ঢাকা ০২:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ায় আ: লীগ নেতার মৃত্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক বরিশালে বৃষ্টি কামনায় নামাজ আদায়। রুপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক দুর্ধর্ষ ডাকাত ওমর ফারুক গ্রেফতার বানারীপাড়ায় কিশোরী অপহরণ করে ধর্ষণ। বাকেরগঞ্জ থেকে ধর্ষক গ্রেফতার। “কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের আয়োজন করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা” বরিশালে পথ শিশুদের সহযোগিতায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গজারিয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দুই প্রতিষ্ঠান কে অর্থদন্ড টেকপাড়া ও ইয়াকুব নগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্হদের মাঝে নগর অর্থ ও বস্ত্র বিতরণ বাস ও ফুটওভার ব্রিজ মুখোমুখি সংঘর্ষ

মা ছেলের মধ্যে বিরোধ বাল্যবিবাহ নিয়ে

ভাস্কর মজুমদার (নিজস্ব প্রতিবেদক): লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বোনের (মেধাবী ছাত্রী) বাল্যবিবাহ মেনে নিতে না পেরে জেলা প্রশাসকের নিকট কাজীসহ চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ায় কারাগারে গেলেন ভাই ওমর ফারুক? নিজের করা মামলার স্বাক্ষ্য প্রমান নিয়ে ওমর ফারুক মঙ্গলবার রামগঞ্জ থানায় গেলে পুলিশ তাঁর মায়ের করা মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে দুপুরের দিকে কোর্টে পাঠায়। তখন আদালতের বিচারক নেমে যাওয়ায় স্বামী ওমর ফারুকের জামিন চাওয়া সম্ভব হয়নি বলে তার স্ত্রী লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করা আকলিমা আক্তার সাংবাদিকদের জানান। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মেধাবী ছাত্রী বোন ফাতেমা আক্তারের বাল্যবিবাহ মেনে নিতে না পারায় আমার স্বামীকে সম্পূর্ণ মিথ্যা কাল্পনিক মামলায় আজ কারাগারে যেতে হলো। আর কোনো ভাইয়ের জীবনে এরকম ঘটনা যেন না ঘটে। আকলিমা আরও বলেন, বোনের বাল্যবিবাহের প্রতিবাদ করায় আমার শ্বাশুড়ি মনোয়ার বেগম আমাদের বাড়ীতে গিয়েও অকথ্য ভাষায় আমাদেরকে গালাগাল করে নানানরকম হমকি ধমকি দেয়।

জানা গেছে, গত ৯ এপ্রিল ওমর ফারুকের বোন নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী ফাতেমা আক্তার (১৫) এর সাথে রামগঞ্জ পৌরসভার সোনাপুর এলাকার আঠিয়া বাড়ীর ইয়াকুব আঠিয়ার পুত্র মোঃ কাউছার আহম্মদের গোপনে বিবাহ হয়। পিএসসিতে এ প্লাস প্রাপ্ত ফাতেমা আক্তার রামগঞ্জের চন্ডীপুর ইউনিয়ন এলাকার একটি দাখিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। তাঁর শ্রেণি রোল নং-১। ঢাকার বনশ্রীতে ঔষধের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে চাকুরীরত স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ভাই ওমর ফারুক খবর পেয়ে পরদিন ১০ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর এসে জেলা প্রশাসকের নিকট সরাসরি সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে কাজীসহ চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানান। জেলা প্রশাসক ওমর ফারুকের নিকট থেকে অভিযোগ পেয়ে রামগঞ্জ ইউএনওকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেন এবং কোর্টে মামলা করার জন্য মৌখিক ভাবে তাকে পরামর্শ দেন। পরে ১৬ এপ্রিল ওমর ফারুক বোনের বাল্য বিবাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করলে আদালত থেকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য রামগঞ্জ থানাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রামগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক শামীমের নিকট মামলার স্বাক্ষ্য- প্রমানসহ হাজির হতে গেলে ৯ মে মঙ্গলবার সকালে ৩০ এপ্রিল মায়ের দায়ের করা মামলায় পুলিশ ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।

ওমর ফারুকের মা মনোয়ারা বেগমের কাছে মঙ্গলবার বিকেলে এ ব্যাপারে মুঠোফোনে আপনার কন্যা মেধাবী ছাত্রী ফাতেমাকে কেন বাল্যবিবাহ দিলেন আর পুত্রের বিরুদ্ধে কেনই বা মামলা করলেন জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেয়াতে আমার পুত্র আমাকে মারধর করেছে এজন্য আমি পুত্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলের দায়ের করা অভিযোগগুলো তুলে নিলে আমিও পুত্রের বিরুদ্ধে করা আমার মামলা উঠিয়ে নিবো।

ওমর ফারুকের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক শামীমের নিকট ৯ মে সন্ধ্যায় মুঠোফোন মামলার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, মামলার তদন্তের কাজ চলছে। এ মূহুর্তে এর চেয়ে বেশি আর বলা যাবে না।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি তাদের মা-ছেলের মধ্যে বিরোধ আছে। বোনের বাল্যবিয়ের প্রতিবাদ করায় ভাই ওমর ফারুক এখন কারাগারে জানেন কিনা প্রশ্ন করলে, জেলা প্রশাসক পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আপনি চিন্তা করতে পারেন মেয়ের বাল্যবিয়ে দেয়ার পর ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠালেন মা? তিনি কেমন মা? তিনি আরও বলেন মা-বাবাই হলো কন্যার প্রকৃত অভিভাবক। এ বিষয়ে যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে, তাই এর ফয়সালা এখন আদালতেই হবে।

Tag :

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষের শহরে অভিবাসন ও জীনবমান নিয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত

মা ছেলের মধ্যে বিরোধ বাল্যবিবাহ নিয়ে

আপডেট টাইম ০৮:৫৭:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩

ভাস্কর মজুমদার (নিজস্ব প্রতিবেদক): লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বোনের (মেধাবী ছাত্রী) বাল্যবিবাহ মেনে নিতে না পেরে জেলা প্রশাসকের নিকট কাজীসহ চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ায় কারাগারে গেলেন ভাই ওমর ফারুক? নিজের করা মামলার স্বাক্ষ্য প্রমান নিয়ে ওমর ফারুক মঙ্গলবার রামগঞ্জ থানায় গেলে পুলিশ তাঁর মায়ের করা মামলায় তাকে আটক দেখিয়ে দুপুরের দিকে কোর্টে পাঠায়। তখন আদালতের বিচারক নেমে যাওয়ায় স্বামী ওমর ফারুকের জামিন চাওয়া সম্ভব হয়নি বলে তার স্ত্রী লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করা আকলিমা আক্তার সাংবাদিকদের জানান। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মেধাবী ছাত্রী বোন ফাতেমা আক্তারের বাল্যবিবাহ মেনে নিতে না পারায় আমার স্বামীকে সম্পূর্ণ মিথ্যা কাল্পনিক মামলায় আজ কারাগারে যেতে হলো। আর কোনো ভাইয়ের জীবনে এরকম ঘটনা যেন না ঘটে। আকলিমা আরও বলেন, বোনের বাল্যবিবাহের প্রতিবাদ করায় আমার শ্বাশুড়ি মনোয়ার বেগম আমাদের বাড়ীতে গিয়েও অকথ্য ভাষায় আমাদেরকে গালাগাল করে নানানরকম হমকি ধমকি দেয়।

জানা গেছে, গত ৯ এপ্রিল ওমর ফারুকের বোন নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী ফাতেমা আক্তার (১৫) এর সাথে রামগঞ্জ পৌরসভার সোনাপুর এলাকার আঠিয়া বাড়ীর ইয়াকুব আঠিয়ার পুত্র মোঃ কাউছার আহম্মদের গোপনে বিবাহ হয়। পিএসসিতে এ প্লাস প্রাপ্ত ফাতেমা আক্তার রামগঞ্জের চন্ডীপুর ইউনিয়ন এলাকার একটি দাখিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। তাঁর শ্রেণি রোল নং-১। ঢাকার বনশ্রীতে ঔষধের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে চাকুরীরত স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ভাই ওমর ফারুক খবর পেয়ে পরদিন ১০ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর এসে জেলা প্রশাসকের নিকট সরাসরি সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে কাজীসহ চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানান। জেলা প্রশাসক ওমর ফারুকের নিকট থেকে অভিযোগ পেয়ে রামগঞ্জ ইউএনওকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেন এবং কোর্টে মামলা করার জন্য মৌখিক ভাবে তাকে পরামর্শ দেন। পরে ১৬ এপ্রিল ওমর ফারুক বোনের বাল্য বিবাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করলে আদালত থেকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য রামগঞ্জ থানাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রামগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক শামীমের নিকট মামলার স্বাক্ষ্য- প্রমানসহ হাজির হতে গেলে ৯ মে মঙ্গলবার সকালে ৩০ এপ্রিল মায়ের দায়ের করা মামলায় পুলিশ ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।

ওমর ফারুকের মা মনোয়ারা বেগমের কাছে মঙ্গলবার বিকেলে এ ব্যাপারে মুঠোফোনে আপনার কন্যা মেধাবী ছাত্রী ফাতেমাকে কেন বাল্যবিবাহ দিলেন আর পুত্রের বিরুদ্ধে কেনই বা মামলা করলেন জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেয়াতে আমার পুত্র আমাকে মারধর করেছে এজন্য আমি পুত্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলের দায়ের করা অভিযোগগুলো তুলে নিলে আমিও পুত্রের বিরুদ্ধে করা আমার মামলা উঠিয়ে নিবো।

ওমর ফারুকের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক শামীমের নিকট ৯ মে সন্ধ্যায় মুঠোফোন মামলার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, মামলার তদন্তের কাজ চলছে। এ মূহুর্তে এর চেয়ে বেশি আর বলা যাবে না।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি তাদের মা-ছেলের মধ্যে বিরোধ আছে। বোনের বাল্যবিয়ের প্রতিবাদ করায় ভাই ওমর ফারুক এখন কারাগারে জানেন কিনা প্রশ্ন করলে, জেলা প্রশাসক পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আপনি চিন্তা করতে পারেন মেয়ের বাল্যবিয়ে দেয়ার পর ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠালেন মা? তিনি কেমন মা? তিনি আরও বলেন মা-বাবাই হলো কন্যার প্রকৃত অভিভাবক। এ বিষয়ে যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে, তাই এর ফয়সালা এখন আদালতেই হবে।