ঢাকা ০৫:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ

মেয়েদের গোল দেখলে আপনাকেও হাততালি দিতে হবে!

হাইলাইটসঃ ভুটানে চলমান অনূর্ধ্ব ১৫ মেয়েদের ফুটবলে পাকিস্তানকে ১৪-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর গতকাল নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভুটান। যেভাবে দৃষ্টিনন্দন গোল করে প্রতিপক্ষদের ভাসিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের কিশোরীরা। এবারও সাফের শিরোপা জয় করবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, সে আশা করাই যায়।

আহ্‌, গোলের কী সৌন্দর্য! কোনটা রেখে কোনটার কথা বলি। কোন গোলটি বেশি সুন্দর, এ প্রশ্নে তো মাথা চুলকাতেই হয়। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মারিয়া মান্দার বাঁ পায়ের জোরালো ‘রিবাউন্ড’ শট, নাকি এরিয়াল থ্রুতে নেপাল ডিফেন্ডারকে গতিতে ছিটকে ফেলে গোলরক্ষকের সামনে থেকে সাজেদা খাতুনের ছোঁ মেরে জালে জড়ানো! দুটি গোলই যে চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো।

বাংলাদেশি মেয়েদের ফুটবল মানেই দুর্দান্ত সব গোল; যা দুর্দান্ত সব পাস ও মুভের চূড়ান্ত রসায়ন। দর্শকদের যা মন ছুঁয়ে যাবেই। গতকাল নেপালের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়কে একপাশে সরিয়ে রেখে ফিরে তাকানো যাক পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪-০ গোলের জয়ের ম্যাচে। হ্যাঁ নিশ্চয় মনে পড়ার কথা বিরতিতে যাওয়ার আগে ‘৬’ নম্বর গোলটি। প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে দূরপাল্লার শটে বল জালে জড়িয়ে ছিল ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। যে গোল দেখে চোখ কচলিয়ে লুকানো উচ্ছ্বাস ও কিছুটা অবিশ্বাসের সুরে প্রশ্ন করতেই হয়, বাংলাদেশের মেয়ের পায়ে এমন গোল!

যাঁরা দেশের ফুটবলের নিয়মিত দর্শক, তাঁদের জেনে থাকারই কথা বাংলাদেশের মেয়েদের পায়ে এমন গোল এখন দেখা যায় হরহামেশা। যার শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্ব থেকে। এরপর ঢাকায় গত বছর অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ হয়ে নয় মাসের ব্যবধানে ভুটানের একই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসর। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে কমলাপুর শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম হয়ে দৃষ্টিনন্দন সব গোল ধামাকা চলছে এখন ভুটানের চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে। মাঠ পরিবর্তন হয়, বদল আসে প্রতিপক্ষের। কিন্তু গোলের রাস্তাটা ‘গুগল ম্যাপ’-এর মতো হাতের মুঠোই (পড়ুন চোখের সামনে) থাকে বাংলাদেশের মেয়েদের।

গতকাল নেপালের বিপক্ষে তিনটি গোলই ছিল দুর্দান্ত। তবে ফুটবলীয় সৌন্দর্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে সাজেদার গোলটির রসায়ন ছিল অসাধারণ। প্রতি-আক্রমণ থেকে ফরোয়ার্ড সাজেদার উদ্দেশে সেন্টারব্যাক আঁখি খাতুনের ঠিকানা লেখা এরিয়াল থ্রু। সে মুভে নেপাল ডিফেন্ডারকে গতিতে পেছনে ফেলতে পারলেও পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে আসা গোলরক্ষকের বল গ্রিপে নেওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু চিলের মতো ছোঁ মেরে টোকা দিয়ে জালে জড়িয়ে দিল সাজেদা। খালি চোখে শুধু একটি গোলই। কিন্তু এর আগে প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকারের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ঠিক সময়ে থ্রু দেওয়া আর শেষ পর্যন্ত সাজেদার হার না-মানার গল্পগুলোই বলে দেয় এই মেয়েরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে জিতে নিতে জানে।

গোলের রসায়ন ও দুর্দান্ত সব মুভের গল্পই সব সময় হয়। কিন্তু একটু গভীরে তাকালে দেখা যাচ্ছে বা প্রান্তে লেফট উইঙ্গার শামসুন্নাহারের কী প্রবল আত্মবিশ্বাস। ১৫ বছরের মেয়ের ভাবখানা এমন, ‘আয় কে আছিস, আমার পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে দেখা।’ এমন মনোবল নিয়ে নিমেষে দুমড়েমুচড়ে ফেলছে প্রতিপক্ষকে। তাকে রুখতে গিয়েই প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগের ঘেমেনেয়ে ওঠা!

এখনো কিশোরী বয়স। কিন্তু ফুটবলজ্ঞানে যথেষ্ট পরিপক্ব বাংলাদেশের এই মেয়েরা। গোলরক্ষক থেকে স্ট্রাইকার, পুরো দলটাই একসুতোয় গাঁথা। একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, প্রতিটি আক্রমণের শুরুই হচ্ছে গোলরক্ষক মাহমুদার পা থেকে। আবার বাংলাদেশের ডিফেন্ডিংয়ের শুরুটা হচ্ছে ফরোয়ার্ড লাইন থেকেই। এই কিশোরীরা আবারও অনূর্ধ্ব-১৫ সাফের শিরোপা জয় করবে, এই স্বপ্ন তো দেখাই যায়।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত

মেয়েদের গোল দেখলে আপনাকেও হাততালি দিতে হবে!

আপডেট টাইম ০৫:৪৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৮

হাইলাইটসঃ ভুটানে চলমান অনূর্ধ্ব ১৫ মেয়েদের ফুটবলে পাকিস্তানকে ১৪-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর গতকাল নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভুটান। যেভাবে দৃষ্টিনন্দন গোল করে প্রতিপক্ষদের ভাসিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের কিশোরীরা। এবারও সাফের শিরোপা জয় করবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, সে আশা করাই যায়।

আহ্‌, গোলের কী সৌন্দর্য! কোনটা রেখে কোনটার কথা বলি। কোন গোলটি বেশি সুন্দর, এ প্রশ্নে তো মাথা চুলকাতেই হয়। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মারিয়া মান্দার বাঁ পায়ের জোরালো ‘রিবাউন্ড’ শট, নাকি এরিয়াল থ্রুতে নেপাল ডিফেন্ডারকে গতিতে ছিটকে ফেলে গোলরক্ষকের সামনে থেকে সাজেদা খাতুনের ছোঁ মেরে জালে জড়ানো! দুটি গোলই যে চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো।

বাংলাদেশি মেয়েদের ফুটবল মানেই দুর্দান্ত সব গোল; যা দুর্দান্ত সব পাস ও মুভের চূড়ান্ত রসায়ন। দর্শকদের যা মন ছুঁয়ে যাবেই। গতকাল নেপালের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়কে একপাশে সরিয়ে রেখে ফিরে তাকানো যাক পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪-০ গোলের জয়ের ম্যাচে। হ্যাঁ নিশ্চয় মনে পড়ার কথা বিরতিতে যাওয়ার আগে ‘৬’ নম্বর গোলটি। প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে দূরপাল্লার শটে বল জালে জড়িয়ে ছিল ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। যে গোল দেখে চোখ কচলিয়ে লুকানো উচ্ছ্বাস ও কিছুটা অবিশ্বাসের সুরে প্রশ্ন করতেই হয়, বাংলাদেশের মেয়ের পায়ে এমন গোল!

যাঁরা দেশের ফুটবলের নিয়মিত দর্শক, তাঁদের জেনে থাকারই কথা বাংলাদেশের মেয়েদের পায়ে এমন গোল এখন দেখা যায় হরহামেশা। যার শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্ব থেকে। এরপর ঢাকায় গত বছর অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ হয়ে নয় মাসের ব্যবধানে ভুটানের একই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসর। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে কমলাপুর শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম হয়ে দৃষ্টিনন্দন সব গোল ধামাকা চলছে এখন ভুটানের চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে। মাঠ পরিবর্তন হয়, বদল আসে প্রতিপক্ষের। কিন্তু গোলের রাস্তাটা ‘গুগল ম্যাপ’-এর মতো হাতের মুঠোই (পড়ুন চোখের সামনে) থাকে বাংলাদেশের মেয়েদের।

গতকাল নেপালের বিপক্ষে তিনটি গোলই ছিল দুর্দান্ত। তবে ফুটবলীয় সৌন্দর্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে সাজেদার গোলটির রসায়ন ছিল অসাধারণ। প্রতি-আক্রমণ থেকে ফরোয়ার্ড সাজেদার উদ্দেশে সেন্টারব্যাক আঁখি খাতুনের ঠিকানা লেখা এরিয়াল থ্রু। সে মুভে নেপাল ডিফেন্ডারকে গতিতে পেছনে ফেলতে পারলেও পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে আসা গোলরক্ষকের বল গ্রিপে নেওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু চিলের মতো ছোঁ মেরে টোকা দিয়ে জালে জড়িয়ে দিল সাজেদা। খালি চোখে শুধু একটি গোলই। কিন্তু এর আগে প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকারের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ঠিক সময়ে থ্রু দেওয়া আর শেষ পর্যন্ত সাজেদার হার না-মানার গল্পগুলোই বলে দেয় এই মেয়েরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে জিতে নিতে জানে।

গোলের রসায়ন ও দুর্দান্ত সব মুভের গল্পই সব সময় হয়। কিন্তু একটু গভীরে তাকালে দেখা যাচ্ছে বা প্রান্তে লেফট উইঙ্গার শামসুন্নাহারের কী প্রবল আত্মবিশ্বাস। ১৫ বছরের মেয়ের ভাবখানা এমন, ‘আয় কে আছিস, আমার পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে দেখা।’ এমন মনোবল নিয়ে নিমেষে দুমড়েমুচড়ে ফেলছে প্রতিপক্ষকে। তাকে রুখতে গিয়েই প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগের ঘেমেনেয়ে ওঠা!

এখনো কিশোরী বয়স। কিন্তু ফুটবলজ্ঞানে যথেষ্ট পরিপক্ব বাংলাদেশের এই মেয়েরা। গোলরক্ষক থেকে স্ট্রাইকার, পুরো দলটাই একসুতোয় গাঁথা। একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, প্রতিটি আক্রমণের শুরুই হচ্ছে গোলরক্ষক মাহমুদার পা থেকে। আবার বাংলাদেশের ডিফেন্ডিংয়ের শুরুটা হচ্ছে ফরোয়ার্ড লাইন থেকেই। এই কিশোরীরা আবারও অনূর্ধ্ব-১৫ সাফের শিরোপা জয় করবে, এই স্বপ্ন তো দেখাই যায়।