ঢাকা , রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫ , ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

অর্থপাচার মামলায় আপিলে খালাস তারেক ও মামুন

আপলোড সময় : ০৬-০৩-২০২৫ ০২:৩৩:১৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৬-০৩-২০২৫ ০২:৩৩:১৭ অপরাহ্ন
অর্থপাচার মামলায় আপিলে খালাস তারেক ও মামুন
অর্থপাচারের মামলায় দণ্ডিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে খালাস দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মামুনের করা আপিল মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়।

রায় ঘোষণার সময় আপিলকারীর পক্ষে আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৭ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ না করায় এ মামলায় আপিলের সুযোগ পাননি। তারপরও আদালত মামুনের পাশাপাশি তারেক রহমানকে অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে বলে জানান আইনজীবী জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, “জনাব তরেক রহমানকে হাই কোর্ট যে সাত বছর সাজা এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল, তা থেকে উনাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”

এর কারণ ব্যাখ্যা করে এ আইনজীবী বলেন, “আপিল বিভাগ সাক্ষী পর্যালোচনায় মামলার বিষয়াদি আলোচনা করে মামলার কোনো ইনগ্র্যাডিয়েন্ট না পাওয়ায় উনাকে (তারেক রহমান) এ মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উনার যে অবস্থান এবং সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে, সেটাকে ফেরত দিতে বলা হয়েছে।”

ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর দায়ের করা এ মামলায় তারেক-মামুনের বিচার শুরু হয় ২০১১ সালের ৬ জুলাই। এর আগে ২০১০ সালের ৬ জুলাই তাদের দুইজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ঘুষ হিসেবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে করা হয় সেখানে।

তারেককে সাজা দেওয়ার বিষয়ে অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন বলেন, “সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংক থেকে তারেক রহমানের নামে একটি ভিসা সাপ্লিমেন্টারি ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল। সেই কার্ড দিয়ে উনি একটা বিমানের টিকেট কেটেছেন এবং কিছু চিকিৎসার টাকা খরচ করেছেন। এটাকে মানি লন্ডারিংয়ের পর্যায়ে ফেলেছে; যদিও মানিলন্ডারিংয়ের যে বিধান আছে, তাতে মানি লন্ডারিংয়ে পড়ে না; মোটামুটি বলতে পারেন যে গায়ের জোরে তারেক রহমানকে একটা সাজা দেওয়া হয়েছে।”

অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, “আপিল বিভাগ নির্দোষ সাব্যস্তে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে খালাস দিয়েছেন। আর তারেক রহমান সাহেব যদিও এ মামলায় আপিল করতে পারেননি, আমরা আমাদের সুপ্রিম কোর্ট এবং ইন্ডিয়ান এবং পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন জাজমেন্ট থেকে দেখিয়েছি, যদি মামলার প্রিন্সিপাল একিউসডের বিরুদ্ধে প্রমাণ না হয়, যদি মামলায় দেখা যায় যে এটা ইনটেনশনালি করা হয়েছে, হেরাসমেন্ট করার জন্য, হিউমিলিয়েট করার জন্য – এ মামলায় সাজা দেওয়ার মত কিছু নাই, সেক্ষেত্রে কেউ যদি আপিল নাও করে, কোর্ট ইচ্ছা করলে এ খালাসের যে বেনিফিট তাকেও দিতে পারে।

“এটা আমাদের সাইটেশান ছিল এবং এটা আমরা দেখিয়েছি; অনারেবল চিফ জাস্টিস এবং অন্য বিচারকরা যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা আমাদের এই কনটেনশনটা একসেপ্ট করেছেন। অর্থাৎ তারেক রহমানও এই বেনিফিট পাবেন। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে জনাব তারেক রহমানও নির্দোষ সাব্যস্তে খালাস পেয়েছেন।”

ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায়ে তারেককে বেকসুর খালাস দেন। আর গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে দেওয়া হয় সাত বছর কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকার অর্থদণ্ড।

তারেকের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে দুদক ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর আপিলের আবেদন করে। শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি হাই কোর্ট দুদকের আপিল গ্রহণ করে তারেককে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়।

২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দেয় হাই কোর্ট।

সেই সঙ্গে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের কারাদণ্ডও বহাল রাখা হয়। তবে তাকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড পরিবর্তন করে ২০ কোটি টাকা করা হয়।

তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আইনি পদক্ষেপ নেন তারেক রহমানের আইনজীবীরা। গিয়াস উদ্দিন আল মামুনও খালাস চেয়ে আপিলের অনুমতি চান।

শুনানি শেষে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সাজা ও জরিমানা স্থগিত করে আপিলের অনুমতি দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ আমলে তার বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৪০টি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ