ঢাকা ০৭:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সেতু না থাকায় দুই উপজেলার বাসিন্দারা বছরের পর বছর দুর্ভোগ ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাচনে ১০ মনোনায়ন জমা, ০১ জন বিএনপি কুমিল্লায় অষ্টমী স্নানোৎসবে ভক্ত পূণ্যার্থী ঢল মুলাদী আড়িয়াল খাঁ নদীতে ডুবে যাওয়া দুই বোনের মৃতদেহ উদ্ধার। বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা। কুমিল্লার চার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়বেন ১৪ জন প্রার্থী গজারিয়ায় ৩ হেভিওয়েটসহ চেয়ারম্যান পদে ৫,ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ নারায়ণগঞ্জে মাই টিভির ১৫ তম প্রতিষ্ঠাতা বার্ষিক উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত ফিরিঙ্গিবাজারে বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে তিন হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা মেয়রের গজারিয়ায় অজ্ঞাত তরুনীর রক্তাত লাশ উদ্ধার

সাতক্ষীরার হাবিবুরের খন্ডিত লাশ বাড়িতে :: পরিবারে শোকের মাতম।

মাতৃভূমির খবর ডেস্ক : বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে পাঁচখন্ড করা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউুনয়নের ওমরাপাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের(২৬) লাশ শনিবার সন্ধা ৬টায় তার নিজ বাড়িতে আনার পর চলছে শোকের মাতম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নামাজে জানাযা শেষে সবুজের লাশ তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।শনিবার সকালে ওমরাপাড়া গ্রামে গেলে নিহত সবুজের বোন মনিরা খাতুন জানান, তারা দু’ভাই বোন। সম্প্রতি একই উপজেলার দামারপোতায় খাঁন গোলাম মোস্তফার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। ভাই সবুজ আশাশুনি উপজেলার গুনাকারকাটি গ্রামের নানার বাড়ি থেকে বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এইচএসসি ও পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে সাতক্ষীরা দিবা নৈশ কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করার পর ঢাকার মীরপুর বাংলা কলেজে মাস্টার্স এ ভর্তি হয়। তবে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের আব্দুল আওয়ালের মেয়ে মারিয়াকে এক বছর আগে বিয়ে করলেও দেড় মাস আগে পারিবারিকভাবে মেনে নিয়ে বাড়িতে তোলা হয়। বর্তমানে মারিয়া আন্তঃস্বত্বা। মা রাবেয়া খাতুন জানান, স্নাতক পাশ করার পর সবুজ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার জন্য তার সেঝ মামা  রফিকুল ইসলাম ও বাবার কাছ থেকে নেওয়া ১৫ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি করেছে। কয়েক বছর আগে পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়ে খুলনা প্রাইট সিকিউরিটি সার্ভিসের চাকুরি নেয়। সেখান থেকে বের হয়ে সে পাটকেলঘাটায় হারবাল চিকিৎসা করতো। প্রতিবেশি নুর আলী গাজীর ছেলে বড়বাজারে কাঁচা মালের আড়তে কর্মরত ওবায়দুল্লাহ তার খুব ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল। তার (রাবেয়া) গলায়, ঘাড়ে ও মাথায় এক ধরণের অসুবিধা দেখা দেওয়ায় তাকে নিয়ে ভারতের ভেলোরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সবুজ। ১৩ মার্চ তাদের পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল।

রাবেয়া খাতুন আরো জানান, আউট সোর্সিং  এ চাকুরি দেওয়ার নামে ২২ লাখ টাকা সবুজ নিয়েছে এমন অভিযোগে খুলনার হাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি এক বছর আগে কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের মুরাদসহ ৭/৮জন প্রতিবেশী নিয়ে  জহুর আলী সানার ছেলে আবু জাফরকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যায়। এর পরেও কয়েকবার ওই চক্রটি তাদের বাড়িতে এসে টাকার দাবিতে হুমকি দেয়। টাকা ফেরৎ না দিলে সবুজকে কেটে টুকরো টুকরো করা হবে বলেও জানায় তারা। এ ঘটনায় সবুজ বাদি হয়ে হুমকিদাতাদের নামে সাতক্ষীরা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১০৭ ধারায় মামলা করে। মামলাটি আজো বিচারাধীন। তবে ২৫ লাখ টাকার দাবিতে হাফিজুর রহমান খুলনা কোর্টে মামলা করলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় সবুজের বিরুদ্ধে। আদালতে আত্মসমর্পণ করলে এক মাস পর সবুজ জামিনে মুক্তি পায়। এরপরও হুমকি ধামকি অব্যাহত ছিল।তবে সাতক্ষীরা সদরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের আওরঙ্গজেব সরদারের ছেলে আবু সাঈদ জানান, হাবিবুর রহমানের কথা মত ব্যাংক থেকে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ পেতে দু’ সপ্তাহ আগে হাবিবের সহযোগী খুলনার জনৈক আসাদের কাছে জমির কাগজপত্রসহ দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন।সবুজের ফুফাত ভাই ইয়াছিন আলী জানান, গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে সবুজ তার (নীল রঙ এর) এপাচি ১৫০ মোটর সাইকেল সাতক্ষীরা মেট্রো-১১-৯৬০৬ নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বৃহষ্পতিবার দুপুরে খুলনা সদর থানায় ২৯৩ নং সাধারণ ডায়েরী করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সবুজের মোবাইল থেকে পরিচয় না দিয়েই সবুজের শ্বশুরের মোবাইল ফোনে কল করা হয়। ফোনে তাকে খুলনার ফুলতলা অগ্রণী ব্যাংকের দোতলায় এসে ছয় লাখ টাকা দিয়ে সবুজকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে বলে। তাদের কাছে সবুজের চেক ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাক্ষর করা আছে বলে জানানো হয়।
একইভাবে তার কাছেও মোবাইল করে একই কথা বলা হয়। তাকে খুন করা হয়েছে বলায় তারা মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বুধবার, বৃহষ্পতিবার ও শুক্রবার খুলনার সোনাডাঙা থানা ও সদর থানার তিনটি স্থান থেকে সবুজের বস্তবন্ধি লাশ, দু’ হাত, মাথা ও বাম পা উদ্ধার করা হলেও মেলেনি ডান পা। ইলেকট্রিক করাত দিয়ে সবুজের দেহ ছয়টি ভাগ করে কয়েকটি স্থানে ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান, হাবিবুর রহমান সবুজকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় তার ভগ্নিপতি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দামারপোতা গ্রামের গোলাম মোস্তফা বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে শুক্রবার রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করা যায়নি। গ্রেফতার করা যায়নি কোন  ব্যক্তিকে।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার উপপরিদর্শক সুজিত কুমার মিস্ত্রী জানান, তিনি শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মামলার কাগজপত্র হাতে পাননি। হাতে পাওয়ার পর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য চিরুনি অভিযান চালানো হবে।
Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

সেতু না থাকায় দুই উপজেলার বাসিন্দারা বছরের পর বছর দুর্ভোগ

সাতক্ষীরার হাবিবুরের খন্ডিত লাশ বাড়িতে :: পরিবারে শোকের মাতম।

আপডেট টাইম ০৬:০১:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০১৯
মাতৃভূমির খবর ডেস্ক : বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে পাঁচখন্ড করা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউুনয়নের ওমরাপাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের(২৬) লাশ শনিবার সন্ধা ৬টায় তার নিজ বাড়িতে আনার পর চলছে শোকের মাতম। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নামাজে জানাযা শেষে সবুজের লাশ তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।শনিবার সকালে ওমরাপাড়া গ্রামে গেলে নিহত সবুজের বোন মনিরা খাতুন জানান, তারা দু’ভাই বোন। সম্প্রতি একই উপজেলার দামারপোতায় খাঁন গোলাম মোস্তফার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। ভাই সবুজ আশাশুনি উপজেলার গুনাকারকাটি গ্রামের নানার বাড়ি থেকে বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এইচএসসি ও পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে সাতক্ষীরা দিবা নৈশ কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করার পর ঢাকার মীরপুর বাংলা কলেজে মাস্টার্স এ ভর্তি হয়। তবে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের আব্দুল আওয়ালের মেয়ে মারিয়াকে এক বছর আগে বিয়ে করলেও দেড় মাস আগে পারিবারিকভাবে মেনে নিয়ে বাড়িতে তোলা হয়। বর্তমানে মারিয়া আন্তঃস্বত্বা। মা রাবেয়া খাতুন জানান, স্নাতক পাশ করার পর সবুজ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার জন্য তার সেঝ মামা  রফিকুল ইসলাম ও বাবার কাছ থেকে নেওয়া ১৫ লাখ টাকারও বেশি ক্ষতি করেছে। কয়েক বছর আগে পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়ে খুলনা প্রাইট সিকিউরিটি সার্ভিসের চাকুরি নেয়। সেখান থেকে বের হয়ে সে পাটকেলঘাটায় হারবাল চিকিৎসা করতো। প্রতিবেশি নুর আলী গাজীর ছেলে বড়বাজারে কাঁচা মালের আড়তে কর্মরত ওবায়দুল্লাহ তার খুব ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল। তার (রাবেয়া) গলায়, ঘাড়ে ও মাথায় এক ধরণের অসুবিধা দেখা দেওয়ায় তাকে নিয়ে ভারতের ভেলোরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সবুজ। ১৩ মার্চ তাদের পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল।

রাবেয়া খাতুন আরো জানান, আউট সোর্সিং  এ চাকুরি দেওয়ার নামে ২২ লাখ টাকা সবুজ নিয়েছে এমন অভিযোগে খুলনার হাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি এক বছর আগে কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের মুরাদসহ ৭/৮জন প্রতিবেশী নিয়ে  জহুর আলী সানার ছেলে আবু জাফরকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যায়। এর পরেও কয়েকবার ওই চক্রটি তাদের বাড়িতে এসে টাকার দাবিতে হুমকি দেয়। টাকা ফেরৎ না দিলে সবুজকে কেটে টুকরো টুকরো করা হবে বলেও জানায় তারা। এ ঘটনায় সবুজ বাদি হয়ে হুমকিদাতাদের নামে সাতক্ষীরা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১০৭ ধারায় মামলা করে। মামলাটি আজো বিচারাধীন। তবে ২৫ লাখ টাকার দাবিতে হাফিজুর রহমান খুলনা কোর্টে মামলা করলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় সবুজের বিরুদ্ধে। আদালতে আত্মসমর্পণ করলে এক মাস পর সবুজ জামিনে মুক্তি পায়। এরপরও হুমকি ধামকি অব্যাহত ছিল।তবে সাতক্ষীরা সদরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের আওরঙ্গজেব সরদারের ছেলে আবু সাঈদ জানান, হাবিবুর রহমানের কথা মত ব্যাংক থেকে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ পেতে দু’ সপ্তাহ আগে হাবিবের সহযোগী খুলনার জনৈক আসাদের কাছে জমির কাগজপত্রসহ দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন।সবুজের ফুফাত ভাই ইয়াছিন আলী জানান, গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে সবুজ তার (নীল রঙ এর) এপাচি ১৫০ মোটর সাইকেল সাতক্ষীরা মেট্রো-১১-৯৬০৬ নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বৃহষ্পতিবার দুপুরে খুলনা সদর থানায় ২৯৩ নং সাধারণ ডায়েরী করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সবুজের মোবাইল থেকে পরিচয় না দিয়েই সবুজের শ্বশুরের মোবাইল ফোনে কল করা হয়। ফোনে তাকে খুলনার ফুলতলা অগ্রণী ব্যাংকের দোতলায় এসে ছয় লাখ টাকা দিয়ে সবুজকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে বলে। তাদের কাছে সবুজের চেক ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাক্ষর করা আছে বলে জানানো হয়।
একইভাবে তার কাছেও মোবাইল করে একই কথা বলা হয়। তাকে খুন করা হয়েছে বলায় তারা মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বুধবার, বৃহষ্পতিবার ও শুক্রবার খুলনার সোনাডাঙা থানা ও সদর থানার তিনটি স্থান থেকে সবুজের বস্তবন্ধি লাশ, দু’ হাত, মাথা ও বাম পা উদ্ধার করা হলেও মেলেনি ডান পা। ইলেকট্রিক করাত দিয়ে সবুজের দেহ ছয়টি ভাগ করে কয়েকটি স্থানে ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর জানান, হাবিবুর রহমান সবুজকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় তার ভগ্নিপতি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দামারপোতা গ্রামের গোলাম মোস্তফা বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে শুক্রবার রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করা যায়নি। গ্রেফতার করা যায়নি কোন  ব্যক্তিকে।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার উপপরিদর্শক সুজিত কুমার মিস্ত্রী জানান, তিনি শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মামলার কাগজপত্র হাতে পাননি। হাতে পাওয়ার পর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য চিরুনি অভিযান চালানো হবে।