ঢাকা ০৩:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ “২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ” –মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে ৫৩ কেজি গাঁজাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; মাদক বহনে ব্যবহৃত পিকআপ জব্দ। “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ

হবিগঞ্জে দর্শকের অভাবে বন্ধ হলো সিনেমা হল

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় মোনালিসা ও মণিকা নামে দুটি সিনেমা হল ছিল। বেশ কয়েকবছর আগেই মালিকানা পরিবর্তন হয়ে মোনালিসা হলটি বন্ধ রয়েছে, এরপরে পুরো উপজেলায় কেবল মণিকা হলটি চালু ছিল। গেল করোনা শুরুর এক বছর আগ থেকে দর্শকের অভাবে মণিকা সিনেমা হলটিও বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জের মণিকা সিনেমা হলটি শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে হবিগঞ্জ সড়কে ১৯৮৭ সালে ১৭ শতক জায়গার উপরে নির্মাণ করা হয়েছিল। সর্বপ্রথম ৬ টাকা ও ৮ টাকা দরে টিকিট বিক্রি করে সিনেমা দেখানো হত।

সময়ের পরিক্রমায় সর্বশেষ শোভন টিকিট ৬০ টাকা ও বিলাস টিকিট ৮০ টাকা দরে ক্রয় করে সিনেমা দেখেছেন দর্শকরা। সিনেমা হলের স্বর্ণযুগের সময় প্রতি সপ্তাহে একদিন মাইকিং করে দর্শকদের জানিয়ে দেয়া হত পেক্ষাগ্রহে নতুন সিনেমা এসেছে, বাজারে বাজারে লাগানো হত সিনেমার রঙ্গিন পোস্টার। আর এসব প্রচার প্রচারণা শুনেই হুমড়ি খেয়ে সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসতেন নানান বয়সী দর্শক। প্রতিদিন মণিকায় তিনটি শো চলত, দুপুর সাড়ে ১২ টায় প্রথম শো, বিকাল ৪ টায় দ্বিতীয় শো এবং রাত দশটায় সর্বশেষ শো দেখানো হত।

প্রতিটি শো চলত একটানা আড়াই ঘন্টা ধরে চলত একটা শোতে হাউজফুল হওয়ায় জায়গা না পেয়ে হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন অনেক মানুষ, এই মণিকা হলেই ১৫-২০ জন কর্মচারী কাজ করে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন। নায়ক সালমান শাহ, নায়ক জসিম নায়ক রিয়াজ, শাকিব খান, নায়িকা শাবানা মৌসুমী, শাবনুর কিংবা পুর্ণিমা তাদের অভিনীত ছবির খোঁজ পেলেই সিনেমা হলে দর্শকের অভাব হত না এই হল দিয়েই ব্যবসা করে একসময় লাভবান ছিলেন হলের মালিক।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়- মণিকা হলের সামনে এখন বেশ কয়েকজন ওয়ার্কশপের কাজ করছেন। সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার কারণ খুজলে দেখা যায়, দেশে সুস্থ ও ভাল সিনেমার অভাব, ডিজিটাল যুগের ইউটিউব, ক্যাবল টিভি ও স্যাটেলাইট টিভির প্রসার এবং চায়ের দোকানে সিনেমা দেখানোর প্রভাব। এছাড়াও অভাব রয়েছে মানসম্মত ও উন্নত পরিবেশের সিনেমা হল না থাকায় ও দর্শকরা হল থেকে বিমুখী হয়ে আছেন।

এ ব্যাপারে মণিকা সিনেমা হলের কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুর রশীদ জানান, ‘শুরু থেকেই তিনি এ হলে কাজ করে আসছিলেন, বর্তমানে তিনি পেশা পাল্টিয়েছেন তিনি বলেন মানুষ এখন ঘরে বসেই সিনেমা দেখতে পারে তাই হলে আসেনা। আর আগের মতো ভাল সিনেমা ও নির্মাণ হয়না, এক কথায় দর্শক নেই তাই হল বন্ধ হয়েছে, এ ব্যাপারে মণিকা সিনেমা হলের সত্ত্বাধিকারী তাপস গুপ্ত দাস জানান কয়েক বছর ধরেই দর্শক না থাকার কারণে হল বন্ধ রেখেছি অনেক ভর্তুকি দিয়েও চেষ্টা করেছি হলটি টিকিয়ে রাখার জন্য কিন্তু পারিনি।

তিনি বলেন একসময় থার্টি ফাইভ ফিল্ম কিনে আনতাম পরে ফিল্ম আনতাম এরপরে প্যানড্রাইভে সিনেমা দিয়ে দিত, সর্বশেষ অনলাইনে সিনেমা কিনে এনেছি এগুলো পর্দায় দেখানো হত। একটা সময় যেকোন জাতীয় উৎসব এলেই মানুষের ঢল নামত সিনেমা দেখার জন্য, কিন্তু আমার আক্ষেপ হয় দুই তিন বছরে ও একজন দর্শক এসে জিজ্ঞেস করল না সিনেমা আছে কি, দেখতে চাই। তাহলে বুঝেন সিনেমা হলের অবস্থা।’

তাপস দাস গুপ্ত সিনেমা হলের ভবিষ্যৎ দিনদিন অন্ধকারই দেখেন, তাই এই মণিকা সিনেমা হল ও চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন না। দীর্ঘদিন সিনেমা হল চালিয়েছেন, এখন বন্ধ থাকায় নিজের কাছে খারাপ লাগলে কিছু করার নেই বলে জানান তিনি। দীর্ঘ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘সিনেমা হলে যদি দর্শকরা আসত এবং সিনেমা দেখতে চাইত এবং দেশে সিনেমা হল চলার মত অনুকূল পরিবেশ পেত তাহলে তিনি আরো আধুনিকায়ন করে মণিকা সিনেমা হলকে সাজ্জিত করতেন কিন্তু সেগুলো হয়ত আর হবে না তাই সিনেমা হল বন্ধই হয়ত থাকবে।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থিয়েটারের সভাপতি জালাল উদ্দিন রুমি বলেন-সিনেমা দেখার দর্শক আসলে কমেনি, বহুমাত্রিক ডিজিটাল ইজেশনের কারণে মানুষ হাতের নাগালেই সিনেমা পাচ্ছে সেজন্য তারা হলে যাচ্ছে না এছাড়াও সিনেমা হলে পরিকল্পিত পরিবেশের অভাব রয়েছে। যার কারণে হলে পরিবার পরিজন নিয়ে ছবি দেখতে পারা যায় না।

তিনি আরো বলেন আমরা যারা সংস্কৃতিকে ধারণ করি, তারা মূলত সিনেমা দেখেই উৎসাহিত হয়েছিলাম শায়েস্তাগঞ্জে সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার কারণে এর প্রভাব সংস্কৃতির উপর ও পড়েছে আমি আশা করি দেশে ভাল সিনেমা নির্মাণ হলে এবং সিনেমা হলের পরিবেশ ভাল করে সংস্কার করলে আবারও দর্শক সিনেমা দেখবে।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

হবিগঞ্জে দর্শকের অভাবে বন্ধ হলো সিনেমা হল

আপডেট টাইম ০৩:২৫:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর ২০২১

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় মোনালিসা ও মণিকা নামে দুটি সিনেমা হল ছিল। বেশ কয়েকবছর আগেই মালিকানা পরিবর্তন হয়ে মোনালিসা হলটি বন্ধ রয়েছে, এরপরে পুরো উপজেলায় কেবল মণিকা হলটি চালু ছিল। গেল করোনা শুরুর এক বছর আগ থেকে দর্শকের অভাবে মণিকা সিনেমা হলটিও বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জের মণিকা সিনেমা হলটি শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে হবিগঞ্জ সড়কে ১৯৮৭ সালে ১৭ শতক জায়গার উপরে নির্মাণ করা হয়েছিল। সর্বপ্রথম ৬ টাকা ও ৮ টাকা দরে টিকিট বিক্রি করে সিনেমা দেখানো হত।

সময়ের পরিক্রমায় সর্বশেষ শোভন টিকিট ৬০ টাকা ও বিলাস টিকিট ৮০ টাকা দরে ক্রয় করে সিনেমা দেখেছেন দর্শকরা। সিনেমা হলের স্বর্ণযুগের সময় প্রতি সপ্তাহে একদিন মাইকিং করে দর্শকদের জানিয়ে দেয়া হত পেক্ষাগ্রহে নতুন সিনেমা এসেছে, বাজারে বাজারে লাগানো হত সিনেমার রঙ্গিন পোস্টার। আর এসব প্রচার প্রচারণা শুনেই হুমড়ি খেয়ে সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসতেন নানান বয়সী দর্শক। প্রতিদিন মণিকায় তিনটি শো চলত, দুপুর সাড়ে ১২ টায় প্রথম শো, বিকাল ৪ টায় দ্বিতীয় শো এবং রাত দশটায় সর্বশেষ শো দেখানো হত।

প্রতিটি শো চলত একটানা আড়াই ঘন্টা ধরে চলত একটা শোতে হাউজফুল হওয়ায় জায়গা না পেয়ে হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন অনেক মানুষ, এই মণিকা হলেই ১৫-২০ জন কর্মচারী কাজ করে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন। নায়ক সালমান শাহ, নায়ক জসিম নায়ক রিয়াজ, শাকিব খান, নায়িকা শাবানা মৌসুমী, শাবনুর কিংবা পুর্ণিমা তাদের অভিনীত ছবির খোঁজ পেলেই সিনেমা হলে দর্শকের অভাব হত না এই হল দিয়েই ব্যবসা করে একসময় লাভবান ছিলেন হলের মালিক।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়- মণিকা হলের সামনে এখন বেশ কয়েকজন ওয়ার্কশপের কাজ করছেন। সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার কারণ খুজলে দেখা যায়, দেশে সুস্থ ও ভাল সিনেমার অভাব, ডিজিটাল যুগের ইউটিউব, ক্যাবল টিভি ও স্যাটেলাইট টিভির প্রসার এবং চায়ের দোকানে সিনেমা দেখানোর প্রভাব। এছাড়াও অভাব রয়েছে মানসম্মত ও উন্নত পরিবেশের সিনেমা হল না থাকায় ও দর্শকরা হল থেকে বিমুখী হয়ে আছেন।

এ ব্যাপারে মণিকা সিনেমা হলের কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুর রশীদ জানান, ‘শুরু থেকেই তিনি এ হলে কাজ করে আসছিলেন, বর্তমানে তিনি পেশা পাল্টিয়েছেন তিনি বলেন মানুষ এখন ঘরে বসেই সিনেমা দেখতে পারে তাই হলে আসেনা। আর আগের মতো ভাল সিনেমা ও নির্মাণ হয়না, এক কথায় দর্শক নেই তাই হল বন্ধ হয়েছে, এ ব্যাপারে মণিকা সিনেমা হলের সত্ত্বাধিকারী তাপস গুপ্ত দাস জানান কয়েক বছর ধরেই দর্শক না থাকার কারণে হল বন্ধ রেখেছি অনেক ভর্তুকি দিয়েও চেষ্টা করেছি হলটি টিকিয়ে রাখার জন্য কিন্তু পারিনি।

তিনি বলেন একসময় থার্টি ফাইভ ফিল্ম কিনে আনতাম পরে ফিল্ম আনতাম এরপরে প্যানড্রাইভে সিনেমা দিয়ে দিত, সর্বশেষ অনলাইনে সিনেমা কিনে এনেছি এগুলো পর্দায় দেখানো হত। একটা সময় যেকোন জাতীয় উৎসব এলেই মানুষের ঢল নামত সিনেমা দেখার জন্য, কিন্তু আমার আক্ষেপ হয় দুই তিন বছরে ও একজন দর্শক এসে জিজ্ঞেস করল না সিনেমা আছে কি, দেখতে চাই। তাহলে বুঝেন সিনেমা হলের অবস্থা।’

তাপস দাস গুপ্ত সিনেমা হলের ভবিষ্যৎ দিনদিন অন্ধকারই দেখেন, তাই এই মণিকা সিনেমা হল ও চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন না। দীর্ঘদিন সিনেমা হল চালিয়েছেন, এখন বন্ধ থাকায় নিজের কাছে খারাপ লাগলে কিছু করার নেই বলে জানান তিনি। দীর্ঘ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘সিনেমা হলে যদি দর্শকরা আসত এবং সিনেমা দেখতে চাইত এবং দেশে সিনেমা হল চলার মত অনুকূল পরিবেশ পেত তাহলে তিনি আরো আধুনিকায়ন করে মণিকা সিনেমা হলকে সাজ্জিত করতেন কিন্তু সেগুলো হয়ত আর হবে না তাই সিনেমা হল বন্ধই হয়ত থাকবে।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থিয়েটারের সভাপতি জালাল উদ্দিন রুমি বলেন-সিনেমা দেখার দর্শক আসলে কমেনি, বহুমাত্রিক ডিজিটাল ইজেশনের কারণে মানুষ হাতের নাগালেই সিনেমা পাচ্ছে সেজন্য তারা হলে যাচ্ছে না এছাড়াও সিনেমা হলে পরিকল্পিত পরিবেশের অভাব রয়েছে। যার কারণে হলে পরিবার পরিজন নিয়ে ছবি দেখতে পারা যায় না।

তিনি আরো বলেন আমরা যারা সংস্কৃতিকে ধারণ করি, তারা মূলত সিনেমা দেখেই উৎসাহিত হয়েছিলাম শায়েস্তাগঞ্জে সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার কারণে এর প্রভাব সংস্কৃতির উপর ও পড়েছে আমি আশা করি দেশে ভাল সিনেমা নির্মাণ হলে এবং সিনেমা হলের পরিবেশ ভাল করে সংস্কার করলে আবারও দর্শক সিনেমা দেখবে।