ঢাকা ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ “২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ” –মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে ৫৩ কেজি গাঁজাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; মাদক বহনে ব্যবহৃত পিকআপ জব্দ। “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন … লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন‍্য বিশেষ নামাজ আদায় মিছিল ও শোডাউন করায় মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মানিক দর্জিকে শোকজ

২ লাখ পর্যটকের অপেক্ষায় কুয়াকাটা

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
২ লাখ পর্যটকের অপেক্ষায় কুয়াকাটা। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত সাগরকন্যা কুয়াকাটা। একই স্থানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। আর এ কারণেই কুয়াকাটা এখন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান। দেশের দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কুয়াকাটায় দুই লাখের বেশি পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনা দেখছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাই ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে পর্যটকদের বরণ করতে চলছে নানা প্রস্তুতি।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন হোটেল-মোটেলের রঙের কাজ প্রায় শেষের পথে। অনেক হোটেলের আসবাবপত্রে এসেছে নতুনত্বের ছাপ। হোটেল-মোটেলের সামনের জায়গাগুলো পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। দোকানিরাও দোকান সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা দোকানে নানাবিধ জিনিসের পসরা সাজাচ্ছেন। ট্যুরিজম বোটের মালিকরা তাদের পর্যটক বহনকারী বোটগুলোতে রঙের ছোঁয়ায় নৈপুণ্যতায় ভরপুর করছেন। আচার ও চকলেট বিক্রেতারাও দোকানে উন্নতমানের চকলেট ও আচারের সমাহার ঘটিয়েছেন। শুঁটকিপল্লির ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের শুঁটকি দিয়ে দোকান সাজাচ্ছেন।
এবারের ঈদের পাঁচ দিনের লম্বা ছুটিতে কুয়াকাটা সৈকত পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকবে। দেশের সব জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে অল্প সময়ের মধ্যে কুয়াকাটা আসতে পারে ভ্রমণপিপাসুরা। তাই তারা এবারের ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে বেছে নেবেন। তাদের আশা, এবার কুয়াকাটায় দুই লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (কুটুম)-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় প্রচুর সংখ্যক পর্যটকের ভিড় ছিল। কক্সবাজারের চেয়ে কুয়াকাটায় আসতে সময় কম লাগে। তাই ভ্রমণপিপাসুরা কুয়াকাটা সৈকত বেছে নিচ্ছেন। এ জন্য এবারের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে দুই লক্ষাধিক পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং সৈকত এলাকার প্রতিবেশ, সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। এ জন্য ঈদের আগেই সৈকত এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পর্যটননির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জাল নৌকা সরিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে। দোকানপাটের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নান্দনিক সৈকত উপহার দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ জন্য সৈকত এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছাতা বেঞ্চ মালিক, স্পিডবোট, মোটরবাইক, ট্যুরিস্ট বোট, ঝিনুক দোকান, ডাব বিক্রেতাসহ সৈকতমুখী ব্যবসায়ীদের নিয়ে গত বুধবার বিকালে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় সৈকতের জিরো পয়েন্টের দুই দিকে আধা কিলোমিটার এলাকায় কোনও দোকানপাট, মোটরবাইক, স্পিডবোট, ট্যুরিস্ট বোট, ফ্রাই মার্কেটসহ কোনও দোকানপাট না রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কুয়াকাটা ট্যুরিজম পার্কের পূর্ব পাশে বসিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। সৈকতের দুদিকে ১ কিলোমিটার এলাকা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
মতবিনিময় সভায় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা, জাল নৌকা অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া, আবাসিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট, খাবার হোটেল, অটোভ্যান, অটোরিকশা, মোটরবাইকের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগেই এসব কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
এতদিন কুয়াকাটায় গাড়ি পার্কিংয়ের কোনও সুব্যবস্থা ছিল না। এ কারণে বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে কুয়াকাটা থেকে মৎস্যবন্দর আলীপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হয়। আর এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন আগত পর্যটকরা। এবার সে ভোগান্তি লাঘবের জন্য তুলাতলী এলাকায় নির্মাণাধীন বাসস্টেশন গাড়ি রাখার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। যদিও নির্মাণাধীন বাসস্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। তারপরও গাড়ি রাখার জন্য ঈদের আগে সব প্রস্তুতি শেষ হবে। যেসব গাড়ি কুয়াকাটা আসবে তা নির্মাণাধীন বাসস্ট্যান্ডের মাঠে রাখা হবে। যার ফলে সড়কে কোনও যানজট থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘ঈদযাত্রায় কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের ভোগান্তি লাঘবের জন্য তড়িঘড়ি করে বাসস্ট্যান্ডের মাঠ প্রস্তুত করা হচ্ছে। সব গাড়ি নির্মাণাধীন বাসস্ট্যান্ডে পার্কিং করা হবে। সড়কে কোনও গাড়ি রাখা যাবে না।
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের ৫ কিলোমিটার আগে আলীপুর থ্রি পয়েন্ট টোলপ্লাজা পর্যন্ত ৫০০ ফুট মহাসড়ক দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। প্রায় প্রতি মাসেই একবার সংস্কার করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। থ্রি পয়েন্ট এলাকায় সড়কের পাশে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। নলকূপের ব্যবহৃত পানি গড়িয়ে যাচ্ছে সড়কে। থ্রি পয়েন্ট থেকে টোলপ্লাজা পর্যন্ত সড়কের পানি অপসারণের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ১২ মাস সড়কে পানি জমে থাকে। যার কারণে সড়ক বিভাগের বারবার সংস্কার কোনও কাজে আসছে না। আর এর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় পথচারীসহ কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসুদের। ৫০০ ফুট মহাসড়কে জমে থাকা কাদাপানি ঈদের আগে অপসারণের কোনও উদ্যোগ নেই সড়ক বিভাগের। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের এতটুকু ভোগান্তি মেনে নিতেই হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন বলেন, ‘আমি সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের বারবার অবহিত করেও কোনও সুফল পাইনি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমতি ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ খোঁড়াখুঁড়ি করতে পারে না। দ্রুত ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে পারলে মহাসড়কে কাদামাটি থাকবে না।’
পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় ছোট-বড় মিলিয়ে দেড়শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। আর এতে ধারণ ক্ষমতা ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার। অতিরিক্ত চাপের সময় আরও ৫ হাজার পর্যটককে গাদাগাদি করে রাতযাপন করতে পারে। এর চেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম হলে কমিউনিটি ট্যুরিজমের আওতায় আশপাশের বাসাবাড়িতে কিছু সংখ্যক পর্যটক থাকতে পারেন। কিন্তু পর্যটন মৌসুম ও বিশেষ দিনগুলোতে আগত পর্যটকের সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত হয়। তখন কুয়াকাটা সংলগ্ন মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহিপুরের আবাসিক হোটেলগুলোতে পর্যটকদের আশ্রয় নিতে হয়। এর চেয়ে অতিরিক্ত পর্যটকের সমাগম ঘটলে সৈকতের বেঞ্চিতে, বাসের মধ্যে, খোলা আকাশের নিচেও পর্যটকদের রাতযাপন করতে হয়। খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে হিমশম খেতে হয় থানা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও টুরিস্ট পুলিশকে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় আবাসিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আবাসন সংকট মোকাবিলায় অসহায় হয়ে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। এ সংকট মোকাবিলায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের পরামর্শ, অগ্রিম হোটেল কক্ষ বুকিং না দিয়ে যাতে কোনও পর্যটক কুয়াকাটা না আসেন।
‘কুয়াকাটা বিচ ট্যুরিজম’-এর স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে ব্যাপক পর্যটকদের সমাগম ঘটে। যার কারণে আবাসন সংকটে পড়তে হয় অনেক ভ্রমণপিপাসুকে। তাই আগাম হোটেল বুকিং না দিয়ে এখন পর্যটকদের কুয়াকাটা না আসাই ভালো।’
খান প্যালেস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল খান বলেন, ‘পুরো রমজান মাসে বেশিরভাগ রুমই খালি ছিল। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে আমাদের কিছু সংখ্যক রুম রিজার্ভেশন হয়ে গেছে। আশা করছি ঈদের আগে সব কক্ষ বুকিং হবে।
কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের বরণের প্রস্তুতির বিষয়ে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও কোনও ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই আমরা কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের সেবা দিতে পারতাম। পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকেই পর্যটকদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে পরিমাণ পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে মনে হচ্ছে সে পরিমাণ আবাসিক ব্যবস্থা নেই কুয়াকাটায়। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে আবাসন সংকটে পড়েন আগত পর্যটকরা। এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে আমাদের।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের ইনচার্জ হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কুয়াকাটা সৈকতে আসবেন পর্যটকরা। বিপুল সংখ্যক পর্যটক উপস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিমকে সার্বক্ষণিক এখানে থাকার জন্য চিঠি দিয়েছি। কুয়াকাটার আশপাশের প্রত্যেকটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল জোরদার করা হবে। এছাড়াও প্রত্যেকটি স্পটে সাদা পোশাকের পুলিশ থাকবে।’###

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড

২ লাখ পর্যটকের অপেক্ষায় কুয়াকাটা

আপডেট টাইম ০৯:৫০:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৩

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
২ লাখ পর্যটকের অপেক্ষায় কুয়াকাটা। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত সাগরকন্যা কুয়াকাটা। একই স্থানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। আর এ কারণেই কুয়াকাটা এখন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান। দেশের দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কুয়াকাটায় দুই লাখের বেশি পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনা দেখছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাই ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে পর্যটকদের বরণ করতে চলছে নানা প্রস্তুতি।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন হোটেল-মোটেলের রঙের কাজ প্রায় শেষের পথে। অনেক হোটেলের আসবাবপত্রে এসেছে নতুনত্বের ছাপ। হোটেল-মোটেলের সামনের জায়গাগুলো পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। দোকানিরাও দোকান সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা দোকানে নানাবিধ জিনিসের পসরা সাজাচ্ছেন। ট্যুরিজম বোটের মালিকরা তাদের পর্যটক বহনকারী বোটগুলোতে রঙের ছোঁয়ায় নৈপুণ্যতায় ভরপুর করছেন। আচার ও চকলেট বিক্রেতারাও দোকানে উন্নতমানের চকলেট ও আচারের সমাহার ঘটিয়েছেন। শুঁটকিপল্লির ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের শুঁটকি দিয়ে দোকান সাজাচ্ছেন।
এবারের ঈদের পাঁচ দিনের লম্বা ছুটিতে কুয়াকাটা সৈকত পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকবে। দেশের সব জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে অল্প সময়ের মধ্যে কুয়াকাটা আসতে পারে ভ্রমণপিপাসুরা। তাই তারা এবারের ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে বেছে নেবেন। তাদের আশা, এবার কুয়াকাটায় দুই লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (কুটুম)-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় প্রচুর সংখ্যক পর্যটকের ভিড় ছিল। কক্সবাজারের চেয়ে কুয়াকাটায় আসতে সময় কম লাগে। তাই ভ্রমণপিপাসুরা কুয়াকাটা সৈকত বেছে নিচ্ছেন। এ জন্য এবারের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে দুই লক্ষাধিক পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং সৈকত এলাকার প্রতিবেশ, সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। এ জন্য ঈদের আগেই সৈকত এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পর্যটননির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জাল নৌকা সরিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে। দোকানপাটের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নান্দনিক সৈকত উপহার দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ জন্য সৈকত এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছাতা বেঞ্চ মালিক, স্পিডবোট, মোটরবাইক, ট্যুরিস্ট বোট, ঝিনুক দোকান, ডাব বিক্রেতাসহ সৈকতমুখী ব্যবসায়ীদের নিয়ে গত বুধবার বিকালে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় সৈকতের জিরো পয়েন্টের দুই দিকে আধা কিলোমিটার এলাকায় কোনও দোকানপাট, মোটরবাইক, স্পিডবোট, ট্যুরিস্ট বোট, ফ্রাই মার্কেটসহ কোনও দোকানপাট না রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কুয়াকাটা ট্যুরিজম পার্কের পূর্ব পাশে বসিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। সৈকতের দুদিকে ১ কিলোমিটার এলাকা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
মতবিনিময় সভায় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা, জাল নৌকা অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া, আবাসিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট, খাবার হোটেল, অটোভ্যান, অটোরিকশা, মোটরবাইকের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগেই এসব কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
এতদিন কুয়াকাটায় গাড়ি পার্কিংয়ের কোনও সুব্যবস্থা ছিল না। এ কারণে বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে কুয়াকাটা থেকে মৎস্যবন্দর আলীপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হয়। আর এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন আগত পর্যটকরা। এবার সে ভোগান্তি লাঘবের জন্য তুলাতলী এলাকায় নির্মাণাধীন বাসস্টেশন গাড়ি রাখার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। যদিও নির্মাণাধীন বাসস্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। তারপরও গাড়ি রাখার জন্য ঈদের আগে সব প্রস্তুতি শেষ হবে। যেসব গাড়ি কুয়াকাটা আসবে তা নির্মাণাধীন বাসস্ট্যান্ডের মাঠে রাখা হবে। যার ফলে সড়কে কোনও যানজট থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘ঈদযাত্রায় কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের ভোগান্তি লাঘবের জন্য তড়িঘড়ি করে বাসস্ট্যান্ডের মাঠ প্রস্তুত করা হচ্ছে। সব গাড়ি নির্মাণাধীন বাসস্ট্যান্ডে পার্কিং করা হবে। সড়কে কোনও গাড়ি রাখা যাবে না।
কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের ৫ কিলোমিটার আগে আলীপুর থ্রি পয়েন্ট টোলপ্লাজা পর্যন্ত ৫০০ ফুট মহাসড়ক দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। প্রায় প্রতি মাসেই একবার সংস্কার করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। থ্রি পয়েন্ট এলাকায় সড়কের পাশে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। নলকূপের ব্যবহৃত পানি গড়িয়ে যাচ্ছে সড়কে। থ্রি পয়েন্ট থেকে টোলপ্লাজা পর্যন্ত সড়কের পানি অপসারণের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ১২ মাস সড়কে পানি জমে থাকে। যার কারণে সড়ক বিভাগের বারবার সংস্কার কোনও কাজে আসছে না। আর এর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় পথচারীসহ কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসুদের। ৫০০ ফুট মহাসড়কে জমে থাকা কাদাপানি ঈদের আগে অপসারণের কোনও উদ্যোগ নেই সড়ক বিভাগের। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের এতটুকু ভোগান্তি মেনে নিতেই হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন বলেন, ‘আমি সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের বারবার অবহিত করেও কোনও সুফল পাইনি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমতি ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ খোঁড়াখুঁড়ি করতে পারে না। দ্রুত ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে পারলে মহাসড়কে কাদামাটি থাকবে না।’
পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় ছোট-বড় মিলিয়ে দেড়শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। আর এতে ধারণ ক্ষমতা ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার। অতিরিক্ত চাপের সময় আরও ৫ হাজার পর্যটককে গাদাগাদি করে রাতযাপন করতে পারে। এর চেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম হলে কমিউনিটি ট্যুরিজমের আওতায় আশপাশের বাসাবাড়িতে কিছু সংখ্যক পর্যটক থাকতে পারেন। কিন্তু পর্যটন মৌসুম ও বিশেষ দিনগুলোতে আগত পর্যটকের সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত হয়। তখন কুয়াকাটা সংলগ্ন মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহিপুরের আবাসিক হোটেলগুলোতে পর্যটকদের আশ্রয় নিতে হয়। এর চেয়ে অতিরিক্ত পর্যটকের সমাগম ঘটলে সৈকতের বেঞ্চিতে, বাসের মধ্যে, খোলা আকাশের নিচেও পর্যটকদের রাতযাপন করতে হয়। খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে হিমশম খেতে হয় থানা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও টুরিস্ট পুলিশকে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় আবাসিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আবাসন সংকট মোকাবিলায় অসহায় হয়ে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। এ সংকট মোকাবিলায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের পরামর্শ, অগ্রিম হোটেল কক্ষ বুকিং না দিয়ে যাতে কোনও পর্যটক কুয়াকাটা না আসেন।
‘কুয়াকাটা বিচ ট্যুরিজম’-এর স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে ব্যাপক পর্যটকদের সমাগম ঘটে। যার কারণে আবাসন সংকটে পড়তে হয় অনেক ভ্রমণপিপাসুকে। তাই আগাম হোটেল বুকিং না দিয়ে এখন পর্যটকদের কুয়াকাটা না আসাই ভালো।’
খান প্যালেস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল খান বলেন, ‘পুরো রমজান মাসে বেশিরভাগ রুমই খালি ছিল। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে আমাদের কিছু সংখ্যক রুম রিজার্ভেশন হয়ে গেছে। আশা করছি ঈদের আগে সব কক্ষ বুকিং হবে।
কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের বরণের প্রস্তুতির বিষয়ে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও কোনও ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই আমরা কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের সেবা দিতে পারতাম। পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকেই পর্যটকদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে পরিমাণ পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে মনে হচ্ছে সে পরিমাণ আবাসিক ব্যবস্থা নেই কুয়াকাটায়। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে আবাসন সংকটে পড়েন আগত পর্যটকরা। এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে আমাদের।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের ইনচার্জ হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কুয়াকাটা সৈকতে আসবেন পর্যটকরা। বিপুল সংখ্যক পর্যটক উপস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিমকে সার্বক্ষণিক এখানে থাকার জন্য চিঠি দিয়েছি। কুয়াকাটার আশপাশের প্রত্যেকটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল জোরদার করা হবে। এছাড়াও প্রত্যেকটি স্পটে সাদা পোশাকের পুলিশ থাকবে।’###