে।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা বড় বাজেটের কোনো আয়োজন করতে পারছে না। তারা স্বল্প পরিসরে ছোটখাটো আয়োজন করছে, এবং সাবেক নেতারা তাদের ব্যক্তিগতভাবে অর্থ খরচ করছেন। তবে, ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ওঠা চাঁদাবাজির অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের অপকর্মের সাথে তাদের ছোট ভুলগুলো তুলনা করা হচ্ছে।

ছাত্রশিবিরের অর্থের উৎস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারা ছাত্রশিবির, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর আবারও প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করেছে। সম্প্রতি, ছাত্রশিবিরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার বিতরণের মতো বড় আয়োজন করতে দেখা গেছে। ছাত্রদল, শিবিরের এই আয়-ব্যয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, এবং তারা দাবি করেছে— ছাত্রশিবির প্রতিদিন ৩ লাখ টাকা ইফতারে ব্যয় করছে, তাহলে তারা ৯০ লাখ টাকা কীভাবে উপার্জন করছে?

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। তিনি জানান, ছাত্রদলের ধারণা সঠিক নয়। তারমতে— তারা প্রতিদিন ৩ লাখ টাকা খরচ করছে না, বরং ৩০ দিন ইফতার আয়োজনের জন্য ৯০ লাখ টাকা খরচ হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। সাদ্দাম আরও বলেন, শিবিরের সদস্যরা স্বেচ্ছায় সংগঠনে দান করেন এবং সংগঠনটির প্রাক্তন সদস্যরা বিভিন্ন অংকে সংগঠনে এয়ানত দিয়ে থাকেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির অর্থের উৎস

গণ অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতাদের নতুন দল, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের আত্মপ্রকাশের দিন ঢাকায় বিশাল সমাবেশ আয়োজন করেছে। ছাত্রদল এই সমাবেশের খরচের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, কারণ সমাবেশে নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাড়া করে অংশ নিয়েছিলেন।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তারা অর্থের উৎস প্রকাশ করতে চান না, কারণ এতে তাদের সমর্থকদের ক্ষতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, তাদের দল অনেক তরুণ পেশাজীবী সদস্যদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ করে।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ

গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের আরেকটি অংশ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নামে একটি নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা ইফতার আয়োজনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। সংগঠনটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম জানান, তারা নিজের অর্থে ইফতার আয়োজন করছেন।

এদিকে, গণ অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও উঠেছে। এর মধ্যে রংপুরের এক নেতার ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এর আগে, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর একজন নেতার বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্র সংগঠনগুলো দেশের প্রচলিত রাজনীতির মতোই কাজ করছে। পট পরিবর্তন হলেও, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়নি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু চাঁদাবাজি সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়নি।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রয়োজন, এবং আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। সূত্র: বিবিসি

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ