ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামিক শিক্ষার সমন্বয়: ২১শতকের জন্য প্রস্তুতি

দৈনিক মার্তৃভূমির খবর
আপলোড সময় : ১৪-১০-২০২৪ ১১:৪৭:১৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৫-১০-২০২৪ ১২:১০:২২ পূর্বাহ্ন
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামিক শিক্ষার সমন্বয়: ২১শতকের জন্য প্রস্তুতি প্রতীকী ছবি

মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগঃ বর্তমান দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে, শিক্ষাব্যবস্থা সারা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ইসলামিক স্কুলগুলোও এর বাইরে নয়। যেখানে শিক্ষার পদ্ধতি ঐতিহ্যবাহী বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার পরিবর্তে আধুনিক দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষায় রূপান্তরিত হচ্ছে, সেখানে ইসলামিক শিক্ষকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ছাত্রদের আধুনিক সমাজের জন্য প্রস্তুত করা, একই সাথে ইসলামের মূল শিক্ষাগুলো অক্ষুণ্ণ রাখা।
 

সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা, দক্ষিণ থাইল্যান্ডের প্রাইভেট ইসলামিক স্কুলগুলোর জন্য ২১ শতকের ইসলামিক শিক্ষার ব্যবস্থাপনা কৌশল, এই চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে এবং বিভিন্ন কার্যকর কৌশল প্রস্তাব করে যা শুধু থাইল্যান্ড নয়, বরং সারা বিশ্বের ইসলামিক শিক্ষার ভবিষ্যতের জন্য দিকনির্দেশনা হতে পারে। বাংলাদেশের ইসলামিক স্কুল এবং শিক্ষকদের এই গবেষণা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত, যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা ২১ শতকের চ্যালেঞ্জের জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুত হতে পারে।
 

ইসলামিক শিক্ষার সামনে বর্তমান সবচেয়ে বড় সমস্যা হল শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তন। অনেক ইসলামিক স্কুল এখনও ঐতিহ্যবাহী লেকচার-ভিত্তিক পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল, যা কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর হলেও, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা—যেমন ক্রিটিকাল থিঙ্কিং, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধান এবং বিশ্বনাগরিকত্ব—বিকাশে পিছিয়ে রয়েছে।
 

থাইল্যান্ডের শিক্ষাবিদরা এই সমস্যার সমাধানে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল গ্রহণ করেছেন যা নিম্মরূপঃ 

 

১. ব্যক্তিগত প্রয়োজনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান

প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিজস্ব প্রয়োজন এবং সক্ষমতাকে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দিয়ে তাদের শেখার গতির সাথে মানানসই শিক্ষাদান ব্যবস্থা তৈরি করা।
 

২. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT)-এর একীকরণ

ইসলামিক শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সংযোজন করে শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয় ও প্রাসঙ্গিক করা, যা ডিজিটাল যুগে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী।
 

৩. শ্রেণিকক্ষের বাইরের অভিজ্ঞতার সাথে বাস্তব জীবনের সংযোগ স্থাপন

শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে ইসলামিক নীতিগুলির সংযোগ ঘটিয়ে শিক্ষার মাধ্যমে বাস্তব প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়া।
 

৪. স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মূল্যবোধের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি

শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় ইসলামিক মূল্যবোধ ও বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে শিক্ষাদান।
 

৫. বিজ্ঞান ও ইসলামিক শিক্ষার সমন্বয়

ইসলামিক শিক্ষার সাথে বিজ্ঞানকে একীভূত করে শিক্ষার্থীদের একটি পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক শিক্ষা প্রদান।
 

৬. আধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতি গ্রহণ

প্রচলিত পরীক্ষার পরিবর্তে আধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতি গ্রহণ করা, যা দক্ষতা, প্রক্রিয়া এবং বাস্তব জীবনের প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবে।


তবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেক শিক্ষক ঐতিহ্যবাহী পুরনো শিক্ষাপদ্ধতির সাথেই জড়িয়ে আছেন, যা তাদের জন্য নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করা কঠিন করে তুলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং নীতিনির্ধারকদের উচিত এই শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করা, যাতে তারা নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন।
 

আমাদের ইসলামিক স্কুলগুলোকে আধুনিক বিশ্বের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হবে, একইসাথে ইসলামের মূলনীতিগুলোর প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে হবে। এটি কোনো ঐতিহ্য বিসর্জন দেওয়ার বিষয় নয়; বরং ইসলামী শিক্ষার সাথে আধুনিক জ্ঞান এবং দক্ষতার সমন্বয় ঘটানোর প্রয়োজন। আমরা থাইল্যান্ডের শিক্ষাবিদদের কৌশলগুলো থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োগ করতে পারি।
 

২১ শতকের ইসলামিক শিক্ষার রূপান্তর একটি জটিল ও বহুস্তর বিশিষ্ট প্রক্রিয়া। এটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষাবিদ, প্রশাসক, অভিভাবক এবং নীতিনির্ধারকদের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। যদিও এই যাত্রা চ্যালেঞ্জিং, এর সম্ভাব্য ফলাফল বিশাল। একটি নতুন প্রজন্মের মুসলিম শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা, যারা তাদের ঈমানের উপর দৃঢ় এবং বৈশ্বিক সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত, এটি আমাদের সমাজ ও বিশ্ব উম্মাহর উন্নতির দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।
 

শেষমেশ, থাইল্যান্ডের গবেষণার ফলাফল থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের ইসলামিক স্কুলগুলোতে শিক্ষার পদ্ধতি আধুনিকায়ন করা কতটা জরুরি। এখন সময় এসেছে আমরা ২১ শতকের সুযোগগুলো গ্রহণ করার এবং ইসলামী মূল্যবোধ ও নীতিগুলোর প্রতি আমাদের অঙ্গীকার বজায় রাখার। তবেই আমরা নিশ্চিত করতে পারব যে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবে, ঈমানের সাথে এবং দক্ষতার সাথে।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ