ঢাকা ০৮:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল। গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে সিকদার পরিবারে আমিরুল ইসলাম এর সর্মথনে আলোচনা সভা ও ইফতার দোয়া মাহফিল চসিকের ৬ ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৮ তম সাধারণ সভায় মশা কমাতে কার্যক্রম বাড়াবে : মেয়র রেজাউল “বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন” ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবে ইফতার মাহফিল বরিশাল চকবাজার এবায়দুল্লাহ মসজিদে অগ্নিকান্ড। টাঙ্গাইলে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার পাঠক ফোরাম গঠিত চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে জালনোটসহ প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রমজান মাসের পবিত্রতা লঙ্ঘন করছে নারায়ণগঞ্জ চিশতিয়া বাউল সমিত

মিরাজ যে কারণে ব্যতিক্রম

গায়ানায় এই প্রশ্নটা প্রায় করতেন। সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ শেষেও মেহেদী হাসান মিরাজের একই প্রশ্ন, ‘আমার বোলিং ভালো হচ্ছে তো? কী শুকনো খড়খড়ে উইকেটে বোলিং করলাম। খারাপ করেছি?’

মিরাজ কেমন বোলিং করেছেন, সেই উত্তর খোঁজার আগে জানিয়ে রাখা ভালো-মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম-দলের সিনিয়র খেলোয়াড়েরা বিরাট প্রশংসাপত্র দিয়েছেন তরুণ অফ স্পিনারকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যেখানে তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা, মিরাজ সেখানে ব্যতিক্রম। টেস্ট সিরিজে দলের চরম ব্যর্থতার মধ্যে বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন, নিয়েছেন ১০ উইকেট। ওয়ানডেতেও ধরে রেখেছেন ধারাবাহিকতা।

পুরো সিরিজে মাত্র ৩ উইকেট দিয়ে মিরাজকে বিচার করা যাবে না। তাঁকে বিচার করতে হবে নিয়ন্ত্রিত বোলিং দিয়ে। স্টাম্প সোজা বল করেছেন, চাতুর্যের সঙ্গে বলের গতি পরিবর্তন করেছেন, বৈচিত্র্য এনেছেন লেংথে। মিরাজ সবচেয়ে প্রশংসিত হচ্ছেন সাহসের কারণে। ওয়ানডেতে প্রতি ম্যাচে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভয়ংকর ক্রিস গেইলকে আটকাতে। যেন লিলিপুট-গালিভারের লড়াই! আর সেই লড়াইয়ে বেশির ভাগ সময়ে জিতেছেন ‘লিলিপুট’ মিরাজই।

গায়ানায় প্রথম ওয়ানডেতে গেইলকে শুধু আটকেই রাখেননি, তাঁকে আউটও করেছেন। পাওয়ার প্লেতে তাঁর ইকোনমি রেটই (৩.৭৩) বলে দিচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বিস্ফোরক ওপেনারদের বিপক্ষে মিরাজের কৃতিত্বটা। উইকেট বেশি না পেলেও তাঁকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাতে অনেকটাই সফল। উইন্ডিজ ওপেনাররা স্বচ্ছন্দে শুরু করতে পারেননি, ইনিংসের মাঝেও অসাধারণ বোলিং করেছেন। পুরো ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ওভারপ্রতি রান দেওয়ার দিক থেকে মিরাজই সবচেয়ে কৃপণ-৪.০৬।

ওয়ানডে সিরিজ জেতার রাতে মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের আড্ডায় মিরাজের বোলিং প্রসঙ্গে সবার মুখেই তাঁর প্রশংসা। মাশরাফি একটু রসিকতা করে বললেন, ‘মিরাজ উইকেট পেলে ড্রেসিংরুমে সবচেয়ে জোরে তালি মারে (সুনীল) যোশি। চাকরিটা নড়বড়ে হলো না, এই আনন্দে!’ মিরাজকে নিয়ে শংসাবচন শোনা গেল টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মুখেও।

দলের তরুণ খেলোয়াড়েরা যেখানে সমালোচিত হচ্ছেন ধারাবাহিক বাজে খেলায়, মিরাজ সেখানে কেন ব্যতিক্রম, পরশু সন্ধ্যায় সেন্ট কিটসের হোটেল ম্যারিয়টের লবিতে দাঁড়িয়ে সাকিব সেটির ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘ও যখন খেলা শুরু করেছে, তখন থেকেই সবাই জানি সে ভালো বোলার। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিল। যেহেতু অধিনায়ক ছিল, সব আলো ওর দিকেই ছিল। ওর বয়স কম হলেও মাথাটা পরিণত।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ সামলে দলের একজন তরুণ সদস্য হিসেবে মিরাজ কীভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলেন, একটু থেমে সেটির চমৎকার বিশ্লেষণ করলেন বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, ‘ওর সুবিধা ছিল, সে ঘরোয়া ক্রিকেটে খুলনা দলে খেলেছে। খুলনার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট যে ম্যাচগুলো খেলেছে সেখানে অভিজ্ঞ রাজ ভাই (আবদুর রাজ্জাক) ছিলেন। রাজ ভাইকে দেখেও অনেক কিছু শেখা সম্ভব। প্রায় প্রতি ম্যাচে তিনি ৫-৬ উইকেট করে নিচ্ছেন। এটা অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার! মিরাজ তাঁর সঙ্গে খেলছে, এই অভিজ্ঞতা তাকে কাজে দিচ্ছে। সাধারণত খুলনা দলে যারা খেলে, তারা কোনো না কোনো সময়ে বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করে। এই ভালো সংস্কৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠায় সেটা মিরাজের কাজে দিচ্ছে। ও আসার পর থেকেই ভালো বোলিং করছে। টেস্টে আমাদের মধ্যে সেরা স্পিনার এখন ওকেই বলা যায়। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টেস্টে ভালো করেছে। ওয়ানডে সিরিজও অসাধারণ বোলিং করেছে। এই ধারাটা ধরে রাখতে পারলে আশা করি, টি-টোয়েন্টিতেও ভালো করবে।’

মিরাজের আরও একটা বড় গুণ, মাঠে সব সময় সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করতে থাকেন। সাকিব মনে করেন এই গুণটা মিরাজ পেয়েছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব থেকে, ‘এগুলো আসে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভ্যাস থেকে। ও যেহেতু অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অধিনায়কত্ব করেছে, এ গুণটা সেখান থেকেই পেয়েছে। অন্যরা যারা নেতৃত্ব দেয়নি, তাদের মধ্যে এটা কম দেখা যায়। আর ও যেহেতু ধারাবাহিক ভালো খেলে, মাঠে অনেক বেশি প্রাণবন্ত থাকে। যদিও কেমন খেললাম, সেটা না ভেবে মাঠে সবারই প্রাণবন্ত থাকা উচিত।’

ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর সেন্ট কিটসের চাঁদনিরাতে যখন খেলোয়াড়েরা মন খুলে আড্ডা দিচ্ছেন, মিরাজ সিনিয়রদের অনুমতি চাইছেন রুমে ফেরার। মাহমুদউল্লাহ রসিকতা করে জানতে চাইলেন, ‘কাল (ঐচ্ছিক অনুশীলন) তোর যোশি স্যারের সঙ্গে বোলিং করবি না?’

‘না, ভাই আমার ডান কাঁধটা মনে হচ্ছে ছিঁড়ে পড়বে!’ -আসলেই মিরাজের একটু বিশ্রাম দরকার। ছোট্ট কাঁধে যে বড় ধকল গেছে।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল।

মিরাজ যে কারণে ব্যতিক্রম

আপডেট টাইম ০৬:১৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই ২০১৮

গায়ানায় এই প্রশ্নটা প্রায় করতেন। সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ শেষেও মেহেদী হাসান মিরাজের একই প্রশ্ন, ‘আমার বোলিং ভালো হচ্ছে তো? কী শুকনো খড়খড়ে উইকেটে বোলিং করলাম। খারাপ করেছি?’

মিরাজ কেমন বোলিং করেছেন, সেই উত্তর খোঁজার আগে জানিয়ে রাখা ভালো-মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম-দলের সিনিয়র খেলোয়াড়েরা বিরাট প্রশংসাপত্র দিয়েছেন তরুণ অফ স্পিনারকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যেখানে তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা, মিরাজ সেখানে ব্যতিক্রম। টেস্ট সিরিজে দলের চরম ব্যর্থতার মধ্যে বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন, নিয়েছেন ১০ উইকেট। ওয়ানডেতেও ধরে রেখেছেন ধারাবাহিকতা।

পুরো সিরিজে মাত্র ৩ উইকেট দিয়ে মিরাজকে বিচার করা যাবে না। তাঁকে বিচার করতে হবে নিয়ন্ত্রিত বোলিং দিয়ে। স্টাম্প সোজা বল করেছেন, চাতুর্যের সঙ্গে বলের গতি পরিবর্তন করেছেন, বৈচিত্র্য এনেছেন লেংথে। মিরাজ সবচেয়ে প্রশংসিত হচ্ছেন সাহসের কারণে। ওয়ানডেতে প্রতি ম্যাচে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভয়ংকর ক্রিস গেইলকে আটকাতে। যেন লিলিপুট-গালিভারের লড়াই! আর সেই লড়াইয়ে বেশির ভাগ সময়ে জিতেছেন ‘লিলিপুট’ মিরাজই।

গায়ানায় প্রথম ওয়ানডেতে গেইলকে শুধু আটকেই রাখেননি, তাঁকে আউটও করেছেন। পাওয়ার প্লেতে তাঁর ইকোনমি রেটই (৩.৭৩) বলে দিচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বিস্ফোরক ওপেনারদের বিপক্ষে মিরাজের কৃতিত্বটা। উইকেট বেশি না পেলেও তাঁকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাতে অনেকটাই সফল। উইন্ডিজ ওপেনাররা স্বচ্ছন্দে শুরু করতে পারেননি, ইনিংসের মাঝেও অসাধারণ বোলিং করেছেন। পুরো ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ওভারপ্রতি রান দেওয়ার দিক থেকে মিরাজই সবচেয়ে কৃপণ-৪.০৬।

ওয়ানডে সিরিজ জেতার রাতে মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের আড্ডায় মিরাজের বোলিং প্রসঙ্গে সবার মুখেই তাঁর প্রশংসা। মাশরাফি একটু রসিকতা করে বললেন, ‘মিরাজ উইকেট পেলে ড্রেসিংরুমে সবচেয়ে জোরে তালি মারে (সুনীল) যোশি। চাকরিটা নড়বড়ে হলো না, এই আনন্দে!’ মিরাজকে নিয়ে শংসাবচন শোনা গেল টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মুখেও।

দলের তরুণ খেলোয়াড়েরা যেখানে সমালোচিত হচ্ছেন ধারাবাহিক বাজে খেলায়, মিরাজ সেখানে কেন ব্যতিক্রম, পরশু সন্ধ্যায় সেন্ট কিটসের হোটেল ম্যারিয়টের লবিতে দাঁড়িয়ে সাকিব সেটির ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘ও যখন খেলা শুরু করেছে, তখন থেকেই সবাই জানি সে ভালো বোলার। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিল। যেহেতু অধিনায়ক ছিল, সব আলো ওর দিকেই ছিল। ওর বয়স কম হলেও মাথাটা পরিণত।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ সামলে দলের একজন তরুণ সদস্য হিসেবে মিরাজ কীভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলেন, একটু থেমে সেটির চমৎকার বিশ্লেষণ করলেন বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, ‘ওর সুবিধা ছিল, সে ঘরোয়া ক্রিকেটে খুলনা দলে খেলেছে। খুলনার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট যে ম্যাচগুলো খেলেছে সেখানে অভিজ্ঞ রাজ ভাই (আবদুর রাজ্জাক) ছিলেন। রাজ ভাইকে দেখেও অনেক কিছু শেখা সম্ভব। প্রায় প্রতি ম্যাচে তিনি ৫-৬ উইকেট করে নিচ্ছেন। এটা অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার! মিরাজ তাঁর সঙ্গে খেলছে, এই অভিজ্ঞতা তাকে কাজে দিচ্ছে। সাধারণত খুলনা দলে যারা খেলে, তারা কোনো না কোনো সময়ে বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করে। এই ভালো সংস্কৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠায় সেটা মিরাজের কাজে দিচ্ছে। ও আসার পর থেকেই ভালো বোলিং করছে। টেস্টে আমাদের মধ্যে সেরা স্পিনার এখন ওকেই বলা যায়। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টেস্টে ভালো করেছে। ওয়ানডে সিরিজও অসাধারণ বোলিং করেছে। এই ধারাটা ধরে রাখতে পারলে আশা করি, টি-টোয়েন্টিতেও ভালো করবে।’

মিরাজের আরও একটা বড় গুণ, মাঠে সব সময় সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করতে থাকেন। সাকিব মনে করেন এই গুণটা মিরাজ পেয়েছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব থেকে, ‘এগুলো আসে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভ্যাস থেকে। ও যেহেতু অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অধিনায়কত্ব করেছে, এ গুণটা সেখান থেকেই পেয়েছে। অন্যরা যারা নেতৃত্ব দেয়নি, তাদের মধ্যে এটা কম দেখা যায়। আর ও যেহেতু ধারাবাহিক ভালো খেলে, মাঠে অনেক বেশি প্রাণবন্ত থাকে। যদিও কেমন খেললাম, সেটা না ভেবে মাঠে সবারই প্রাণবন্ত থাকা উচিত।’

ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর সেন্ট কিটসের চাঁদনিরাতে যখন খেলোয়াড়েরা মন খুলে আড্ডা দিচ্ছেন, মিরাজ সিনিয়রদের অনুমতি চাইছেন রুমে ফেরার। মাহমুদউল্লাহ রসিকতা করে জানতে চাইলেন, ‘কাল (ঐচ্ছিক অনুশীলন) তোর যোশি স্যারের সঙ্গে বোলিং করবি না?’

‘না, ভাই আমার ডান কাঁধটা মনে হচ্ছে ছিঁড়ে পড়বে!’ -আসলেই মিরাজের একটু বিশ্রাম দরকার। ছোট্ট কাঁধে যে বড় ধকল গেছে।