ঢাকা , বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ , ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

রমজানে মা-বাবার খেদমত অন্যতম ইবাদত

আপলোড সময় : ০৩-০৩-২০২৫ ১০:৫৭:১৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৩-০৩-২০২৫ ১০:৫৭:১৮ অপরাহ্ন
রমজানে মা-বাবার খেদমত অন্যতম ইবাদত
পিতা-মাতার খেদমতের মাধ্যমে মানুষ জান্নাত লাভ করে। রমজান যেমন নাজাতের মাধ্যম, পিতা-মাতা তেমনি জান্নাতের বাহন। যারা পিতা-মাতার খেদমত থেকে বঞ্চিত হলো, তারা আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে বঞ্চিত হলো।

রমজান মাস ইবাদতের মাস, পিতা-মাতার খেদমত অন্যতম ইবাদত। মিরাজ রজনীতে নামাজ ও রোজা ফরজ হয় এবং মিরাজের ১৪টি সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রথম হলো আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা ও দ্বিতীয় হলো পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)।

‘আর আমি নির্দেশ দিয়েছি মানুষকে, তার পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)।

‘রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’ কেউ কেউ মনে করেন, রহমতের এ দোয়াটি মৃত মা-বাবার জন্য। দোয়াটির অর্থ হচ্ছে, ‘আমার প্রতিপালক! বাবা-মায়ের ওপর দয়া করো, যেভাবে ছেলেবেলায় বাবা-মা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।’

মা-বাবার জীবিত থাকা অবস্থায়ও এই দোয়াটি পড়া যায়। মূলত ইসলাম মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন। তোমার জীবদ্দশায় ওঁদের একজন বা দুজনই বার্ধক্যে পৌঁছালেও তাঁদের ব্যাপারে “উহ-আহ্” বোলো না, আর ওঁদের অবজ্ঞা কোরো না, ওঁদের সঙ্গে সম্মান করে নম্রভাবে কথা বলবে। তুমি অনুকম্পার সঙ্গে, বিনয়ের ডানা নামাবে, আর বলবে, হে আমার প্রতিপালক! ওঁদের ওপর দয়া করো, যেভাবে ছেলেবেলায় ওঁরা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪)

সব অবস্থায় মা-বাবার সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এক লোক এসে প্রশ্ন করলেন, আমার কাছ থেকে সবচেয়ে ভালো আচরণ পাওয়ার অধিকার কার? নবী করিম (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি আবার প্রশ্ন করলে তিনি একই উত্তর দেন। তিন-তিনবার এমন উত্তর দেওয়ার পর লোকটি আবার একই প্রশ্ন করেন। নবী করিম (সা.) বলেন, তোমার বাবার। (বুখারি, হাদিস, হাদিস: ২,২২৭)

কোরআনে আছে, আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে (ভালো ব্যবহারের) নির্দেশ দিয়েছি। কষ্টের পর কষ্ট করে জননী সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে, আর তার দুধ ছাড়াতে ছাড়াতে দুই বছর লেগে যায়। তাই আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার ওপর কৃতজ্ঞ হও। আমার কাছেই তো প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (সুরা লুকমান, আয়াত: ১৪)

কোরআনে আরও আছে, ‘আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি, তবে ওরা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরিক করতে বাধ্য করে, যার সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মানবে না। আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন (করতে হবে)। তারপর তোমরা ভালোমন্দ যা কিছু করেছ, আমি তা তোমাদের জানিয়ে দেব।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাতা-পিতার রাজি-খুশির মধ্যেই আল্লাহর রাজি-খুশি। মাতা-পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’ (সুনানে তিরমিজি)

অন্য একটি হাদিসে আছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। তা হলো ক. মজলুমের দোয়া, খ. মুসাফিরের দোয়া এবং গ. সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া।’ (সুনানে তিরমিজি)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বাবা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। এখন তোমাদের ইচ্ছা, এর হেফাজত করো অথবা একে নষ্ট করে দাও।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১,৯০১)

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, কোন আমল মহান আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়? রাসুল (সা.) বললেন, সময়মতো নামাজ আদায় করা। তিনি বললেন, তারপর কোন কাজ? তিনি বললেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। তিনি বললেন, তারপর? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (বুখারি, হাদিস: ৫,৯৭০)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তোমার বাবা-মা কি জীবিত? সে বলল, হ্যাঁ। রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি তাদের খেদমতে জিহাদ করো।’ (মুসলিম, হাদিস: ২,৫৪৯)

তিনটি জিনিস দেখলে সওয়াব হয়। যথা: কাবা শরিফ, কোরআন শরিফ ও পিতা-মাতার চেহারা। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যখন কোনো সন্তান স্বীয় পিতা-মাতার প্রতি অনুগ্রহের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।’ (বায়হাকি)।

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ