ঢাকা ০৫:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ

সৈয়দপুরে কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় পাশের জমির পাড় ভেঙ্গে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা : কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কোনভাবেই ইটভাটার জন্য কেটে নেয়া যাবেনা- প্রধানমন্ত্রীর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা থাকা সত্বেও নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের সিংহভাগ কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। এর ফলে ওই জমিগুলোর উর্বরাশক্তি যেমন কমে যাচ্ছে তেমনি মাটি কাটা জমির পাশের জমিগুলোর পাড় ভেঙ্গে পড়ে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এতে মাটি বিক্রি না করেই চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন কৃষকেরা। এ নিয়ে অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না তারা। কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ইটভাটার মালিকরা বেপরোয়াভাবে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে জমিগুলো অতিরিক্ত গভীর করে কাটার ফলে পাশের জমিগুলোতে পানি ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। সে সাথে মাটি বহণে ট্রাক্টর ব্যবহারের কারণে আশেপাশের ফসলী জমিগুলোর ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ সংক্রান্ত অভিযোগ করেছেন কামারপুকুর বক্সাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আফসার আলী। তিনি জানান, ৩০ শতক জমিতে তিনি বোরো ধানের আবাদ করেছেন। কিন্তু তার পাশের জমির মালিক আফজাল মাস্টার ইটভাটার কাছে মাটি বিক্রি করেছেন। একারণে ইটভাটার মালিক এরশাদ প্রায় ৩ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে গেছেন। এতে ওই জমিতে বিশালাকার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে গত কয়েকদিনের বর্ষায় আশেপাশের জমির আইল ভেঙ্গে পড়ে রোপনকৃত ধানের চারাসহ মাটি ধ্বসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবশিষ্ট জমিতে কোন রকমে বাধ দিয়ে পানি সেচ দেয়া হলেও তা বেশিক্ষন ধরে রাখা যাচ্ছেনা। তাছাড়া পাড় ভেঙ্গে পড়ায় বরেন্দ্র সেচ প্রকল্পের নালা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে সেচ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। একারণে বাধ্য হয়ে আফসার আলী তার জমিতে সেচ দেয়ার জন্য ১ হাজার ৮ শ’ টাকায় প্লাস্টিকের পাইপ ও ৮ শ’ টাকা দিয়ে বাঁশ কিনে মজুর সংগ্রহ করে বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করেছেন। এরপরও জমিতে পানি সংরক্ষিত হচ্ছেনা। এমতাবস্থায় সেচের পানি সংকটসহ মাটি কাটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে জানান তিনি। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কৃষি বিভাগ। তাছাড়া এখনও এলাকার বিভিন্ন কৃষি জমি থেকে মাটি কাটাসহ ট্রাক্টরের মাধ্যমে তা ইটভাটাগুলোতে পরিবহণ করা অব্যাহত রয়েছে। এতে বৃষ্টির কারণে নরম হয়ে যাওয়া রাস্তার পাশের জমিগুলোর আইল ধ্বসে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আশার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমাদের করে কি হবে। জমির মালিক মাটি বিক্রি করলে আমরা কি করতে পারি। তারপরও যদি কোন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন তাহলে তিনি লিখিতভাবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে তিনি যদি তা ফরোয়ার্ড করে উপজেলা কৃষি অফিসারকে দেন তাহলে তার মাধ্যমে আমরা বিষয়টি তদারকি করতে পারি। তা না হলে এক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নাই। জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, কৃষকদের নিষেধ করার পরও তারা মাটি বিক্রি করছে। আমাদের জনবল নেই যে তাদের ধরে ধরে এ বিরত রাখবো। ইটভাটার মালিকরা খুবই শক্তিশালী। তারা কোন কিছুর তোয়াক্কা করেন না। তাদের বাধা নিষেধ করা সত্বেও মাটি কেটে নিয়ে যায়। কামারপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমান জানান, মাটি কেটে নেয়ার ফলে যেমন জমির ও ফসলে ক্ষতি হচ্ছে তেমনি রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা বার বার এ বিষয়ে বলা সত্বেও ইটভাটা মালিকরা জমির মালিকদের টাকার লোভ দেখিয়ে মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে। মাসিক মিটিংয়ে এ বিষয়ে বলেছি কিন্তু তারপরও প্রশাসন কোন উদ্যোগ নেয়নি। উল্লেখ্য, সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নে প্রায় ২২টি ইটভাটা রয়েছে। এই ইটভাটার সিংহভাগ মাটিই আশেপাশের কৃষি জমি থেকে কেটে নেয়া হয়। এর ফলে এ ইউনিয়নের প্রয়োজনীয় কৃষি জমি ব্যাপকভাবে উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে। এতে করে কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমেই কমে যাচেছ। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিস উদাসিন হওয়ায় ইটভাটা মালিকরা কাউকেই আর তোয়াক্কা করছেন না।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত

সৈয়দপুরে কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায় পাশের জমির পাড় ভেঙ্গে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

আপডেট টাইম ০৬:০০:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০১৯

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা : কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কোনভাবেই ইটভাটার জন্য কেটে নেয়া যাবেনা- প্রধানমন্ত্রীর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা থাকা সত্বেও নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের সিংহভাগ কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। এর ফলে ওই জমিগুলোর উর্বরাশক্তি যেমন কমে যাচ্ছে তেমনি মাটি কাটা জমির পাশের জমিগুলোর পাড় ভেঙ্গে পড়ে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এতে মাটি বিক্রি না করেই চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন কৃষকেরা। এ নিয়ে অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না তারা। কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ইটভাটার মালিকরা বেপরোয়াভাবে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে জমিগুলো অতিরিক্ত গভীর করে কাটার ফলে পাশের জমিগুলোতে পানি ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। সে সাথে মাটি বহণে ট্রাক্টর ব্যবহারের কারণে আশেপাশের ফসলী জমিগুলোর ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ সংক্রান্ত অভিযোগ করেছেন কামারপুকুর বক্সাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আফসার আলী। তিনি জানান, ৩০ শতক জমিতে তিনি বোরো ধানের আবাদ করেছেন। কিন্তু তার পাশের জমির মালিক আফজাল মাস্টার ইটভাটার কাছে মাটি বিক্রি করেছেন। একারণে ইটভাটার মালিক এরশাদ প্রায় ৩ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে গেছেন। এতে ওই জমিতে বিশালাকার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে গত কয়েকদিনের বর্ষায় আশেপাশের জমির আইল ভেঙ্গে পড়ে রোপনকৃত ধানের চারাসহ মাটি ধ্বসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবশিষ্ট জমিতে কোন রকমে বাধ দিয়ে পানি সেচ দেয়া হলেও তা বেশিক্ষন ধরে রাখা যাচ্ছেনা। তাছাড়া পাড় ভেঙ্গে পড়ায় বরেন্দ্র সেচ প্রকল্পের নালা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে সেচ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। একারণে বাধ্য হয়ে আফসার আলী তার জমিতে সেচ দেয়ার জন্য ১ হাজার ৮ শ’ টাকায় প্লাস্টিকের পাইপ ও ৮ শ’ টাকা দিয়ে বাঁশ কিনে মজুর সংগ্রহ করে বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করেছেন। এরপরও জমিতে পানি সংরক্ষিত হচ্ছেনা। এমতাবস্থায় সেচের পানি সংকটসহ মাটি কাটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে জানান তিনি। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কৃষি বিভাগ। তাছাড়া এখনও এলাকার বিভিন্ন কৃষি জমি থেকে মাটি কাটাসহ ট্রাক্টরের মাধ্যমে তা ইটভাটাগুলোতে পরিবহণ করা অব্যাহত রয়েছে। এতে বৃষ্টির কারণে নরম হয়ে যাওয়া রাস্তার পাশের জমিগুলোর আইল ধ্বসে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আশার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমাদের করে কি হবে। জমির মালিক মাটি বিক্রি করলে আমরা কি করতে পারি। তারপরও যদি কোন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন তাহলে তিনি লিখিতভাবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালে তিনি যদি তা ফরোয়ার্ড করে উপজেলা কৃষি অফিসারকে দেন তাহলে তার মাধ্যমে আমরা বিষয়টি তদারকি করতে পারি। তা না হলে এক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নাই। জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, কৃষকদের নিষেধ করার পরও তারা মাটি বিক্রি করছে। আমাদের জনবল নেই যে তাদের ধরে ধরে এ বিরত রাখবো। ইটভাটার মালিকরা খুবই শক্তিশালী। তারা কোন কিছুর তোয়াক্কা করেন না। তাদের বাধা নিষেধ করা সত্বেও মাটি কেটে নিয়ে যায়। কামারপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমান জানান, মাটি কেটে নেয়ার ফলে যেমন জমির ও ফসলে ক্ষতি হচ্ছে তেমনি রাস্তাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা বার বার এ বিষয়ে বলা সত্বেও ইটভাটা মালিকরা জমির মালিকদের টাকার লোভ দেখিয়ে মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে। মাসিক মিটিংয়ে এ বিষয়ে বলেছি কিন্তু তারপরও প্রশাসন কোন উদ্যোগ নেয়নি। উল্লেখ্য, সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নে প্রায় ২২টি ইটভাটা রয়েছে। এই ইটভাটার সিংহভাগ মাটিই আশেপাশের কৃষি জমি থেকে কেটে নেয়া হয়। এর ফলে এ ইউনিয়নের প্রয়োজনীয় কৃষি জমি ব্যাপকভাবে উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে। এতে করে কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমেই কমে যাচেছ। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিস উদাসিন হওয়ায় ইটভাটা মালিকরা কাউকেই আর তোয়াক্কা করছেন না।