ঢাকা ১০:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন “বাংলাদেশের হিট অফিসার কী করছেন? হিট নিয়ন্ত্রণে “ অগ্নিকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে অনুদানের নগদ অর্থ সহায়তায়: আ জ ম নাসির “স্মার্ট সুদহারে বিপাকে ব্যবসায়ীরা ঢাকা মতিঝিলে ইসতেস্কার নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার।

সব হারিয়ে এখন অন্যের রান্নাঘরে বসবাস।

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ নদীভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে এলাকার এক ব্যক্তির রান্নাঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন উজ্জ্বল খন্দকার। সম্প্রতি মির্জাগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামে একসময় নিজেদের বসতবাড়ি ছিল। ছিল চাষযোগ্য জমি। আবাদ করে যে ফসল ফলত, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে চলত উজ্জ্বলদের। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তাঁরা। তিন–তিনবারের ভাঙনে বসতবাড়ি, জমিজমা সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন অন্যের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত রান্নাঘরে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা।
পেশায় ভ্যানচালক উজ্জ্বল খন্দকারের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামে। পায়রা নদীর তীরে তাঁদের বাড়ি ছিল। কয়েক দফা ভাঙনে বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে বেড়িবাঁধের ওপর ছাপরা তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সেটিও বিধ্বস্ত হয়। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি তাঁদের পরিত্যক্ত একটি রান্নাঘরে তাঁদের আশ্রয় দেন।
উজ্জ্বল খন্দকার বলেন, ধারদেনা করে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরোনো ভ্যানগাড়ি কিনেছেন। এটা চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোরকমে চলেন। মাঝেমধ্যে নদীতে মাছও ধরেন। ঘরবাড়ি তো দূরের কথা, এখন এক টুকরা জমিও নেই। সব পায়রা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন এলাকার মোয়াজ্জেম মীরার বাড়ির ভাঙা একটি রান্নাঘরে থাকেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কত মানুষকে ঘর দিয়েছেন। এলাকার অনেকে মুজিব বর্ষের ঘর পেয়েছেন, কিন্তু তিনি পাননি। একটি ঘর পেলে সবাইকে নিয়ে মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই পেতেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মীরার বাড়ির একটি পরিত্যক্ত একচালা রান্নাঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে উজ্জ্বলের বসবাস। ঘরের টিনের চালায় অনেক ছিদ্র। ভাঙা বেড়া দিয়ে বাতাস ঢুকছে। অন্য পাশে জ্বালানির কাঠ রাখা। এর মধ্যে ঘরের মেঝেতে মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকছেন।
উজ্জ্বলের স্ত্রী আঁখি বেগম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কত মানুষেরে ঘর বানাইয়া দেছে, কিন্তু মোগো কেউ একটা মুজিব বর্ষের ঘরের নাম দেয় না। মোগো কিছুই নাই, মোরা থাহি রান্নাঘরে।’
মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান বলেন, আসলেই উজ্জ্বলদের জমিজমা, ঘরবাড়ি কিছুই নেই। ভুলক্রমে ভূমিহীনদের তালিকায় তাঁর নাম দেওয়া হয়নি। পরে সুযোগ পেলে তাঁর নাম তালিকাভুক্ত করা হবে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা হাসান বলেন, গৃহহীনদের বাসস্থানের জন্য ‘ক’ শ্রেণির আশ্রয়ণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ের কাজ চলমান। রামপুর গ্রামে খাসজমি না থাকায় আপাতত মুজিব বর্ষের ঘর উজ্জ্বলের জন্য বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি যদি উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের ঝাটিবুনিয়া অথবা মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের চন্দ্রকান্দায় বসবাস করতে চান, সে ক্ষেত্রে তাঁর বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে।###

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিসিআরসি’র মানববন্ধন

সব হারিয়ে এখন অন্যের রান্নাঘরে বসবাস।

আপডেট টাইম ১০:০৯:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

আঃ মজিদ খান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ নদীভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে এলাকার এক ব্যক্তির রান্নাঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন উজ্জ্বল খন্দকার। সম্প্রতি মির্জাগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামে একসময় নিজেদের বসতবাড়ি ছিল। ছিল চাষযোগ্য জমি। আবাদ করে যে ফসল ফলত, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে চলত উজ্জ্বলদের। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তাঁরা। তিন–তিনবারের ভাঙনে বসতবাড়ি, জমিজমা সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন অন্যের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত রান্নাঘরে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা।
পেশায় ভ্যানচালক উজ্জ্বল খন্দকারের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামে। পায়রা নদীর তীরে তাঁদের বাড়ি ছিল। কয়েক দফা ভাঙনে বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে বেড়িবাঁধের ওপর ছাপরা তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সেটিও বিধ্বস্ত হয়। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তি তাঁদের পরিত্যক্ত একটি রান্নাঘরে তাঁদের আশ্রয় দেন।
উজ্জ্বল খন্দকার বলেন, ধারদেনা করে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি পুরোনো ভ্যানগাড়ি কিনেছেন। এটা চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোরকমে চলেন। মাঝেমধ্যে নদীতে মাছও ধরেন। ঘরবাড়ি তো দূরের কথা, এখন এক টুকরা জমিও নেই। সব পায়রা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন এলাকার মোয়াজ্জেম মীরার বাড়ির ভাঙা একটি রান্নাঘরে থাকেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কত মানুষকে ঘর দিয়েছেন। এলাকার অনেকে মুজিব বর্ষের ঘর পেয়েছেন, কিন্তু তিনি পাননি। একটি ঘর পেলে সবাইকে নিয়ে মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই পেতেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মীরার বাড়ির একটি পরিত্যক্ত একচালা রান্নাঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে উজ্জ্বলের বসবাস। ঘরের টিনের চালায় অনেক ছিদ্র। ভাঙা বেড়া দিয়ে বাতাস ঢুকছে। অন্য পাশে জ্বালানির কাঠ রাখা। এর মধ্যে ঘরের মেঝেতে মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকছেন।
উজ্জ্বলের স্ত্রী আঁখি বেগম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কত মানুষেরে ঘর বানাইয়া দেছে, কিন্তু মোগো কেউ একটা মুজিব বর্ষের ঘরের নাম দেয় না। মোগো কিছুই নাই, মোরা থাহি রান্নাঘরে।’
মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান বলেন, আসলেই উজ্জ্বলদের জমিজমা, ঘরবাড়ি কিছুই নেই। ভুলক্রমে ভূমিহীনদের তালিকায় তাঁর নাম দেওয়া হয়নি। পরে সুযোগ পেলে তাঁর নাম তালিকাভুক্ত করা হবে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা হাসান বলেন, গৃহহীনদের বাসস্থানের জন্য ‘ক’ শ্রেণির আশ্রয়ণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ের কাজ চলমান। রামপুর গ্রামে খাসজমি না থাকায় আপাতত মুজিব বর্ষের ঘর উজ্জ্বলের জন্য বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি যদি উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের ঝাটিবুনিয়া অথবা মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের চন্দ্রকান্দায় বসবাস করতে চান, সে ক্ষেত্রে তাঁর বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে।###