ঢাকা ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ “২৬শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে শার্ক ট্যাংক বাংলাদেশ” –মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে ৫৩ কেজি গাঁজাসহ ০৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; মাদক বহনে ব্যবহৃত পিকআপ জব্দ। “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন” ইন্দুরকানীতে দিনব্যাপী পারিবারিক পুষ্টি বাগান ও বস্তায় আদা চাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন … লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন‍্য বিশেষ নামাজ আদায় মিছিল ও শোডাউন করায় মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মানিক দর্জিকে শোকজ

রাজশাহীতে খেজুর গাছ চাঁচ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা

আকবর হোসেন রাজশাহীঃ

রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে এক সময় খেজুর গাছে ভরপুর ছিল। শীত আসলেই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন গাছিরা। বিকেল হলেই গাছে হাঁড়ি বসাতেন আবার সকাল হলে রস সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে আসতেন। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলতো আগুনে রস জ্বাল করে গুড় আর পাটালি তৈরির কাজ।

খেজুরের গুড় আর পাটালির মৌ মৌ গন্ধ বাতাসে ভেসে আসতো। কেউ কেউ রস বিক্রি করতেন আবার কেউ কেউ সেই রস দিয়ে শীতের পিঠাঁপুলি তৈরি করে আত্বীয় স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়াতেন। কালের বিবর্তনে এসব এখন ইতিহাসের পাতায় জড়ো হচ্ছে। হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ গুলো।
তবে গত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে ওঠা খেজুর বাগান গুলো বদলে দিয়েছে এ উপজেলার চিত্র। প্রতিবছর শীতে তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়। প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রস্তুত হচ্ছে প্রকৃতি। একইসঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুত হতে দেখা গেছে দূর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গাছিয়াদেরও।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেমন করে একদিকে রস সংগ্রহের জন্য এখন গাছকে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে। আবার অন্যদিকে ঝুঁকি নিয়েই কোমরে রশি বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে গাছিয়াদের। প্রতিদিন বিকেলে ছোট-বড় মাটির হাঁড়ি গাছে বাঁধা হয়, আর সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। কেউ কেউ কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ সকালে এই রস জ্বাল করে গুড় তৈরি করেন।

এদিকে উপজেলার সায়বাড় গ্রামের রাজ্জাক জানান,
১০ দিন হয়েছে গাছ চাঁচ দেয়ার কাজ শুরু করেছি। গাছের ময়লা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। ধারালো দা আর হাসুয়া দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করা হয়েছে। কিছুদিন পরই গাছে লাগানো হবে মাটির পাতিল। এরপরই শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস সংগ্রহের কাজ। তা দিয়ে তৈরি হবে গুড় ও পাটালি।
তিনি আরও বলেন, গাছ একবার ছাঁটলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে তিন দিন শুকাতে হয়। এভাবে কাটলে গাছের রস সুমিষ্ট হয়। রস সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। রস সংগ্রহের পর হাড়ি পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে হয়।

এ বিষয়ে উপজেলার আন্দুয়া গ্রামের গাছি গোলাপ বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তো আমাদের দেশে খেজুর গাছ থাকবে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিৎ তালগাছের মতো বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, এই উপজেলায় খেজুরের গাছ রোপণের ক্ষেত্রে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। সবাই আম, কাঁঠাল, বরই, পিয়ারা আর লিচু গাছ নিয়েই ব্যস্ত। সব গাছেরই প্রয়োজন আছে। কেউ নতুন করে খেজুরের বাগান করতে চাইলে বা খেজুরের গাছ রোপণে যে কোনো সহযোগিতায় পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড

রাজশাহীতে খেজুর গাছ চাঁচ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা

আপডেট টাইম ০৫:১৪:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অক্টোবর ২০২২

আকবর হোসেন রাজশাহীঃ

রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে এক সময় খেজুর গাছে ভরপুর ছিল। শীত আসলেই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন গাছিরা। বিকেল হলেই গাছে হাঁড়ি বসাতেন আবার সকাল হলে রস সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে আসতেন। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলতো আগুনে রস জ্বাল করে গুড় আর পাটালি তৈরির কাজ।

খেজুরের গুড় আর পাটালির মৌ মৌ গন্ধ বাতাসে ভেসে আসতো। কেউ কেউ রস বিক্রি করতেন আবার কেউ কেউ সেই রস দিয়ে শীতের পিঠাঁপুলি তৈরি করে আত্বীয় স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়াতেন। কালের বিবর্তনে এসব এখন ইতিহাসের পাতায় জড়ো হচ্ছে। হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ গুলো।
তবে গত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে ওঠা খেজুর বাগান গুলো বদলে দিয়েছে এ উপজেলার চিত্র। প্রতিবছর শীতে তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়। প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রস্তুত হচ্ছে প্রকৃতি। একইসঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুত হতে দেখা গেছে দূর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গাছিয়াদেরও।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেমন করে একদিকে রস সংগ্রহের জন্য এখন গাছকে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে। আবার অন্যদিকে ঝুঁকি নিয়েই কোমরে রশি বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে গাছিয়াদের। প্রতিদিন বিকেলে ছোট-বড় মাটির হাঁড়ি গাছে বাঁধা হয়, আর সকালে রস সংগ্রহ করা হয়। কেউ কেউ কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেন। আবার কেউ কেউ সকালে এই রস জ্বাল করে গুড় তৈরি করেন।

এদিকে উপজেলার সায়বাড় গ্রামের রাজ্জাক জানান,
১০ দিন হয়েছে গাছ চাঁচ দেয়ার কাজ শুরু করেছি। গাছের ময়লা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। ধারালো দা আর হাসুয়া দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করা হয়েছে। কিছুদিন পরই গাছে লাগানো হবে মাটির পাতিল। এরপরই শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস সংগ্রহের কাজ। তা দিয়ে তৈরি হবে গুড় ও পাটালি।
তিনি আরও বলেন, গাছ একবার ছাঁটলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে তিন দিন শুকাতে হয়। এভাবে কাটলে গাছের রস সুমিষ্ট হয়। রস সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। রস সংগ্রহের পর হাড়ি পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে হয়।

এ বিষয়ে উপজেলার আন্দুয়া গ্রামের গাছি গোলাপ বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তো আমাদের দেশে খেজুর গাছ থাকবে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিৎ তালগাছের মতো বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, এই উপজেলায় খেজুরের গাছ রোপণের ক্ষেত্রে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না। সবাই আম, কাঁঠাল, বরই, পিয়ারা আর লিচু গাছ নিয়েই ব্যস্ত। সব গাছেরই প্রয়োজন আছে। কেউ নতুন করে খেজুরের বাগান করতে চাইলে বা খেজুরের গাছ রোপণে যে কোনো সহযোগিতায় পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।