নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঠাকুরগাঁওয়ে একজন দিনমজুরের একটি লিচু গাছে আম ধরেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সেটি দেখতে দূর থেকে মানুষজন এসে ভিড় করছে। ঘটনাটি সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ছোট বালিয়া মুটকি বাজার এলাকায়।
লিচুগাছটির মালিক আব্দুর রহমান জানান, প্রায় ৫ বছর আগে তার জামাতা তাকে চারটি লিচু গাছের চারা এনে দেন। এরপর তিনি ওই চারাগুলো বাড়ির চারপাশে রোপন করেন। নিয়মিত পরিচর্যায় ৩ বছর ধরে লিচুগাছগুলোতে লিচু ধরতে শুরু করে। এবারও গাছগুলোতে মুকুলে ভরে যায়। কিছুদিন পর লিচুর গুটির আকার বড় হতে শুরু করে।
তিনি বলেন, গত শনিবার সকালে তার নাতি হৃদয় ইসলাম এসে আব্দুর রহমানকে জানায়, চারটি লিচু গাছের মধ্যে একটি লিচুগাছে ‘আম’ ধরেছে। নাতির কথা প্রথমে তার বিশ্বাস হয়নি। পরে লিচুগাছে গিয়ে দেখেন ঘটনা সত্য। লিচুগাছের এক থোকার এক পাশে একটি আম ধরেছে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দূর থেকে মানুষজন এসে ভিড় করতে শুরু করে আব্দুর রহমানের বাড়িতে। এটা দেখতে যারা ভিড় করেছেন, তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন আব্দুর রহমানসহ বাড়ির লোকজন।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, ‘লিচু গাছে আমের ফলন ঘটনাটি ফেসবুকে দেখেছি। লিচু ও আমের পুষ্পমঞ্জুরী যেখানে হয়, সেটা লম্বা। লিচুরটা লম্বা হলেও আমটির বোঁটাটি স্বাভাবিকের তুলনায় খুব খাটো। এসব দেখে বিষয়টি খটকা লাগছে। লিচু ও আম এক পরিবারের উদ্ভিদ নয়। ক্রোমোজম সংখ্যা যদি এক হয়, তবে অনেক সময় ঘটতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিচু ও আমের ক্ষেত্রে এটা অবিশ্বাস্য। লিচু ও আমের টিস্যু সিস্টেম এক না হওয়ায় আম ও লিচুর গ্রাফটিংও সম্ভব নয়। লিচুর সঙ্গে আমগাছের ডাল জোড়া লেগেছে, এমন উদাহরণ নেই। উদ্ভিদতত্তে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।’
অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, ‘কেউ আঠা দিয়ে লিচুর ডালে আমটি লাগিয়েও দিতে পারেন। এখন আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমটি কয়েক দিনের মধ্যে ঝরে পড়লে বুঝবেন চমক সৃষ্টির জন্য কেউ আমটি লিচুর ডালে আটকে দিয়েছিলেন। আর আমটি যদি বড় হতে থাকে, তখন সেটাকে অস্বাভাবিক ঘটনা বলা যেতে পারে। তখন এটা নিয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে।’
এদিকে, লিচুগাছে আম ধরার কথাটি শুনে সোমবার সরেজমিনে গিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তা।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘একটি লিচু গাছে একটি মাত্র আম ধরল। এটা কীভাবে ধরল, তা এ মুহূর্তে বোঝা মুশকিল। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’