ঢাকা ১০:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন “বাংলাদেশের হিট অফিসার কী করছেন? হিট নিয়ন্ত্রণে “ অগ্নিকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে অনুদানের নগদ অর্থ সহায়তায়: আ জ ম নাসির “স্মার্ট সুদহারে বিপাকে ব্যবসায়ীরা ঢাকা মতিঝিলে ইসতেস্কার নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

একজন ফরিদ উদ্দিন আলো ছড়ানো কারিগর নিজেই আছেন অন্ধকারে!

মোহাম্মদ রফিক, কুুষ্টিয়া:  ছবির ওই মানুষটির নাম ফরিদ উদ্দিন (৫৭)। পিতার নাম মৃত আলহাজ্ব মকছেদ আলী। মাতার নাম লুৎফুন নেছা। বাড়ী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের আমকাঁঠালিয়া গ্রামে।
মানুষটির ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একদিন শিক্ষক হবেন। সমাজের অবহেলিত,পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করবেন। হাঁটছিলেনও সে পথেই। শিক্ষাজীবন শেষ করে সে মোতাবেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ভাইভাতে অংশ নেননি।
উত্তরা ব্যাংক লিঃ এর অফিসার পদে চাকুরী হলেও জন্মস্থান এলাকা ছাড়বেন না তাই তিনি যোগ দেননি।
১৯৯২ সালে উপজেলার বলিদাপাড়া বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেলে তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এক বছর চাকুরী করার পর বৈচিত্রে বিশ্বাসী ফরিদ উদ্দীন চাকুরী থেকে ইস্তফা দেন।
১৯৯৩ সালে ফরিদ উদ্দিন উপজেলার হালসা আদর্শ কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসাবে যোগদেন। একই সাথে নিজ এলাকায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠায় সকল শ্রেণী পেশার নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গের সাথে মতবিনীময় চলতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০০০ সালে ফরিদ উদ্দিনকে অধ্যক্ষ করে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের পাশেই মিরপুর উপজেলাস্থ বারুইপাড়া ইউনিয়নের জিকের পরিত্যাক্ত জমিতে গড়ে তোলা হয় ” নবাব সিরাজ উদ্দৌলা কলেজ।
নন এমপিও নবাব সিরাজ উদ্দৌলা কলেজের অধ্যক্ষ ও এমপিওভুক্ত হালসা আদর্শ কলেজের প্রভাষক হিসাবে চলতে থাকে ফরিদ উদ্দিনের ব্যাস্ততা।
এক পর্যায়ে নবাব কলেজ এমপিওভুক্ত হবে এমন আশ্বাসে এমপিওভুক্ত হালসা কলেজ থেকে ২০০৪ সালে ১১ বছরের শিক্ষকতাকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন। সে আশায় গুড়েবালী হয়। নবাব কলেজ এমপিওভুক্ত হবে হচ্ছে করে সময় গড়াতে থাকে। বিএনপি,তত্বাবধায়ক, আওয়ামীলীগের পর আবার দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামীলীগ ক্ষমতাসীন হলেও কেউ কথা না রাখায় অব্যাহত ভাল ফলাফল করেও প্রতিষ্ঠার ১৮ বছরেও নবাব সিরাজ উদ্দৌলা কলেজ এমপিওভুক্ত হয়নি। এই কলেজে অধ্যায়ন করে অনেক শিক্ষার্থী ভাল ফলাফল নিয়ে পাশ করে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। অথচ সেই কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীনসহ ২৪ জন শিক্ষক কর্মচারী দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বেতনহীন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
উল্লেখ্য,  ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার বড় ফরিদ উদ্দিন ১ম-৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত নানাবাড়ী নওপাড়া থেকে নওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার গোড়াপত্তন। ৫ম শ্রেণী পাশ করেন ছত্রগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ছত্রগাছা এজিএম(আব্দুল জব্বার মেমোরিয়াল) জুনিয়র হাইস্কুলে। এরপর মিরপুর হাইস্কুল। মিরপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৭৯ সালে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে ১৯৮১ সালে  এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে অনার্সসহ মাষ্টার্স শেষ করেন।
Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন

একজন ফরিদ উদ্দিন আলো ছড়ানো কারিগর নিজেই আছেন অন্ধকারে!

আপডেট টাইম ০১:৩১:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
মোহাম্মদ রফিক, কুুষ্টিয়া:  ছবির ওই মানুষটির নাম ফরিদ উদ্দিন (৫৭)। পিতার নাম মৃত আলহাজ্ব মকছেদ আলী। মাতার নাম লুৎফুন নেছা। বাড়ী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের আমকাঁঠালিয়া গ্রামে।
আরো পড়ুন : কুষ্টিয়ায় এক শিশুকে গরম পানিতে ঝলসে দেয়ায় ১৪ বছরের কারাদণ্ড
মানুষটির ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একদিন শিক্ষক হবেন। সমাজের অবহেলিত,পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করবেন। হাঁটছিলেনও সে পথেই। শিক্ষাজীবন শেষ করে সে মোতাবেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ভাইভাতে অংশ নেননি।
উত্তরা ব্যাংক লিঃ এর অফিসার পদে চাকুরী হলেও জন্মস্থান এলাকা ছাড়বেন না তাই তিনি যোগ দেননি।
১৯৯২ সালে উপজেলার বলিদাপাড়া বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেলে তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। এক বছর চাকুরী করার পর বৈচিত্রে বিশ্বাসী ফরিদ উদ্দীন চাকুরী থেকে ইস্তফা দেন।
১৯৯৩ সালে ফরিদ উদ্দিন উপজেলার হালসা আদর্শ কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসাবে যোগদেন। একই সাথে নিজ এলাকায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠায় সকল শ্রেণী পেশার নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গের সাথে মতবিনীময় চলতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০০০ সালে ফরিদ উদ্দিনকে অধ্যক্ষ করে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের পাশেই মিরপুর উপজেলাস্থ বারুইপাড়া ইউনিয়নের জিকের পরিত্যাক্ত জমিতে গড়ে তোলা হয় ” নবাব সিরাজ উদ্দৌলা কলেজ।
নন এমপিও নবাব সিরাজ উদ্দৌলা কলেজের অধ্যক্ষ ও এমপিওভুক্ত হালসা আদর্শ কলেজের প্রভাষক হিসাবে চলতে থাকে ফরিদ উদ্দিনের ব্যাস্ততা।
এক পর্যায়ে নবাব কলেজ এমপিওভুক্ত হবে এমন আশ্বাসে এমপিওভুক্ত হালসা কলেজ থেকে ২০০৪ সালে ১১ বছরের শিক্ষকতাকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন। সে আশায় গুড়েবালী হয়। নবাব কলেজ এমপিওভুক্ত হবে হচ্ছে করে সময় গড়াতে থাকে। বিএনপি,তত্বাবধায়ক, আওয়ামীলীগের পর আবার দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামীলীগ ক্ষমতাসীন হলেও কেউ কথা না রাখায় অব্যাহত ভাল ফলাফল করেও প্রতিষ্ঠার ১৮ বছরেও নবাব সিরাজ উদ্দৌলা কলেজ এমপিওভুক্ত হয়নি। এই কলেজে অধ্যায়ন করে অনেক শিক্ষার্থী ভাল ফলাফল নিয়ে পাশ করে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। অথচ সেই কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীনসহ ২৪ জন শিক্ষক কর্মচারী দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বেতনহীন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
উল্লেখ্য,  ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে সবার বড় ফরিদ উদ্দিন ১ম-৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত নানাবাড়ী নওপাড়া থেকে নওপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার গোড়াপত্তন। ৫ম শ্রেণী পাশ করেন ছত্রগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ছত্রগাছা এজিএম(আব্দুল জব্বার মেমোরিয়াল) জুনিয়র হাইস্কুলে। এরপর মিরপুর হাইস্কুল। মিরপুর হাইস্কুল থেকে ১৯৭৯ সালে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে ১৯৮১ সালে  এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে অনার্সসহ মাষ্টার্স শেষ করেন।