ঢাকা ০৮:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ “২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ” –মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে ৫৩ কেজি গাঁজাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; মাদক বহনে ব্যবহৃত পিকআপ জব্দ। “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন … লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন‍্য বিশেষ নামাজ আদায় মিছিল ও শোডাউন করায় মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মানিক দর্জিকে শোকজ

সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে বদলে গেছে দেশের আবাসন খাতের সার্বিক চিত্র

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ
তত্ত্বাবধানে প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহান সংবিধানে বাসস্থানকে খাদ্য, বস্ত্র,
চিকিৎসা ও শিক্ষার ন্যায় অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা ৭০০ কোটিরও বেশি। এ বিশাল জনসংখ্যার মানসম্মত আবাসন
নিশ্চিত করা ধনী-দরিদ্র, উন্নত-অনুন্নত বা উন্নয়নশীল যেকোনো দেশের জন্য একটি বড়
চ্যালেঞ্জ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, করোণা মহামারী ও সংঘাতপূর্ণ বিশ্ব পরিস্থিতি বিশেষ
করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষিতে উদ্ভূত বৈশ্বিক সংকট এই চ্যালেঞ্জের সাথে যোগ
করেছেন নতুন মাত্রা। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে তথা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ
প্রতিবছর নতুন করে বাসস্থানের সংকটে পতিত হচ্ছে। করোনা মহামারীর কারণে সাম্প্রতিক
সময়ে কর্মহীন হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। এতে অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি বাসস্থানের
সংকট তৈরি হয়েছে নতুন করে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোতে
উদ্বাস্তু সংকটের পাশাপাশি নানাবিধ অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে যার প্রভাব পড়েছে
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশেও। সামগ্রিকভাবে আবাসন খাতে বর্তমান
বৈশ্বিক পরিস্থিতি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। এ সংকট উত্তরণে প্রয়োজন সকলের
সম্মিলিত প্রয়াস ও আন্তরিক সহযোগীতা। এ সহযোগীতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে
প্রয়োজন। কোনো একক ব্যক্তি, জাতি বা রাষ্ট্রের জন্য একক প্রচেষ্টা অপেক্ষা সম্মিলিত
প্রচেষ্টা এক্ষেত্রে অধিকতর সফলতা নিশ্চিতে সক্ষম।
‘কেউ পিছিয়ে থাকবে না’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ভূমিহীন এবং গৃহহীন
মানুষের আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করেন। একটি ঘর এখন
সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে, যার
মধ্যে রয়েছে একটি বিচ্ছিন্ন পরিবারের দারিদ্র্যমোচন। প্রতিটি নিরাপদ বাড়ি পরিবারের সবাইকে
বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আত্মবিশ্বাসী এবং সক্রিয় করে
তোলে। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু করে, গৃহহীন ও অসহায় দরিদ্র
মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। ভূমিহীন, গৃহহীন, দুঃখী এবং উদ্বাস্তু পরিবারের স্বামী –
স্ত্রীর যৌথ নামে জমি ও বাড়ির মালিকানা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা এবং
স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্ত মহিলাদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পুনর্বাসিত পরিবারকে
মালিকানা নিয়ে ভবিষ্যতে বিবাদে জড়াতে না দেওয়ার জন্য জমির মালিকানা দলিল, বরাদ্দপত্র
এবং শিরোনাম দলিল হস্তান্তর করা হচ্ছে। পুনর্বাসিত পরিবারগুলিকে 3 মাসের জন্য ভিজিএফ
প্রোগ্রামের আওতায় আনা হচ্ছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সামাজিক সুবিধা কর্মসূচির
আওতায় মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধীদের সুবিধা অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা
করা হচ্ছে। পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনশীল এবং আয় সৃষ্টিকারী কাজে
নিয়োজিত করার জন্য ব্যবহারিক এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তাদের
আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, সমবায় বিভাগ, মহিলা ও শিশু
বিভাগ, সমাজসেবা বিভাগসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থা থেকে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। অন্যান্য
সামাজিক সংগঠন এবং এনজিওগুলিও এই কর্মসূচির সাথে জড়িত। পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য বিনামূল্যে
বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয় এবং প্রকল্পস্থলে নিরাপদ পানির জন্য টিউবওয়েল স্থাপন করা হচ্ছে।
কমিউনিটি সেন্টার, নামাজের কক্ষ, কবরস্থান, পুকুর এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের রাস্তাগুলিও
সহজতর করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফল, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হচ্ছে। গৃহহীন
মানুষদেরও কৃষি কাজে যুক্ত হতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুভূত আবাসন কার্যক্রমের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো জাতিসংঘের
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরাসরি ভূমিকা রাখা। একা ঘর নির্মাণের মাধ্যমে বিভিন্ন টেকসই

উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হতে পারে। কিন্তু একটি বিশেষ গোষ্ঠীর আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য,
নিরাপত্তা, ক্ষমতায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বিত উন্নয়ন এসডিজি
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সাথে সম্পর্কিত। এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে এবং
একটি সমন্বিত নীতি কাঠামো প্রণয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রধান কারণ হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক
কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। একই সাথে, এসডিজিকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকি পরিকল্পনার
(২০২১–২০২৫) সাথে একীভূত করা হয়েছে। উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সমাজের দরিদ্র,
অনগ্রসর এবং পিছিয়ে পড়া অংশকে বৃহৎ পরিসরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে একীভূত করা হয়েছে।
মুজিব বর্ষের বিশেষ উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে জমি ও
বাড়ি প্রদান করে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহিত অগ্রাধিকার
নীতি "যিনি পিছনে আছেন তাকে অবশ্যই সামনে আসতে হবে" দেশের সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের
গতি আরও ত্বরান্বিত করবে।

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে অতি সম্প্রতি উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত
বাংলাদেশের আবাসন খাতে গত এক যুগে ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ইতোমধ্যে
কক্সবাজার জেলার খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বাস্তবায়ন করা হয়েছে বিশ্বের
সর্ববৃহদ আশ্রয়ন প্রকল্প। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা
মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে ১ লাখ ৮৫ হাজার ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতক করে ভূমি
প্রদান ও গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  হাত ধরে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি
তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমান লক্ষীপুর) জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে
ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫
আগস্ট দেশী ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে
সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের মতো
জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো স্থবির হয়ে পড়ে।  বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর
পর  তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার
দায়িত্ব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো পুনরায় শুরু করেন।
তাই তিনি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল’ সামনে এনে পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল মানুষকে
মূলধারায় আনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে
বঙ্গবন্ধুকন্যা কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের
পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন এবং একই বছর তিনি সারা দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে
পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শুরু করেন “আশ্রয়ণ প্রকল্প”।
১৯৯৭ সালে প্রকল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে
ব্যারাক, ফ্ল্যাট, বিভিন্ন প্রকার ঘর ও মুজিববর্ষের একক গৃহে মোট ৫ লক্ষ ৭ হাজার ২৪৪টি
ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছারা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও এর
অধীন বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার মাধ্যমে সারাদেশে বিপুল সংখ্যক ফ্ল্যাট নির্মাণ ও প্লট উন্নয়ন
করা হয়েছে। ভুমি উন্নয়নের মাধ্যমে নির্মিত এসব প্লট বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে
ইতোমধ্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এসব প্লটে ব্যক্তি উদ্যোগে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে।
এছার রাজধানীর কেরানীগঞ্জে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে পিপিপির ভিত্তিতে ২৫ হাজারের বেশী
ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে যার কজার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকারী চাকুরীজীবী কর্মকর্তাদের
জন্য জরাজীর্ণ আবাসিক ভবনের স্থলে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বহুতল ভবন নির্মাণ
করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ,
২০১৫-২০৩৫) এর গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। হালনাগাদ করা হয়েছে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-
২০২০। দেশের বড় বড় শহর ও গ্রোথ সেন্টারের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা
হয়েছে মাস্টার প্লান। এছারা আবাসন খাতের উন্নয়নে কাজ করছে এমন বিভিন্ন বেসরকারী
প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারনে এই খাতে সরকার নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বিশেষ
করে অতি সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণ সামগ্রিক অত্যধিক মূল্য বৃদ্ধি, ভূমির ব্যবহারে সর্তকতা
অবলম্বন, মনুষ্যসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের নতুন মাত্রা এবং করোনা মহামারীর কারণে দেশের
আবাসন শিল্প নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সংকট উত্তরণে মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা
চালিয়ে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই এই সংকট উত্তরণে সফলতা আসবে এবং সবার জন্য মানসম্মত
আবাসন নিশ্চিতে সরকারের যে লক্ষ্য তা যথাসময়ে অর্জিত হবে। এক্ষেত্রে সকলের ঐকান্তিক
প্রচেষ্টা ও সার্বিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
আবাসন কর্মসূচির প্রধান সুবিধাভোগীরা হলেন বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের (১০.৫ শতাংশ)
বসবাসকারী মানুষ। ফলে দারিদ্র্যমোচনে এই প্রকল্প অবশ্যই কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। দেশের পিছিয়ে
পড়া এলাকাগুলো এই কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছে। একই সময়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হরিজন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, চা
শ্রমিক, ভূমিহীন কৃষক, তৃতীয় লিঙ্গ, জলবায়ু শরণার্থী, প্রতিবন্ধী, অসহায় এবং অত্যন্ত দরিদ্র
মহিলারা এই কর্মসূচির প্রধান সুবিধাভোগী। এই কর্মসূচির মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আয় ও
উৎপাদনশীল সম্পদে তাদের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, ন্যূনতম শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি অর্জন সম্ভব।
এসডিজি ২০৩০ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের ফলে বৈষম্য হ্রাস, বিভিন্ন সেবা, বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি এবং
নাগরিক অধিকার আরও উন্নত হবে। এটি লিঙ্গ ও জাতিগত বৈষম্যেরও অবসান ঘটাবে। শুধু আবাসন
নিজেই কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য উপার্জনের সুযোগের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এক জায়গা থেকে
সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সহজ হবে। পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং স্বাস্থ্যসেবা
সহকারীরাও গ্রামীণ এলাকায় সুবিধাভোগীদের সাথে নিয়মিত সংযোগ স্থাপন করে সেবা প্রদান করতে
সক্ষম হবে। স্থানীয় পর্যায়ে, নির্মাণ সামগ্রী সরাসরি গ্রামীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়, যার ফলে
নির্মাণ ব্যয় কম হয় এবং একই সাথে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়। এই একটি প্রকল্পের মাধ্যমে
বাংলাদেশের পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের নতুন দিগন্তের দ্বার উম্মোচন
হবে।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড

সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে বদলে গেছে দেশের আবাসন খাতের সার্বিক চিত্র

আপডেট টাইম ০৭:৪৮:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ
তত্ত্বাবধানে প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহান সংবিধানে বাসস্থানকে খাদ্য, বস্ত্র,
চিকিৎসা ও শিক্ষার ন্যায় অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা ৭০০ কোটিরও বেশি। এ বিশাল জনসংখ্যার মানসম্মত আবাসন
নিশ্চিত করা ধনী-দরিদ্র, উন্নত-অনুন্নত বা উন্নয়নশীল যেকোনো দেশের জন্য একটি বড়
চ্যালেঞ্জ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, করোণা মহামারী ও সংঘাতপূর্ণ বিশ্ব পরিস্থিতি বিশেষ
করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষিতে উদ্ভূত বৈশ্বিক সংকট এই চ্যালেঞ্জের সাথে যোগ
করেছেন নতুন মাত্রা। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে তথা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ
প্রতিবছর নতুন করে বাসস্থানের সংকটে পতিত হচ্ছে। করোনা মহামারীর কারণে সাম্প্রতিক
সময়ে কর্মহীন হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। এতে অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি বাসস্থানের
সংকট তৈরি হয়েছে নতুন করে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোতে
উদ্বাস্তু সংকটের পাশাপাশি নানাবিধ অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে যার প্রভাব পড়েছে
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশেও। সামগ্রিকভাবে আবাসন খাতে বর্তমান
বৈশ্বিক পরিস্থিতি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। এ সংকট উত্তরণে প্রয়োজন সকলের
সম্মিলিত প্রয়াস ও আন্তরিক সহযোগীতা। এ সহযোগীতা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে
প্রয়োজন। কোনো একক ব্যক্তি, জাতি বা রাষ্ট্রের জন্য একক প্রচেষ্টা অপেক্ষা সম্মিলিত
প্রচেষ্টা এক্ষেত্রে অধিকতর সফলতা নিশ্চিতে সক্ষম।
‘কেউ পিছিয়ে থাকবে না’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ভূমিহীন এবং গৃহহীন
মানুষের আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করেন। একটি ঘর এখন
সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে, যার
মধ্যে রয়েছে একটি বিচ্ছিন্ন পরিবারের দারিদ্র্যমোচন। প্রতিটি নিরাপদ বাড়ি পরিবারের সবাইকে
বর্তমান ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আত্মবিশ্বাসী এবং সক্রিয় করে
তোলে। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু করে, গৃহহীন ও অসহায় দরিদ্র
মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। ভূমিহীন, গৃহহীন, দুঃখী এবং উদ্বাস্তু পরিবারের স্বামী –
স্ত্রীর যৌথ নামে জমি ও বাড়ির মালিকানা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা এবং
স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্ত মহিলাদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পুনর্বাসিত পরিবারকে
মালিকানা নিয়ে ভবিষ্যতে বিবাদে জড়াতে না দেওয়ার জন্য জমির মালিকানা দলিল, বরাদ্দপত্র
এবং শিরোনাম দলিল হস্তান্তর করা হচ্ছে। পুনর্বাসিত পরিবারগুলিকে 3 মাসের জন্য ভিজিএফ
প্রোগ্রামের আওতায় আনা হচ্ছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সামাজিক সুবিধা কর্মসূচির
আওতায় মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধীদের সুবিধা অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা
করা হচ্ছে। পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনশীল এবং আয় সৃষ্টিকারী কাজে
নিয়োজিত করার জন্য ব্যবহারিক এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তাদের
আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, সমবায় বিভাগ, মহিলা ও শিশু
বিভাগ, সমাজসেবা বিভাগসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থা থেকে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। অন্যান্য
সামাজিক সংগঠন এবং এনজিওগুলিও এই কর্মসূচির সাথে জড়িত। পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য বিনামূল্যে
বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয় এবং প্রকল্পস্থলে নিরাপদ পানির জন্য টিউবওয়েল স্থাপন করা হচ্ছে।
কমিউনিটি সেন্টার, নামাজের কক্ষ, কবরস্থান, পুকুর এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের রাস্তাগুলিও
সহজতর করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফল, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হচ্ছে। গৃহহীন
মানুষদেরও কৃষি কাজে যুক্ত হতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুভূত আবাসন কার্যক্রমের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো জাতিসংঘের
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরাসরি ভূমিকা রাখা। একা ঘর নির্মাণের মাধ্যমে বিভিন্ন টেকসই

উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হতে পারে। কিন্তু একটি বিশেষ গোষ্ঠীর আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য,
নিরাপত্তা, ক্ষমতায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বিত উন্নয়ন এসডিজি
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সাথে সম্পর্কিত। এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে এবং
একটি সমন্বিত নীতি কাঠামো প্রণয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রধান কারণ হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক
কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। একই সাথে, এসডিজিকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকি পরিকল্পনার
(২০২১–২০২৫) সাথে একীভূত করা হয়েছে। উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সমাজের দরিদ্র,
অনগ্রসর এবং পিছিয়ে পড়া অংশকে বৃহৎ পরিসরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে একীভূত করা হয়েছে।
মুজিব বর্ষের বিশেষ উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে জমি ও
বাড়ি প্রদান করে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহিত অগ্রাধিকার
নীতি "যিনি পিছনে আছেন তাকে অবশ্যই সামনে আসতে হবে" দেশের সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের
গতি আরও ত্বরান্বিত করবে।

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে অতি সম্প্রতি উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত
বাংলাদেশের আবাসন খাতে গত এক যুগে ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ইতোমধ্যে
কক্সবাজার জেলার খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বাস্তবায়ন করা হয়েছে বিশ্বের
সর্ববৃহদ আশ্রয়ন প্রকল্প। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা
মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে ১ লাখ ৮৫ হাজার ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতক করে ভূমি
প্রদান ও গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  হাত ধরে ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি
তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমান লক্ষীপুর) জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে
ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫
আগস্ট দেশী ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে
সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের মতো
জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো স্থবির হয়ে পড়ে।  বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর
পর  তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার
দায়িত্ব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো পুনরায় শুরু করেন।
তাই তিনি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল’ সামনে এনে পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল মানুষকে
মূলধারায় আনার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে
বঙ্গবন্ধুকন্যা কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের
পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন এবং একই বছর তিনি সারা দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে
পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শুরু করেন “আশ্রয়ণ প্রকল্প”।
১৯৯৭ সালে প্রকল্পের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে
ব্যারাক, ফ্ল্যাট, বিভিন্ন প্রকার ঘর ও মুজিববর্ষের একক গৃহে মোট ৫ লক্ষ ৭ হাজার ২৪৪টি
ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছারা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও এর
অধীন বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার মাধ্যমে সারাদেশে বিপুল সংখ্যক ফ্ল্যাট নির্মাণ ও প্লট উন্নয়ন
করা হয়েছে। ভুমি উন্নয়নের মাধ্যমে নির্মিত এসব প্লট বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে
ইতোমধ্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এসব প্লটে ব্যক্তি উদ্যোগে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে।
এছার রাজধানীর কেরানীগঞ্জে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে পিপিপির ভিত্তিতে ২৫ হাজারের বেশী
ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে যার কজার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকারী চাকুরীজীবী কর্মকর্তাদের
জন্য জরাজীর্ণ আবাসিক ভবনের স্থলে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বহুতল ভবন নির্মাণ
করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ,
২০১৫-২০৩৫) এর গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। হালনাগাদ করা হয়েছে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-
২০২০। দেশের বড় বড় শহর ও গ্রোথ সেন্টারের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা
হয়েছে মাস্টার প্লান। এছারা আবাসন খাতের উন্নয়নে কাজ করছে এমন বিভিন্ন বেসরকারী
প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারনে এই খাতে সরকার নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বিশেষ
করে অতি সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণ সামগ্রিক অত্যধিক মূল্য বৃদ্ধি, ভূমির ব্যবহারে সর্তকতা
অবলম্বন, মনুষ্যসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের নতুন মাত্রা এবং করোনা মহামারীর কারণে দেশের
আবাসন শিল্প নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সংকট উত্তরণে মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা
চালিয়ে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই এই সংকট উত্তরণে সফলতা আসবে এবং সবার জন্য মানসম্মত
আবাসন নিশ্চিতে সরকারের যে লক্ষ্য তা যথাসময়ে অর্জিত হবে। এক্ষেত্রে সকলের ঐকান্তিক
প্রচেষ্টা ও সার্বিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
আবাসন কর্মসূচির প্রধান সুবিধাভোগীরা হলেন বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের (১০.৫ শতাংশ)
বসবাসকারী মানুষ। ফলে দারিদ্র্যমোচনে এই প্রকল্প অবশ্যই কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। দেশের পিছিয়ে
পড়া এলাকাগুলো এই কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছে। একই সময়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হরিজন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, চা
শ্রমিক, ভূমিহীন কৃষক, তৃতীয় লিঙ্গ, জলবায়ু শরণার্থী, প্রতিবন্ধী, অসহায় এবং অত্যন্ত দরিদ্র
মহিলারা এই কর্মসূচির প্রধান সুবিধাভোগী। এই কর্মসূচির মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আয় ও
উৎপাদনশীল সম্পদে তাদের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, ন্যূনতম শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি অর্জন সম্ভব।
এসডিজি ২০৩০ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের ফলে বৈষম্য হ্রাস, বিভিন্ন সেবা, বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি এবং
নাগরিক অধিকার আরও উন্নত হবে। এটি লিঙ্গ ও জাতিগত বৈষম্যেরও অবসান ঘটাবে। শুধু আবাসন
নিজেই কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য উপার্জনের সুযোগের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এক জায়গা থেকে
সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সহজ হবে। পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং স্বাস্থ্যসেবা
সহকারীরাও গ্রামীণ এলাকায় সুবিধাভোগীদের সাথে নিয়মিত সংযোগ স্থাপন করে সেবা প্রদান করতে
সক্ষম হবে। স্থানীয় পর্যায়ে, নির্মাণ সামগ্রী সরাসরি গ্রামীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়, যার ফলে
নির্মাণ ব্যয় কম হয় এবং একই সাথে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়। এই একটি প্রকল্পের মাধ্যমে
বাংলাদেশের পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের নতুন দিগন্তের দ্বার উম্মোচন
হবে।