মোঃ ওমর ফারুক অনিক”মালদ্বীপ থেকেঃ- প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের শেষের দিনটি শেষ হতেই শুরু হয় ইংরেজি নতুন বর্ষবরণের প্রস্তুতিপর্ব। মালদ্বীপেও বর্ষবরণ উদযাপন বা দিনটিকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরের নতুন দিনটিকে বরণ করার জন্য কতকিছুই না আয়োজন করে থাকে। নীলাভ মেঘ আর সমুদ্র ঘেরা মানুষ ঘরে বাইরে সবখানেই প্রতিক্ষা, অপেক্ষা, চাওয়া, পাওয়া, দেওয়া নেওয়ার শুরু হয় দিন শেষে। কখন ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা বাজবে, কখন ঘণ্টা বাজবে আর কখন আতশবাজির চড়ানো রঙ্গিন মূহুর্তে কিঞ্চিৎ মনকে রাঙ্গিয়ে তুলবে।হঠাৎ যখন সেই সময়টি এসে হাজির হয় ঠিক তখনই ঘরে, বাইরে, উল্লাসে মন মাতানো বন্ধু তার বান্ধবী, প্রিয় তার প্রিয়ার, স্বামী তার স্ত্রীর গা জড়িয়ে ধরে গাইতে শুরু করে হেপি নিউ ইয়ার। এই হচ্ছে এখানকার বর্ষবরণ উদযাপন, কিন্তু এর বাইরেও যে জগত আছে তা এদের অনেকে জানলেও আমার মতো উপলব্ধি করার সৌভাগ্য হবে বা হয়েছে বলে মনে হয় না।
ইংরেজি বছরের মতো নতুন করে বাংলা বর্ষবরণ প্রত্যেক বছরই আসে। বহু দিন, বহু মাস, বহু বছর যে দিনটি আগে এসেছে, তা আবার ঘুরে ফিরে হাজির হয়েছে কিছুটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, ফিরে এসেছে কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে নতুন করে সেই দিনপঞ্জিকাটিতে। পহেলা বৈশাখের প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে প্রবাসীদের শুরু হয় বর্ষবরণ উৎসব। এ সময় নতুন সূর্যকে প্রত্যক্ষ করতে সামনে নীল-আর সবুজের অন্তরঙ্গ মিশেলে চলা জল আর বালি পাথরের এই সমুদ্র সৈকতকে ভীড় করেন মালদ্বীপ প্রবাসীরা।
“স্তক তুলিতে দাও ঐ অনন্ত আকাশে” এই প্রত্যয় নিয়ে প্রবাসে ও প্রবাসী নতুন প্রজন্মের মধ্যে আবহমান বাঙালী সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ও জাতিগত আত্মপরিচয় ছড়িয়ে দিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (২৭ মে) মালদ্বীপের বাংলাদেশ দূতাবাসের হলরুমে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হলো পহেলা বৈশাখ, ১৪২৯। মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ এর উদ্যোগে কর্মরত শ্রমজীবী প্রবাসীদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
উক্ত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মান্যবর হাইকমিশনার জনাব এস এম আবুল কালাম আজাদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিশনের প্রথম সচিব মোঃ সোহেল পারভেজ, মিশনের তৃতীয় সচিব মোঃ মিজানুর রহমান ভুঞা সহ দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দ।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গ্লোবাল রিচস এর চেয়ারম্যান সিআইপি আলহাজ্ব সোহেল রান, ডঃ খঃ লিয়াকত আলী, হেড অফ কার্ডস অ্যান্ড ডিজিটাল ব্যাংকিং, মালদ্বীপ ইসলামিক ব্যাংক মোঃ আরেফুর রহমান চৌধুরী, ভিউ কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড এর চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন, ঢাকা ট্রেডার্স এর চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন, ফোর এল ইন্টারন্যাশনাল এর চেয়ারম্যান হাদিউল ইসলাম, ফুড এন্ড ফুড এর চেয়ারম্যান নুরে আলম রিন্টু, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনবিএল মানি ট্রান্সফার প্রাইভেট লিমিটেড এর কর্মকর্তা কর্মচারী, ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের কর্মকর্তা কর্মচারী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ীক, প্রবাসী ডক্টর’স, শিক্ষক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবি সহ প্রিন্ট মিডিয়ার স্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বর্ষবরণের প্রবাসীদের মিলনায়তনের প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ হাইকমিশনার বলেন, আপনারা সবাই এক একটি অ্যাম্বাসেডর। যার যার অবস্থান থেকে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখছেন। দূতাবাসের সব কর্মকর্তা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত। তিনি আরও বলেন, মালদ্বীপের, রাজধানীর দুরবর্তী দ্বীপ গুলোতে আপনারা যারা বসবাস করছেন আপনাদের হাইকমিশনে কষ্ট করে না এসে দূতাবাসের ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন এর মাধ্যমে সেবা নিতে পারেন। এছাড়া করোনাকালে মালদ্বীপ সরকারের বিধিনিষেধ মেনে প্রবাসীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তিনি উল্লেখ করেন পরবর্তীতে রাজধানীর পাশাপাশি অন্য দ্বীপ গুলোতেও শ্রমজীবী প্রবাসীদের নিয়ে ঈদ পূর্ণমিলন ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করা হবে।
মান্যবর হাইকমিশনার উপস্থিত প্রবাসীদের পরামর্শ ও বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন, নতুন শ্রমিক রিক্রুটমেন্ট এবং লিগেলাইজেশন প্রক্রিয়া দ্রুত ও প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে মালদ্বীপ সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার এবং দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেন শ্রমজীবী প্রবাসীরা। এ বিষয়ে মান্যবর হাইকমিশনার বলেন, যত দ্রুত সম্ভব নতুন শ্রমিক রিক্রুটমেন্ট নিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি ঘোষণা ছাড়া কারো সঙ্গে পাসপোর্ট বা টাকা লেনদেন না করার পরামর্শ দেন তিনি।
সবশেষে, দূর প্রবাসে বাঙ্গালি জীবনে বাঙ্গালি সংস্কৃতির এ উৎসবের মহামিলনের আয়োজন করায় মান্যবর হাইকমিশনারে ধন্যবাদ জানিয়ে, কর্মজীবনের পাশাপাশি সম্প্রীতির বন্ধনে এমনি করে বারবার এই মহামিলনে জেগে উঠুক নতুনপ্রজন্ম, হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ করে লাল সবুজ আর মুক্তিযুদ্ধেও বাংলাদেশ হয়ে উঠুক আরো সুন্দর, আরো উন্নত এমনটাই প্রত্যাশা করেন মালদ্বীপে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা।