ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

সন্তানের পেশা বেছে নেওয়ার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা কিভাবে দেবেন

মার্তৃভূমির খবর ডিজিটাল ডেস্ক
আপলোড সময় : ২৬-১০-২০২৪ ১০:৩২:০৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৬-১০-২০২৪ ১০:৩২:০৩ অপরাহ্ন
সন্তানের পেশা বেছে নেওয়ার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা কিভাবে দেবেন প্রতীকী ছবি

মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগ: সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা প্রতিটি পিতামাতার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে, সন্তানদের ক্যারিয়ার পছন্দের ব্যাপারে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় দ্বিধায় পড়ে যাই। "তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?" — এই প্রশ্নটি সহজ মনে হলেও, আসলে এটি নিয়ে গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। এর উত্তরে শুধু একটি পেশা নির্বাচনই যথেষ্ট নয়; বরং সন্তানের আগ্রহ, দক্ষতা, এবং মূল্যবোধের সাথে মিলিয়ে পেশা নির্বাচনই সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে।


এখানে বয়স অনুযায়ী কীভাবে আপনার সন্তানকে তার ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করতে পারেন, সেই সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হলো:

শৈশব (৫-১০ বছর): কল্পনা এবং আগ্রহের বিকাশ
এই বয়সে শিশুদের কল্পনাশক্তি প্রবল থাকে এবং তারা যেকোনো নতুন জিনিস সম্পর্কে খুবই কৌতূহলী থাকে। ছোট বয়সে তাদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার সুযোগ দিন এবং বিভিন্ন কাজ করার অভিজ্ঞতা দিন, যাতে তারা তাদের আগ্রহ ও মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে, তাদের সাথে মজার ও অনুপ্রেরণামূলক প্রশ্ন করুন, যেমন: "তুমি কোন জিনিসটি সবচেয়ে বেশি ভালোবাস?" বা "তুমি কীভাবে অন্যদের সাহায্য করতে চাও?"
 

কীভাবে সাহায্য করবেন:

  • বিভিন্ন ভূমিকা নিয়ে খেলা: খেলাধুলা, আঁকাআঁকি, কবিতা বা অন্য যে কোনো সৃজনশীল কার্যকলাপের মাধ্যমে তাদের আগ্রহ খুঁজে বের করতে সহায়তা করুন।
  • বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুযোগ দিন: প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ, রান্নার ছোট্ট প্রকল্প বা ঐতিহাসিক যায়গা, শিশু পার্ক বা জাদুঘর ভ্রমণের মাধ্যমে তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে উৎসাহিত করুন।
  • কৌতূহল উদ্দীপনা: তাদের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করুন, যা তাদের আগ্রহের জায়গাকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।

 

মধ্যশৈশব (১০-১৪ বছর): আগ্রহ এবং দক্ষতার বিকাশ
এই বয়সে শিশুরা ধীরে ধীরে তাদের নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে গভীর আগ্রহ প্রদর্শন করতে শুরু করে। এটা সেই সময়, যখন তাদের আগ্রহ এবং শক্তির দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন। তাদের শিখানোর সময় বাস্তবজীবনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করুন, যাতে তারা বুঝতে পারে কোন বিষয়গুলো ভবিষ্যতে তাদের জন্য উপকারী হতে পারে।
 

কীভাবে সাহায্য করবেন:

  • শক্তি এবং আগ্রহ খুঁজে বের করুন: সন্তানের স্কুলের বিষয়গুলোর মধ্যে কোনটা তারা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে, তা খুঁজে বের করুন এবং সেই বিষয়ে তাদের আরও উৎসাহিত করুন।
  • প্রেরণাদায়ক ব্যক্তিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন: সফল পেশাদারদের উদাহরণ তুলে ধরে তাদের ভবিষ্যত পেশার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সচেতন করুন।
  • পর্যালোচনামূলক চিন্তা শেখান: তাদেরকে শেখান কীভাবে স্কুলের বিষয়গুলো বাস্তবজীবনের পেশার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, যেমন গণিত কীভাবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাথে যুক্ত, বা চারুকলা কীভাবে ডিজাইনের সাথে সম্পর্কিত।

 

কৈশোর (১৫-১৮ বছর): বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন
এই সময়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যখন সন্তানের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তা করা শুরু করা উচিত। তাদের বিভিন্ন পেশার বাস্তব অভিজ্ঞতা দেওয়ার চেষ্টা করুন, যেমন ইন্টার্নশিপ বা পার্ট-টাইম কাজ। এর মাধ্যমে তারা বুঝতে পারবে কোন কাজটি তাদের আগ্রহের সাথে সবচেয়ে বেশি মেলে এবং তাদের ভবিষ্যত পেশার জন্য কী ধরনের দক্ষতা দরকার।
 

কীভাবে সাহায্য করবেন:

  • লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করুন: তাদের ক্যারিয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে চিন্তা করতে সাহায্য করুন এবং কীভাবে সেই লক্ষ্য পূরণ করা যাবে, সেই সম্পর্কে পরিকল্পনা করতে সহায়তা করুন।
  • ইন্টার্নশিপ বা বাস্তব অভিজ্ঞতা উৎসাহিত করুন: বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতা তাদের জন্য অনেক বড় শিক্ষার মাধ্যম হতে পারে।
  • উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বোঝান: ক্যারিয়ারের লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা বা বিশেষ প্রশিক্ষণ কতটা প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনা করুন।

 

মাধ্যমিকের পর (১৮+ বছর): সঠিক দিকনির্দেশনা
যখন আপনার সন্তান স্কুল শেষ করে, তখন তাদের ক্যারিয়ার পছন্দের ব্যাপারে আরও পরিণত পরামর্শ দিন। কলেজে ভর্তি বা কর্মজীবনে প্রবেশ—যেকোনো পথেই তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাহায্য করুন। এই সময়ে মেন্টরশিপের সুযোগ তৈরি করা অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
 

কীভাবে সাহায্য করবেন:

  • সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করুন: সন্তানকে বিভিন্ন ক্যারিয়ার নিয়ে গবেষণা করতে এবং কোন পেশায় কী ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন তা বুঝতে সাহায্য করুন।
  • মেন্টরশিপের সুযোগ দিন: এমন ব্যক্তিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন, যারা তাদের স্বপ্নের পেশায় সফল এবং যারা তাদের ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করতে পারে।
  • দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করুন: তাদের ভবিষ্যত লক্ষ্য এবং তা কীভাবে অর্জন করা যাবে, সে সম্পর্কে বাস্তবিক দিকনির্দেশনা দিন।

 

বয়স অনুযায়ী ক্যারিয়ার আলোচনা
একজন অভিভাবক হিসেবে, সন্তানের ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় সহায়তা করা মানে ছোটবেলা থেকেই তাদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে কৌতূহল জাগানো এবং ধীরে ধীরে তাদের শক্তি এবং আগ্রহের জায়গাগুলো চিহ্নিত করা। সময়ের সাথে সাথে তাদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা দেওয়া, সফল পেশাদারদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, এবং অব্যাহতভাবে তাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করা গুরুত্বপূর্ণ।
এটি কেবল একটি ক্যারিয়ার পছন্দ নয়—এটি এমন একটি পথ খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া, যা তাদের জীবনভর ভালোবাসা এবং তৃপ্তি এনে দেবে।
 


নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ