ঢাকা ০৭:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ

সম্পত্তি নিয়ে দুই স্ত্রীর দ্বন্দ্বে ৩৬ ঘন্টা ধরে ঘরে পচল স্বামীর লাশ

মরেও যেনো শান্তি পেলেন না সাতক্ষীরার বিশিষ্ট আইনজীবী মো. ইয়ার আলি (৮০)। ষষ্ঠবারের মতো মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল আটটার দিকে মারা যান তিনি। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরার  বাড়ি কলরোয়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে।

তবে বাড়িতে আনার পর ৩৬ ঘন্টা পার হলেও  তার দাফনের কাজ সম্পন্ন হতে পারেনি । পারিবারিক জটিলতায় আটকে আছে তার  দাফনের কাজ। এরই মধ্যে তার মরদেহে পচন ধরেছে। মঙ্গলবার বিকালে এই রিপোর্ট লেখার সময়ও তার মরদেহ ছিল প্রয়াত আইনজীবীর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে। দাফনে বাধা দিয়েছেন প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও তার ছেলেমেয়েরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অ্যাডভোকেট ইয়ার  আলির দুই স্ত্রীর প্রথমা জোহরা খাতুনের চার মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছেন। অপরদিকে দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিদা খানমের রয়েছে একমাত্র ছেলে প্রিন্স।  ইয়ার আলি তার জীবদ্দশায় তার ৩০ বিঘারও বেশি সম্পত্তি, কোটি টাকার উপরের ব্যাংক ব্যালান্স এমনকি বসতবাড়ির পুরোটাই তার দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী ও ছেলে প্রিন্সের নামে লিখে দিয়েছেন।

এখন জমি বাড়ি ও গচ্ছিত টাকাা এক কড়িও পাননি তার  প্রথমপক্ষের স্ত্রী ও তার সন্তানরা। অ্যাডভোকেট ইয়ার আলির মৃত্যুর পর তারা পৈতৃক সম্পত্তি ও টাকাকড়ির দাবি করেছেন। এসব না পাওয়া পর্যন্ত তারা ইয়ার আলিকে দাফন করতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

এরই মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য তার বাড়িতে গেছেন সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেনসহ আইনজীবীদের একটি দল। একই সাথে সেখানে বারবার গেছেন কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  (ওসি) মারুফ আহম্মদ এবং স্থানীয় কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান হোসেনসহ অনেকেই। তারা বিষয়টি সমঝোতামূলকভাবে নিষ্পত্তির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ফলে মঙ্গলবার বিকাল নাগাদও তাকে দাফন করা হয়নি।

এরই মধ্যে মরদেহে পচন ধরতে শুরু করেছে বলে জানান এলাকাবাসী। চেয়ারম্যান জানান তার পেট ফুলে গেছে। নাক ও কান বেয়ে রক্ত আসছে। দুর্গন্ধ ছুটছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলির প্রথমপক্ষের স্ত্রী জোহরা খাতুনের ছেলে অ্যাড. হাসনাত কবির জানান , আমার বাবা আমার  মা ও তার চার মেয়ে এবং আমাকে সহ প্রথমপক্ষের সবাইকে জমি টাকা ও বাড়ির স্বত্ত্ব থেকে বঞ্চিত করে গেছেন।  তিনি আমাদের কাউকে এক কানাকড়িও দেননি।  তিনি তার সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দ্বিতীয়পক্ষের মা ও তার ছেলে প্রিন্সকে দিয়ে গেছেন। এতেই আমরা ক্ষুব্ধ। সহায় সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ আমাদের নামে না দেওয়া পর্যন্ত তার লাশ দাফন করতে দেওয়া হবে না।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বারবার চেষ্টা করেও দাফনে নিজের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ইমরান হোসেন বলেন প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী দুই পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড়।

তিনি বলেন, প্রথমপক্ষ বলছে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক তাদেরকে কিছু সম্পদ দিতে হবে। অপরদিকে দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী ও তার সন্তানদের দাবি প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলিকে গত ৩২ বছর ধরে সেবা দিচ্ছেন তারা। এজন্য তিনি সন্তুষ্ট  হয়ে সব কিছু তাদের নামে দিয়ে গেছেন। এর থেকে এক শতক জমিও আমরা দেব না।

চেয়ারম্যান জানান,  গ্রামের ৯৯ শতাংশ মানুষ চায় প্রথমপক্ষকে কিছু সম্পদ দিতে। কিন্তু তাদের চাওয়াও নিস্ফল হয়ে গেছে। তবে দ্বিতীয়পক্ষের দাবি প্রয়াত ইয়ার আলি তার পৈতৃক জমির পুরোটাই প্রথমপক্ষকে দিয়ে গেছেন। তবে নিজের উপার্জিত অর্থ ও সম্পদের কোনা অংশ তাদের দেননি।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়পক্ষ সাড়ে সাত বিঘা জমি নিজেদের নামে রেখে বাকিটা ভাগবাটোয়ারা করে দিতে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে স্ট্যাম্পে লেখালেখি চলছে। এটি হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মদ জানান প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলির দাফন সম্পন্ন করার নির্দেশ চেয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি সাতক্ষীরা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেছে।

এই আবেদনের প্রেক্ষিতে যথাযথ নির্দেশ পেলে প্রয়োজনে পুলিশ তাকে ইসলামী শরিয়ত মতে দাফন করার ব্যবস্থা করবে। ওসি আরও বলেন তিনি এমন একটি নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এদিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেন বলেন, আমি সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। শেষ পর্যন্ত আদালতের শরণাপন্ন হয়ে দাফনের নির্দেশ পেয়েছি। এই নির্দেশের কপি কলারোয়া থানায় পৌঁছালেই পুলিশ তার দাফনের ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি জানান । সন্ধ্যা নাগাদ বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে পারে বলেও  জানান তিনি।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত

সম্পত্তি নিয়ে দুই স্ত্রীর দ্বন্দ্বে ৩৬ ঘন্টা ধরে ঘরে পচল স্বামীর লাশ

আপডেট টাইম ০৮:০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ অগাস্ট ২০১৮

মরেও যেনো শান্তি পেলেন না সাতক্ষীরার বিশিষ্ট আইনজীবী মো. ইয়ার আলি (৮০)। ষষ্ঠবারের মতো মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল আটটার দিকে মারা যান তিনি। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরার  বাড়ি কলরোয়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে।

তবে বাড়িতে আনার পর ৩৬ ঘন্টা পার হলেও  তার দাফনের কাজ সম্পন্ন হতে পারেনি । পারিবারিক জটিলতায় আটকে আছে তার  দাফনের কাজ। এরই মধ্যে তার মরদেহে পচন ধরেছে। মঙ্গলবার বিকালে এই রিপোর্ট লেখার সময়ও তার মরদেহ ছিল প্রয়াত আইনজীবীর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে। দাফনে বাধা দিয়েছেন প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও তার ছেলেমেয়েরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অ্যাডভোকেট ইয়ার  আলির দুই স্ত্রীর প্রথমা জোহরা খাতুনের চার মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছেন। অপরদিকে দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিদা খানমের রয়েছে একমাত্র ছেলে প্রিন্স।  ইয়ার আলি তার জীবদ্দশায় তার ৩০ বিঘারও বেশি সম্পত্তি, কোটি টাকার উপরের ব্যাংক ব্যালান্স এমনকি বসতবাড়ির পুরোটাই তার দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী ও ছেলে প্রিন্সের নামে লিখে দিয়েছেন।

এখন জমি বাড়ি ও গচ্ছিত টাকাা এক কড়িও পাননি তার  প্রথমপক্ষের স্ত্রী ও তার সন্তানরা। অ্যাডভোকেট ইয়ার আলির মৃত্যুর পর তারা পৈতৃক সম্পত্তি ও টাকাকড়ির দাবি করেছেন। এসব না পাওয়া পর্যন্ত তারা ইয়ার আলিকে দাফন করতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

এরই মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য তার বাড়িতে গেছেন সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেনসহ আইনজীবীদের একটি দল। একই সাথে সেখানে বারবার গেছেন কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  (ওসি) মারুফ আহম্মদ এবং স্থানীয় কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান হোসেনসহ অনেকেই। তারা বিষয়টি সমঝোতামূলকভাবে নিষ্পত্তির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ফলে মঙ্গলবার বিকাল নাগাদও তাকে দাফন করা হয়নি।

এরই মধ্যে মরদেহে পচন ধরতে শুরু করেছে বলে জানান এলাকাবাসী। চেয়ারম্যান জানান তার পেট ফুলে গেছে। নাক ও কান বেয়ে রক্ত আসছে। দুর্গন্ধ ছুটছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলির প্রথমপক্ষের স্ত্রী জোহরা খাতুনের ছেলে অ্যাড. হাসনাত কবির জানান , আমার বাবা আমার  মা ও তার চার মেয়ে এবং আমাকে সহ প্রথমপক্ষের সবাইকে জমি টাকা ও বাড়ির স্বত্ত্ব থেকে বঞ্চিত করে গেছেন।  তিনি আমাদের কাউকে এক কানাকড়িও দেননি।  তিনি তার সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দ্বিতীয়পক্ষের মা ও তার ছেলে প্রিন্সকে দিয়ে গেছেন। এতেই আমরা ক্ষুব্ধ। সহায় সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ আমাদের নামে না দেওয়া পর্যন্ত তার লাশ দাফন করতে দেওয়া হবে না।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বারবার চেষ্টা করেও দাফনে নিজের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ইমরান হোসেন বলেন প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী দুই পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড়।

তিনি বলেন, প্রথমপক্ষ বলছে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক তাদেরকে কিছু সম্পদ দিতে হবে। অপরদিকে দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী ও তার সন্তানদের দাবি প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলিকে গত ৩২ বছর ধরে সেবা দিচ্ছেন তারা। এজন্য তিনি সন্তুষ্ট  হয়ে সব কিছু তাদের নামে দিয়ে গেছেন। এর থেকে এক শতক জমিও আমরা দেব না।

চেয়ারম্যান জানান,  গ্রামের ৯৯ শতাংশ মানুষ চায় প্রথমপক্ষকে কিছু সম্পদ দিতে। কিন্তু তাদের চাওয়াও নিস্ফল হয়ে গেছে। তবে দ্বিতীয়পক্ষের দাবি প্রয়াত ইয়ার আলি তার পৈতৃক জমির পুরোটাই প্রথমপক্ষকে দিয়ে গেছেন। তবে নিজের উপার্জিত অর্থ ও সম্পদের কোনা অংশ তাদের দেননি।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়পক্ষ সাড়ে সাত বিঘা জমি নিজেদের নামে রেখে বাকিটা ভাগবাটোয়ারা করে দিতে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে স্ট্যাম্পে লেখালেখি চলছে। এটি হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মদ জানান প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলির দাফন সম্পন্ন করার নির্দেশ চেয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি সাতক্ষীরা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেছে।

এই আবেদনের প্রেক্ষিতে যথাযথ নির্দেশ পেলে প্রয়োজনে পুলিশ তাকে ইসলামী শরিয়ত মতে দাফন করার ব্যবস্থা করবে। ওসি আরও বলেন তিনি এমন একটি নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এদিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেন বলেন, আমি সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। শেষ পর্যন্ত আদালতের শরণাপন্ন হয়ে দাফনের নির্দেশ পেয়েছি। এই নির্দেশের কপি কলারোয়া থানায় পৌঁছালেই পুলিশ তার দাফনের ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি জানান । সন্ধ্যা নাগাদ বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে পারে বলেও  জানান তিনি।