ঢাকা ১২:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পুলিশের বিশেষ অভিযানে ভয়ঙ্কর ডাকাত সর্দার মামুন গ্রেফতার বগুড়ায় অবকাশ হোটেলে অবৈধ কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ৯ জন খরিদ্দারকে দুই দিনের কারাদণ্ড দিলেন আদালত নানা বাড়ি বেড়াতে এসে নদীতে ডুবে কিশোর কিশোরীর মৃত্যু চরফ্যাসনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ৯।। দুমকিতে নবজাতক শিশুকে হসপিটালে রেখে পালিয়ে গেলো মা। গজারিয়ার বালুয়াকান্দীতে আমিরুল ইসলাম এর নির্বাচনী কর্মী সভা রাঙ্গুনিয়ায় দাওয়াতে তাবলীগের নিছবতে ওলামায়েকেরামের আলোচনা সভা চট্টগ্রামে উপজেলা নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গরমিল, ২ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল নিয়ামতপুরে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত বাড়াইপাড়া খাল খননের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ মেয়র রেজাউলের

রাজশাহীতে আমের বাজার বাড়তে শুরু করেছে, শেষদিকে এসে খুশি চাষীরা

রাজশাহীতে আমের বাজার বাড়তে শুরু করেছে, শেষদিকে এসে খুশি চাষীরা

০৬-০৭-২০২১

অনুপ কুমার রায় রাজশাহীঃ

টানা লকডাউনে এবার মাথায় হাত পড়েছিলো আমচাষীদের। তবে শেষদিকে এসে আমের দাম বাড়তে শুরু করায় চাষী ও ব্যবসায়ীদের মুখেও হাসি ফুটতে শুরু করেছে। যদিও এখন ফজলি ছাড়া তেমন আর আম নাই বাগানে। জাতের আম বলতে এখন ফজলিই ভরসা রাজশাহীর চাষীও ব্যবসায়ীদের কাছে। তবে এই ফজলিই গত এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। গতকাল রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে ফজলি আম প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৯০০-১০০০ টাকা। আগের দিনের চেয়ে মণে ১০০ টাকা বেড়েছে।

চাষীরা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছর শুরু থেকেই প্রতিটি জাতের আমের দাম এক দুইদিন পর পরই মণে অন্তত ১০০ টাকা বাড়ত। কিন্তু এবার আমের সব রেকর্ড ভেঙে যেমন নিম্ন দামে বিক্রি হয়েছে। তেমনি কোনো কোনো জাতের আমের শেষ দিকে গিয়েও দাম না বেড়ে উল্টো কমে গেছে। এই অবস্থায় রাজশাহীর বাগান থেকে শেষে হয়েছে ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপাল ভোগ জাতের আম। খুবই অল্প পরিমাণে এখনো পাওয়া যাচ্ছে আম্রপালি ও লখনা জাতের। আম্রপালি গতকাল রাজশাহীর বাজারে বিক্রি হয়েছে দুই হাজার পাঁচশ টাকা পর্যন্ত। যদিও গত বছর আম্রপালি এই সময়ে বিক্রি হয়েছে চার হাজার পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা মণ। কিন্তু এ বছর এখনো তিন হাজার টাকা মণ ছূঁতে পারেনি আম্রপালি। তার আগেই শেষ হয়ে যাবে রাজশাহীতে এ জাতের আম।

এ বাজারে আম বিক্রি করতে যাওয়া পুঠিয়ার বেলপুকুর গ্রামের নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন তে বাগানে তেমন আম নাই। যেগুলো ফজলি জাতের আছে, সেগুলোও রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হয়তো রাজশাহীতে ফজলি জাতের আম শেষ হয়ে যাবে। তখন গাছে আম বলতে থাকবে আশিনা জাতের। তবে সেটিও খুব বাগানেই থাকে।’

এ বাজারের আরেক আম বিক্রেতা লোকমান আলী বলেন, ‘সবার বাগানে ফজলি আমও থাকে না। যারা কিছু আম রাখতে পেরেছিলেন, সেগুলো বৃষ্টির কারণে ফেটে যাচ্ছে। ফলে এখন না চাইলেই আম নামাতে বাধ্য হচ্ছি। এখন আমের দাম বাড়ছে। কারণ রাজশাহীতে আম একেবারে শেষের দিকে। আমার বাগানে অল্প কিছু ফজলি ছাড়া আর কোনো আম নাই। বেশিরভাগ চাষীর বাগানেই একই অবস্থা।’

বাগানের আম ব্যবসায়ী নবিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন ফজলিই পাওয়া যাচ্ছে অল্প পরিমাণে। এর বাইরে একেবারেই অল্প পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে লখনা ও আম্রপালি জাতের আম। আজ (গতকাল সোমবার) ফজলি বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১০০০ টাকা দরে। এছাড়াও আম্রপালি ২৫০০-৩০০০ এবং লখনা বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৬ শ টাকা।

অপর ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা আমের বাগান চুক্তিতে আগেই কিনে রাখেন, এবার সেসব ব্যবসায়ী চরম লোকসানের মুখে পড়েছিলেন। তবে যারা ফজলি আমের বাগান কিনে রেখেছিলেন, এবং আম সহজে নামাননি তাঁরা এখন শেষদিকে এসে কিছুটা হলেও লোকসান পুশিয়ে নিতে পারবেন। তবে সব ব্যবসায়ীই আম ধরে রাখতে পারেননি। এই সংখ্যা একেবারেই কম। ফলে টানা লকডাউনের কারণে এবার আম চাষীরা যেমন ক্ষতির স্বীকার হয়েছেন ভালো দাম না থাকায়, তেমনি ব্যবসায়ীরাও লোকসান গুনেছেন।

প্রসঙ্গত,রাজশাহীতেএবার হেক্টর প্রতি গড়ে ১৫ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন হারে আম উৎপাদন হয়। কিন্তু এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তার চেয়েও বেশি আম উৎপাদন হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এবার জেলায় ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। সেই হিসেবে ধরা হচ্ছে এবার রাজশাহীতেই অন্তত দুই লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হয়েছে। তবে শুরু থেকেই এবার দাম না থাকায় বেশি ফলণ হলেও চাষীও ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছিলেন।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

পুলিশের বিশেষ অভিযানে ভয়ঙ্কর ডাকাত সর্দার মামুন গ্রেফতার

রাজশাহীতে আমের বাজার বাড়তে শুরু করেছে, শেষদিকে এসে খুশি চাষীরা

আপডেট টাইম ১১:৪৬:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুলাই ২০২১
রাজশাহীতে আমের বাজার বাড়তে শুরু করেছে, শেষদিকে এসে খুশি চাষীরা

০৬-০৭-২০২১

অনুপ কুমার রায় রাজশাহীঃ

টানা লকডাউনে এবার মাথায় হাত পড়েছিলো আমচাষীদের। তবে শেষদিকে এসে আমের দাম বাড়তে শুরু করায় চাষী ও ব্যবসায়ীদের মুখেও হাসি ফুটতে শুরু করেছে। যদিও এখন ফজলি ছাড়া তেমন আর আম নাই বাগানে। জাতের আম বলতে এখন ফজলিই ভরসা রাজশাহীর চাষীও ব্যবসায়ীদের কাছে। তবে এই ফজলিই গত এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। গতকাল রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে ফজলি আম প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৯০০-১০০০ টাকা। আগের দিনের চেয়ে মণে ১০০ টাকা বেড়েছে।

চাষীরা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছর শুরু থেকেই প্রতিটি জাতের আমের দাম এক দুইদিন পর পরই মণে অন্তত ১০০ টাকা বাড়ত। কিন্তু এবার আমের সব রেকর্ড ভেঙে যেমন নিম্ন দামে বিক্রি হয়েছে। তেমনি কোনো কোনো জাতের আমের শেষ দিকে গিয়েও দাম না বেড়ে উল্টো কমে গেছে। এই অবস্থায় রাজশাহীর বাগান থেকে শেষে হয়েছে ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপাল ভোগ জাতের আম। খুবই অল্প পরিমাণে এখনো পাওয়া যাচ্ছে আম্রপালি ও লখনা জাতের। আম্রপালি গতকাল রাজশাহীর বাজারে বিক্রি হয়েছে দুই হাজার পাঁচশ টাকা পর্যন্ত। যদিও গত বছর আম্রপালি এই সময়ে বিক্রি হয়েছে চার হাজার পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা মণ। কিন্তু এ বছর এখনো তিন হাজার টাকা মণ ছূঁতে পারেনি আম্রপালি। তার আগেই শেষ হয়ে যাবে রাজশাহীতে এ জাতের আম।

এ বাজারে আম বিক্রি করতে যাওয়া পুঠিয়ার বেলপুকুর গ্রামের নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন তে বাগানে তেমন আম নাই। যেগুলো ফজলি জাতের আছে, সেগুলোও রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হয়তো রাজশাহীতে ফজলি জাতের আম শেষ হয়ে যাবে। তখন গাছে আম বলতে থাকবে আশিনা জাতের। তবে সেটিও খুব বাগানেই থাকে।’

এ বাজারের আরেক আম বিক্রেতা লোকমান আলী বলেন, ‘সবার বাগানে ফজলি আমও থাকে না। যারা কিছু আম রাখতে পেরেছিলেন, সেগুলো বৃষ্টির কারণে ফেটে যাচ্ছে। ফলে এখন না চাইলেই আম নামাতে বাধ্য হচ্ছি। এখন আমের দাম বাড়ছে। কারণ রাজশাহীতে আম একেবারে শেষের দিকে। আমার বাগানে অল্প কিছু ফজলি ছাড়া আর কোনো আম নাই। বেশিরভাগ চাষীর বাগানেই একই অবস্থা।’

বাগানের আম ব্যবসায়ী নবিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন ফজলিই পাওয়া যাচ্ছে অল্প পরিমাণে। এর বাইরে একেবারেই অল্প পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে লখনা ও আম্রপালি জাতের আম। আজ (গতকাল সোমবার) ফজলি বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১০০০ টাকা দরে। এছাড়াও আম্রপালি ২৫০০-৩০০০ এবং লখনা বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৬ শ টাকা।

অপর ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা আমের বাগান চুক্তিতে আগেই কিনে রাখেন, এবার সেসব ব্যবসায়ী চরম লোকসানের মুখে পড়েছিলেন। তবে যারা ফজলি আমের বাগান কিনে রেখেছিলেন, এবং আম সহজে নামাননি তাঁরা এখন শেষদিকে এসে কিছুটা হলেও লোকসান পুশিয়ে নিতে পারবেন। তবে সব ব্যবসায়ীই আম ধরে রাখতে পারেননি। এই সংখ্যা একেবারেই কম। ফলে টানা লকডাউনের কারণে এবার আম চাষীরা যেমন ক্ষতির স্বীকার হয়েছেন ভালো দাম না থাকায়, তেমনি ব্যবসায়ীরাও লোকসান গুনেছেন।

প্রসঙ্গত,রাজশাহীতেএবার হেক্টর প্রতি গড়ে ১৫ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন হারে আম উৎপাদন হয়। কিন্তু এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তার চেয়েও বেশি আম উৎপাদন হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এবার জেলায় ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। সেই হিসেবে ধরা হচ্ছে এবার রাজশাহীতেই অন্তত দুই লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হয়েছে। তবে শুরু থেকেই এবার দাম না থাকায় বেশি ফলণ হলেও চাষীও ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছিলেন।