আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় প্রায় ৩০ বছর ধরে পাশাপাশি অবস্থান করছে মসজিদ, মন্দির ও বৌদ্ধবিহার। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় প্রায় ৩০ বছর ধরে পাশাপাশি অবস্থান করছে মসজিদ, মন্দির ও বৌদ্ধবিহার। বছরের পর বছর পাশাপাশি থেকে ধর্মীয় কার্যক্রম চালিয়ে এলেও কখনও কারও কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি। সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন তিন ধর্মের লোকজন। সেইসঙ্গে একে-অপরকে সহযোগিতা করে আসছেন। এটিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত বলছেন সবাই। এ নিয়ে গর্বিত এবং খুশি এখানকার বাসিন্দরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের উত্তর পাশে ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করা হয় শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির। এর পাশেই ১৯৯৭ সালে নির্মাণ করা হয় কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে মসজিদ। এই দুই উপাসনালয়ের প্রবেশপথ একই। শুধু মাঝখানে ছোট একটি ইটের দেয়াল। একটু উত্তরে গেলেই চোখে পড়বে শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার। একপাশে আজান, অপর পাশে ঢাকির ঢোল এবং অন্য পাশে ভান্তের বন্দনার আওয়াজ। যুগ যুগ এভাবে চলে আসলেও কখনও তিন ধর্মাবলম্বী মানুষের এ নিয়ে কোনও সমস্যা সৃষ্টি হয়নি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মসজিদে আজান হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। আবার মসজিদ এবং মন্দিরে ধর্মীয় কার্যক্রম চললে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। ক্ষণ বুঝে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বন্দনা শুরু করেন। এভাবে একে-অপরকে বুঝেই পরিচালিত হচ্ছে ধর্মীয় কার্যক্রম। হাজার হাজার বছর টিকে থাকবে সম্প্রীতির এই বন্ধন এমন প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
১৮ এপ্রিল বিকালে রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাতে কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে মসজিদ অনুষ্ঠিত হয়েছে তারাবি ও শবে কদরের নামাজ। এর আগে বিকালে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়েছে। এতেই বোঝা যায় সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন তারা।
কুয়াকাটার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি তিন ধর্মের মানুষ এখানে বসবাস করেন এবং নিজ নিজ ধর্ম পালন করেন। কখনও কারও মধ্যে ধর্ম নিয়ে কোনও বিরোধ দেখা যায়নি। সবাই মিলে মিশে থাকি। একসঙ্গে বসে চা খাই, আড্ডা দিই। আবার যে যার ধর্ম পালন করি।’
ওই এলাকার বাসিন্দা ইন্দ্রনীল বলেন, ‘সবাই রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। তিন ধর্মের মানুষের সঙ্গে অকে-অপরের পারিবারিক সম্পর্ক আছে। ওই সম্পর্কের কারণেই এখানে ধর্ম নিয়ে কারও মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। সবাই সবার স্বজনের মতো।’
কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘যখন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়, তখন তারা আমাদের কাছে নামাজের সময় জেনে নেন। নামাজ বা আজানের সময় তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। আবার তাদের অনুষ্ঠানের সময় আমরা সহযোগিতা করি।’
শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের ম্যানেজার নির্মল রায় বলেন, ‘আমরা বুঝেশুনেই আমাদের ধর্মীয় কার্যক্রম চালাই। আমাদের কার্যক্রমে যাতে মুসলিম ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কোনও সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে সব সময় খেয়াল রাখি। এ ছাড়া আমাদের রাস উৎসবে সব ধর্মের মানুষই অংশ নেয়। সবাই একে-অপরের আত্মীয়ের মতো এখানে বসবাস করছি। কারও মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ নেই।’
কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহারের উপাধ্যক্ষ ইন্দ্র বিষ ভিক্ষু বলেন, ‘আমাদের ধর্মীয় কার্যক্রম চললে মুসলিম ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সহযোগিতা করেন। তারা আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। আবার তাদের ধর্মীয় কার্যক্রমে আমরা সময় দিই। ফলে আমারা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছি। মিলেমিশে বসবাস করছি, আবার মিলেমিশে ধর্ম পালন করছি। কারও কোনও সমস্যা হয় না।’
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘আশা করছি তিন ধর্মের মানুষের মধ্যে কখনও কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। আমরা তাদের পাশে আছি।’
জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি মংথান তালুকদার বলেন, ‘এক জায়গায় তিন উপাসনালয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। কোনও ধর্মই অন্য ধর্মের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করতে বলেনি, বরং মিলেমিশে থাকতে বলেছে।’###
সংবাদ শিরোনাম ::
৩০ বছর ধরে পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির-বৌদ্ধবিহার, সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত।
- মাতৃভূমির খবর ডেস্ক
- আপডেট টাইম ১১:৩৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৩
- ৫৮৭ বার পড়া হয়েছে
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ