ঢাকা ০৯:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
–গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা এলাকায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি শ্রী রুপেন দাশ’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব । চন্দনাইশে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু ইষ্টার্ণ হাউজিংয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ায় সাংবাদিকদের উপর হামলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে কোরআন শরিফ অবমাননা করায় মানববন্ধন রাঙ্গুনিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনার চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দিঘলিয়া উপজেলার প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। চট্টগ্রামে সাতকানিয়ায় গভীর রাতে কৃষি জমির মাটি কাটার দায়ে দুইজনকে কারাদণ্ড … নড়াইলে মসজিদ ইমামের স্ত্রীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার, ভাড়াটিয়া পলাতক চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেছেন: প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা প্রচণ্ড দাবদাহে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের স্বস্তির উদ্যোগ।

মাধবপুরে আগাম শিমের ভাল ফলন চাষিদের মুখে হাসি।

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের মাধবপুরে আগাম শিম চাষ করে উপজেলার চাষিরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। ভাল ফলন ও দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। ধান-পাট চাষের অব্যাহত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদের এ শিম চাষ। বিগত বছরের তুলনায় এবার তারা শিমের বেশী দাম পাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং আরো এক মাস ভাল দাম পেলে প্রতিটি শিম চাষির ঘরে আনন্দের বন্যা বইবে এমন প্রত্যাশা এ উপজেলার শিম চাষিদের।

উপজেলার ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা, জগদীশপুর, শাহজাহানপুর, তেলিয়াপাড়া, নয়াপাড়া, বাঘাসুরা, ছাতিয়াইন সহ কয়েকটি গ্রামের মাঠে প্রচুর পরিমাণ শিম চাষ হয়েছে। এলাকাঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ শিম ফুলে ভরে উঠেছে চাষি শিমক্ষেতে সেচ ও বীজ দিচ্ছে। করছে শিম গাছের পরিচর্যা। কেউ তুলছেন শিম। শাহপুর গ্রামের মাঠে কয়েকজন চাষির সাথে কথা হয়। তারা জানান স্থানীয়ভাবে তৈরি উন্নত জাতের শিম চাষ করেছেন এলাকার চাষিরা।

জানা যায় ওই গ্রামের শাহজাহান মিয়া সাড়ে ৪ বিঘা রিপন ২ বিঘা আলামিন সিরাজ ও আব্দুল হক এক বিঘা করে জমিতে শিম চাষ করেছেন। তারা জানালেন, সাধারণত মাঝ আষাঢ়ে শিম চাষ করতে হয়। এবার এলাকার চাষীরা জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি শিম চাষ শুরু করেছেন। আগাম শিম উঠছে। মাধবপুর বাজারে পাইকারি ২ হাজার ৮শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মন দরে এ শিম বিক্রি হচ্ছে। জালুয়াবাদ গ্রামের চাষি আকবর দেড় বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন তিনি জানালেন, এ পর্যন্ত তার ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে শিমের আবাদ শেষ হওয়া পর্যন্ত তার দেড় বিঘা জমির পিছনে ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

গেল সপ্তাহে তিনি প্রথম দিনে ২৫ কেজি শিম তুলেছেন। শাহপুর বাজারে ওই শিম ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তিনি এখন প্রতি সপ্তাহে শিম তুলবেন। তিনি বললেন, মাঘ মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে শিম তোলা যাবে। ভাল দাম পেলে বিঘা প্রতি ৬০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন। যদি আরো এক দেড় মাস প্রতি কেজি শিমের দাম ৪০ টাকা বা তার বেশী পান তবুও বিঘা প্রতি ৪০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বাড়াচান্দুরা গ্রামের চাষি ওয়াহাব মিয়া জানান তিনি ১০ কাঠা জমিতে শিম চাষ করেছেন।

তিনি জানালেন, গেল সপ্তাহে প্রথম দিনে ক্ষেত থেকে ২ মন শিম তুলে মাধবপুরে পাইকারি ৩ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেছেন, এ পর্যন্ত ওই জমিতে তার যে খরচ হয়েছে তা প্রথম দিনের বিক্রিত শিমের দামে ওঠে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে চাষ, বীজ-সেচ, সার-বিষ ও লেবার বাবদ প্রতি বিঘা শিমে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। গত বছর তার মাত্র ৮ কাঠা জমিতে শিম চাষে খরচ বাদে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল এবছরও তিনি মোটা টাকা লাভের আশাবাদী।

মাধবপুর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী ছোট্টু মিয়া জানান বাজারে খুচরা শিম বিক্রির জন্য আসছে না বললেই চলে। গ্রামের শিম চাষিরা বিকেলে বিকেলে শিম নিয়ে আড়তে দিচ্ছে। মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাসান বলেন, এবছর শিম চাষ ভাল হয়েছে। আবহাওয়া বৈরি না হলে শিম চাষে চাষি খুব ভাল লাভবান হবেন এবছর মাধবপুর উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে।

মাধবপুরে বিলুপ্তির পথে পাহাড়ি এটেঁল মাটি দিয়ে তৈরি হওয়া সুস্বাদু খাবার ছিকর।

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকেই ভাবছেন- ছিকর আবার কোন খাবার তাও মাটি দিয়ে তৈরী হতো এটা কীভাবে সম্ভব অবাক হওয়ারই কথা। অবাক হলেও কথাটি সত্যি। বর্তমান প্রজন্মের কাছে ছিকর শব্দটি নতুন মনে হলে প্রবীনদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চল খ্যাত তেলিয়াপাড়া, সুরমা ১০ নং, সাতছড়ি এলাকায় এতিহ্যবাহী ছিকর শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আশি দশকের পূর্বে ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি পরিবার পাহাড়ের এটেঁল জাতীয় মাটি দিয়ে এক প্রকার আহার্য্য সামগ্রী তৈরি করে বিক্রি লব্দ অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

বিভিন্ন জিনিস পত্রের সাথে ইহা ফেরি করে নগদ টাকা পয়সা ও চাউল দিয়ে বিক্রি করা হত বলে জানা যায়। উলেখ্য ছিকর একটি ফারসি শব্দ। ছিয়া মানে কালো আর কর মানে মাটি। ছিয়াকর শব্দটিই পরে ছিকর হয়ে গেছে। ক্ষুধা নিবারণের জন্য নয়, বরং এক ধরণের অভ্যাসের বশে লোকজন তা খেয়েছে বলে প্রবীণ লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। ছিকর হচ্ছে একধরণের পোড়া মাটি। পাহাড়ি টিলার মাটি দিয়ে বিশেষ এক পদ্ধতিতে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি হয় ছিকর। ছিকর বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। কোনটি দেখতে বিস্কুটের মত কোন কোন ছিকর আছে ললিপপের মত লম্বা আবার কোন ছিকর ছোট লজেন্সের মতো।

এবার ছিকরের খোজেঁ গিয়ে পাওয়া গেল একজন ছিকর শিল্পীকে। তিনি সুরমা ১০ নং এর দিনেশ মুন্ডা। তিনি বাপ-দাদার আমল থেকেই ছিকর বানান। দিনেশ মুন্ডা জানান, পূর্বপুরুষরা পাইকারদের চাহিদা মেটাতে পারতেন না। সেটা শত বছর আগের কথা। ছিকরের মাটিকে লোকে ডাকে ছিকনা মাটি। এক ধরনের এঁটেল মাটি। উপজেলার উজান এলাকা সহ পাহাড়ে মেলে এ মাটি। তিনি বলেন ছিকর তৈরিতে আসলে লাগে দক্ষতা। মাটি শুকানো ও পোড়ানোতেই আসল কারসাজি। ঠিকভাবে না হলে স্বাদ আর ঘ্রাণ কোনোটাই পাওয়া যায় না। ছিকনা মাটি তুলে আনাটাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। টিলায় গর্ত খুঁড়ে লম্বা বাঁশের সাহায্যে গভীর থেকে তুলে আনা হয় এ মাটি। রাতের বেলা মাটিগুলো একটি গামলায় নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়।

সারা রাত ভিজে মাটি নরম হলে ছাঁচে ফেলে প্রথমে তৈরি করা হয় মন্ড। তারপর কাঠের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে চ্যাপ্টা করা হয়। এরপর চাকু দিয়ে বিস্কুটের মতো ছোট ছোট করে টুকরা করা হয়। তবে গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী ললিপপ বা লজেন্স আকৃতির ছিকরও হয়ে থাকে। কাটার পর কাঁচা ছিকরগুলো রোদে দেওয়া হয়। দু-এক দিন শুকানোর পর এক ধরনের বিশেষ চুলায় এগুলো পোড়ানো হয়। তারপর একটি মাটির হাঁড়ির নিচের অংশ ভেঙে সেখানে লোহার শিক দিয়ে তৈরি চালুনি বসানো হয়। ছিকরগুলো ওই চালুনির ওপর বসানো হয়। তারপর হাঁড়িটি রাখা হয় একটি মাটির গর্তে।

ধানের তুষ দিয়ে আগুন জ্বালানো হয় গর্তে। সতর্কতার সঙ্গে ছিকরের গায়ে শুধু ধোঁয়া লাগানো হয়। দুই ঘণ্টা পর ছিকর কালচে রং ধারণ করে। সুঘ্রাণ তৈরি হয়। গর্ভবতীদের প্রিয় খাদ্য একসময় সিলেট অঞ্চলে, বিশেষ করে হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ছিকরের প্রচুর চাহিদা ছিল। দোকানেও বিক্রি হতো। হকাররা বাড়ি বাড়িও পৌঁছে দিতেন। নগদ টাকায় বা চালের বিনিময়ে ছিকর কেনাবেচা হতো। গর্ভবতী মায়েদের কাছে জনপ্রিয় ছিল ছিকর। বিশ্বাস করা হতো এটা খেলে রোগবালাই সারে কিন্তু এখন এটিকে অস্বাস্থ্যকর হিসেবেই দেখা হয়। মাধবপুর পশ্চিম বাজারে এখনো ছিকর মেলে। মাধবপুর লোকজ সংস্কৃতি সংগ্রাহক ও গবেষক আক্তার হোসেন এ নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন। তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের মাধবপুরে একসময়ের জনপ্রিয় খাবার ছিল এটি। শত বছরের পুরনো এই ছিকরশিল্প। এখন অবশ্য বিলুপ্তপ্রায়।

মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছিকর তৈরির কারিগর ছিল। তিনি বলেন- লোকখাদ্যে মাধবপুর উপজেলার মানুষের আলাদা একটি ঐতিহ্য রয়েছে। অতীতে এ খাদ্যের প্রতি মানুষের নিজস্ব একটি স্বকীয়তা ছিল। খাদ্যগুলো হবিগঞ্জ জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় ত্রিশ শতক থেকে নব্বই শতক পর্যন্ত অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। আক্তার হোসেন এর সংগ্রহ করা তথ্য মতে- কোন এলাকার ছিকরে খাই মাখানোর সময় গোলাপজল, আদার রস ইত্যাদি মেশানো হয়। যা মাটির সাথে পুড়ানোর পর ভিন্ন এক স্বাদের জন্ম দেয়। স্থানীয় কুমার সম্প্রদায় বা মৃৎ শিল্পীদের কেউ কেউ ছিকর তৈরি করে বাজার জাত করতো। উপজেলার হরষপুর উচুঁ টিলা থেকে একসময় বিভিন্ন এলাকার কুমাররা এসে মিহি মাটি সংগ্রহ করত।

কিন্তু আজ কাল কেউ আর মাটি সংগ্রহ করতে যায় না। উক্ত টিলা ছাড়াও মাধবপুরের বিভিন্ন জায়গায় ছিকরের উপযোগি মাটি আহরণের ক্ষেত্র আছে। উপজেলার হরিশ্যামা গ্রামের অজিত পাল জানান, মাটিকে ভিজিয়ে নরম করে রুটির মত করে ছোট ছোট টুকরোর মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুধু মাত্র আগুনের ধোয়া দিয়ে পুড়িয়ে তৈরী করা হত। যা এ অঞ্চলের গ্রামগুলোতে ছিকর নামে পরিচিত। ৭০/৮০ দশকে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে প্রচুর পরিমাণে এই ছিকর পাওয়া যেত। গর্ভবতী মহিলাদের কাছে ইহা একটি পছন্দনীয় সুস্বাদু খাদ্য ছিল।

তাদের ধারণা ছিল এটা খেলে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে বেঁচে থাকা যাবে। আধুনিক শিক্ষিত মানুষরা ছিকর খাওয়াকে অস্বাস্থ্যকর ও রুচি বিরুদ্ধ বিবেচনা করার কারণে ছিকর এখন বিলুপ্তির পথে।

Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

–গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা এলাকায় স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি শ্রী রুপেন দাশ’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ।

মাধবপুরে আগাম শিমের ভাল ফলন চাষিদের মুখে হাসি।

আপডেট টাইম ০৬:০৮:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের মাধবপুরে আগাম শিম চাষ করে উপজেলার চাষিরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। ভাল ফলন ও দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। ধান-পাট চাষের অব্যাহত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদের এ শিম চাষ। বিগত বছরের তুলনায় এবার তারা শিমের বেশী দাম পাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং আরো এক মাস ভাল দাম পেলে প্রতিটি শিম চাষির ঘরে আনন্দের বন্যা বইবে এমন প্রত্যাশা এ উপজেলার শিম চাষিদের।

উপজেলার ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা, জগদীশপুর, শাহজাহানপুর, তেলিয়াপাড়া, নয়াপাড়া, বাঘাসুরা, ছাতিয়াইন সহ কয়েকটি গ্রামের মাঠে প্রচুর পরিমাণ শিম চাষ হয়েছে। এলাকাঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ শিম ফুলে ভরে উঠেছে চাষি শিমক্ষেতে সেচ ও বীজ দিচ্ছে। করছে শিম গাছের পরিচর্যা। কেউ তুলছেন শিম। শাহপুর গ্রামের মাঠে কয়েকজন চাষির সাথে কথা হয়। তারা জানান স্থানীয়ভাবে তৈরি উন্নত জাতের শিম চাষ করেছেন এলাকার চাষিরা।

জানা যায় ওই গ্রামের শাহজাহান মিয়া সাড়ে ৪ বিঘা রিপন ২ বিঘা আলামিন সিরাজ ও আব্দুল হক এক বিঘা করে জমিতে শিম চাষ করেছেন। তারা জানালেন, সাধারণত মাঝ আষাঢ়ে শিম চাষ করতে হয়। এবার এলাকার চাষীরা জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি শিম চাষ শুরু করেছেন। আগাম শিম উঠছে। মাধবপুর বাজারে পাইকারি ২ হাজার ৮শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মন দরে এ শিম বিক্রি হচ্ছে। জালুয়াবাদ গ্রামের চাষি আকবর দেড় বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন তিনি জানালেন, এ পর্যন্ত তার ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে শিমের আবাদ শেষ হওয়া পর্যন্ত তার দেড় বিঘা জমির পিছনে ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

গেল সপ্তাহে তিনি প্রথম দিনে ২৫ কেজি শিম তুলেছেন। শাহপুর বাজারে ওই শিম ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তিনি এখন প্রতি সপ্তাহে শিম তুলবেন। তিনি বললেন, মাঘ মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে শিম তোলা যাবে। ভাল দাম পেলে বিঘা প্রতি ৬০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন। যদি আরো এক দেড় মাস প্রতি কেজি শিমের দাম ৪০ টাকা বা তার বেশী পান তবুও বিঘা প্রতি ৪০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বাড়াচান্দুরা গ্রামের চাষি ওয়াহাব মিয়া জানান তিনি ১০ কাঠা জমিতে শিম চাষ করেছেন।

তিনি জানালেন, গেল সপ্তাহে প্রথম দিনে ক্ষেত থেকে ২ মন শিম তুলে মাধবপুরে পাইকারি ৩ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেছেন, এ পর্যন্ত ওই জমিতে তার যে খরচ হয়েছে তা প্রথম দিনের বিক্রিত শিমের দামে ওঠে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে চাষ, বীজ-সেচ, সার-বিষ ও লেবার বাবদ প্রতি বিঘা শিমে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। গত বছর তার মাত্র ৮ কাঠা জমিতে শিম চাষে খরচ বাদে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল এবছরও তিনি মোটা টাকা লাভের আশাবাদী।

মাধবপুর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী ছোট্টু মিয়া জানান বাজারে খুচরা শিম বিক্রির জন্য আসছে না বললেই চলে। গ্রামের শিম চাষিরা বিকেলে বিকেলে শিম নিয়ে আড়তে দিচ্ছে। মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাসান বলেন, এবছর শিম চাষ ভাল হয়েছে। আবহাওয়া বৈরি না হলে শিম চাষে চাষি খুব ভাল লাভবান হবেন এবছর মাধবপুর উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে।

মাধবপুরে বিলুপ্তির পথে পাহাড়ি এটেঁল মাটি দিয়ে তৈরি হওয়া সুস্বাদু খাবার ছিকর।

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকেই ভাবছেন- ছিকর আবার কোন খাবার তাও মাটি দিয়ে তৈরী হতো এটা কীভাবে সম্ভব অবাক হওয়ারই কথা। অবাক হলেও কথাটি সত্যি। বর্তমান প্রজন্মের কাছে ছিকর শব্দটি নতুন মনে হলে প্রবীনদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চল খ্যাত তেলিয়াপাড়া, সুরমা ১০ নং, সাতছড়ি এলাকায় এতিহ্যবাহী ছিকর শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আশি দশকের পূর্বে ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি পরিবার পাহাড়ের এটেঁল জাতীয় মাটি দিয়ে এক প্রকার আহার্য্য সামগ্রী তৈরি করে বিক্রি লব্দ অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

বিভিন্ন জিনিস পত্রের সাথে ইহা ফেরি করে নগদ টাকা পয়সা ও চাউল দিয়ে বিক্রি করা হত বলে জানা যায়। উলেখ্য ছিকর একটি ফারসি শব্দ। ছিয়া মানে কালো আর কর মানে মাটি। ছিয়াকর শব্দটিই পরে ছিকর হয়ে গেছে। ক্ষুধা নিবারণের জন্য নয়, বরং এক ধরণের অভ্যাসের বশে লোকজন তা খেয়েছে বলে প্রবীণ লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। ছিকর হচ্ছে একধরণের পোড়া মাটি। পাহাড়ি টিলার মাটি দিয়ে বিশেষ এক পদ্ধতিতে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি হয় ছিকর। ছিকর বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। কোনটি দেখতে বিস্কুটের মত কোন কোন ছিকর আছে ললিপপের মত লম্বা আবার কোন ছিকর ছোট লজেন্সের মতো।

এবার ছিকরের খোজেঁ গিয়ে পাওয়া গেল একজন ছিকর শিল্পীকে। তিনি সুরমা ১০ নং এর দিনেশ মুন্ডা। তিনি বাপ-দাদার আমল থেকেই ছিকর বানান। দিনেশ মুন্ডা জানান, পূর্বপুরুষরা পাইকারদের চাহিদা মেটাতে পারতেন না। সেটা শত বছর আগের কথা। ছিকরের মাটিকে লোকে ডাকে ছিকনা মাটি। এক ধরনের এঁটেল মাটি। উপজেলার উজান এলাকা সহ পাহাড়ে মেলে এ মাটি। তিনি বলেন ছিকর তৈরিতে আসলে লাগে দক্ষতা। মাটি শুকানো ও পোড়ানোতেই আসল কারসাজি। ঠিকভাবে না হলে স্বাদ আর ঘ্রাণ কোনোটাই পাওয়া যায় না। ছিকনা মাটি তুলে আনাটাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। টিলায় গর্ত খুঁড়ে লম্বা বাঁশের সাহায্যে গভীর থেকে তুলে আনা হয় এ মাটি। রাতের বেলা মাটিগুলো একটি গামলায় নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়।

সারা রাত ভিজে মাটি নরম হলে ছাঁচে ফেলে প্রথমে তৈরি করা হয় মন্ড। তারপর কাঠের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে চ্যাপ্টা করা হয়। এরপর চাকু দিয়ে বিস্কুটের মতো ছোট ছোট করে টুকরা করা হয়। তবে গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী ললিপপ বা লজেন্স আকৃতির ছিকরও হয়ে থাকে। কাটার পর কাঁচা ছিকরগুলো রোদে দেওয়া হয়। দু-এক দিন শুকানোর পর এক ধরনের বিশেষ চুলায় এগুলো পোড়ানো হয়। তারপর একটি মাটির হাঁড়ির নিচের অংশ ভেঙে সেখানে লোহার শিক দিয়ে তৈরি চালুনি বসানো হয়। ছিকরগুলো ওই চালুনির ওপর বসানো হয়। তারপর হাঁড়িটি রাখা হয় একটি মাটির গর্তে।

ধানের তুষ দিয়ে আগুন জ্বালানো হয় গর্তে। সতর্কতার সঙ্গে ছিকরের গায়ে শুধু ধোঁয়া লাগানো হয়। দুই ঘণ্টা পর ছিকর কালচে রং ধারণ করে। সুঘ্রাণ তৈরি হয়। গর্ভবতীদের প্রিয় খাদ্য একসময় সিলেট অঞ্চলে, বিশেষ করে হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ছিকরের প্রচুর চাহিদা ছিল। দোকানেও বিক্রি হতো। হকাররা বাড়ি বাড়িও পৌঁছে দিতেন। নগদ টাকায় বা চালের বিনিময়ে ছিকর কেনাবেচা হতো। গর্ভবতী মায়েদের কাছে জনপ্রিয় ছিল ছিকর। বিশ্বাস করা হতো এটা খেলে রোগবালাই সারে কিন্তু এখন এটিকে অস্বাস্থ্যকর হিসেবেই দেখা হয়। মাধবপুর পশ্চিম বাজারে এখনো ছিকর মেলে। মাধবপুর লোকজ সংস্কৃতি সংগ্রাহক ও গবেষক আক্তার হোসেন এ নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন। তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের মাধবপুরে একসময়ের জনপ্রিয় খাবার ছিল এটি। শত বছরের পুরনো এই ছিকরশিল্প। এখন অবশ্য বিলুপ্তপ্রায়।

মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছিকর তৈরির কারিগর ছিল। তিনি বলেন- লোকখাদ্যে মাধবপুর উপজেলার মানুষের আলাদা একটি ঐতিহ্য রয়েছে। অতীতে এ খাদ্যের প্রতি মানুষের নিজস্ব একটি স্বকীয়তা ছিল। খাদ্যগুলো হবিগঞ্জ জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় ত্রিশ শতক থেকে নব্বই শতক পর্যন্ত অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। আক্তার হোসেন এর সংগ্রহ করা তথ্য মতে- কোন এলাকার ছিকরে খাই মাখানোর সময় গোলাপজল, আদার রস ইত্যাদি মেশানো হয়। যা মাটির সাথে পুড়ানোর পর ভিন্ন এক স্বাদের জন্ম দেয়। স্থানীয় কুমার সম্প্রদায় বা মৃৎ শিল্পীদের কেউ কেউ ছিকর তৈরি করে বাজার জাত করতো। উপজেলার হরষপুর উচুঁ টিলা থেকে একসময় বিভিন্ন এলাকার কুমাররা এসে মিহি মাটি সংগ্রহ করত।

কিন্তু আজ কাল কেউ আর মাটি সংগ্রহ করতে যায় না। উক্ত টিলা ছাড়াও মাধবপুরের বিভিন্ন জায়গায় ছিকরের উপযোগি মাটি আহরণের ক্ষেত্র আছে। উপজেলার হরিশ্যামা গ্রামের অজিত পাল জানান, মাটিকে ভিজিয়ে নরম করে রুটির মত করে ছোট ছোট টুকরোর মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুধু মাত্র আগুনের ধোয়া দিয়ে পুড়িয়ে তৈরী করা হত। যা এ অঞ্চলের গ্রামগুলোতে ছিকর নামে পরিচিত। ৭০/৮০ দশকে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে প্রচুর পরিমাণে এই ছিকর পাওয়া যেত। গর্ভবতী মহিলাদের কাছে ইহা একটি পছন্দনীয় সুস্বাদু খাদ্য ছিল।

তাদের ধারণা ছিল এটা খেলে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে বেঁচে থাকা যাবে। আধুনিক শিক্ষিত মানুষরা ছিকর খাওয়াকে অস্বাস্থ্যকর ও রুচি বিরুদ্ধ বিবেচনা করার কারণে ছিকর এখন বিলুপ্তির পথে।