ঢাকা ০২:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল। গজারিয়া বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে সিকদার পরিবারে আমিরুল ইসলাম এর সর্মথনে আলোচনা সভা ও ইফতার দোয়া মাহফিল চসিকের ৬ ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের ৩৮ তম সাধারণ সভায় মশা কমাতে কার্যক্রম বাড়াবে : মেয়র রেজাউল “বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন” ইন্দুরকানী প্রেসক্লাবে ইফতার মাহফিল বরিশাল চকবাজার এবায়দুল্লাহ মসজিদে অগ্নিকান্ড। টাঙ্গাইলে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার পাঠক ফোরাম গঠিত চট্টগ্রাম পাহাড়তলীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে জালনোটসহ প্রতারকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রমজান মাসের পবিত্রতা লঙ্ঘন করছে নারায়ণগঞ্জ চিশতিয়া বাউল সমিত

মরুভূমির এক অদ্ভুত গাছ বাওবাব, যার পানি ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১ লাখ লিটার!

বাওবাব গাছের জেনাস নাম Adansonia. এই নামকরণ করা হয়েছে ফ্রান্সের প্রকৃতিবিদ মাইকেল এডানসন এর নাম অনুসারে। তিনিই প্রথম বাওবাব গাছের একটি প্রজাতির নামকরণ করেন Adansonia digitata. প্রজাতির ভিন্নতায় বাওবাব গাছের আকার ও আকৃতির কিছুটা হেরফের হতে পারে। কিন্তু সেটা খুবই সামান্য। বাওবাব গাছের নিচের অংশ গোলাকার এবং কোন শাখাপ্রশাখা নেই বললেই চলে। উপরের দিকে ঝাড়ুর মত কিছু শাখা প্রশাখা রয়েছে। বার মাসের নয় মাসই বাওবাব গাছের কোন পাতা থাকে না।
গাছের পাতা ঝড়ে গেলে মনে হয় এই গাছের ডালপালা সব মাটির নিচে এবং শিকড় গুলো সব মাটির উপরে অর্থাৎ গাছটি উল্টো করে লাগানো। এই কারণে একে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনেক মজার গল্প। যা শুধু রূপকথার বইতেই বেশি মানায়। সব চেয়ে বেশি প্রচলিত গল্পটি এরকম। বাওবাব গাছের আদি নিবাস ছিল স্বর্গে। একদিন শয়তানের মাথায় এক বদ খেয়াল চাপল। সে স্বর্গ থেকে বাওবাব গাছটি উপড়ে এনে পৃথিবীতে উল্টো করে গেড়ে দিল। সেই থেকে বাওবাব গাছে উল্টো হয়ে রয়েছে। আরও একটি কাহিনী প্রচলিত আছে সেটি এরকম।
ধারনা করা হয়, বাওবাব গাছ পৃথিবীর প্রথম ডাঙ্গার গাছ। এরপর আসে তাল, নারিকেল। পাম গাছগুলো যখন সরু কাণ্ড নিয়ে তরতর করে লম্বা হয়ে এ গাছকে ছাড়িয়ে যেতে লাগল, তখন বাওবাব পাম গাছের মতো লম্বা হওয়ার জন্য কান্না জুড়ে দিল। এরপর যখন লাল ফুলের শোভা নিয়ে হাজির হল শিমুল গাছ, তখন বাওবাব গাছ চাইল তার ডালেও যেন ওরকম ফুল ফোটে। এরপর একদিন বাওবাবের দেখা হল অনন্য সুন্দর ডুমুরের সঙ্গে। বাওবাব চাইল ডুমুরের মতো ফল ধরুক। বাওবাবের এত ইচ্ছার কথা শুনে ঈশ্বর রেগে গিয়ে ওটাকে উপড়ে ফেলেন এবং পরে আবার মাটিতে পুঁতে দিলেন উল্টো করে। সেই থেকে নাকি উল্টো হয়ে জন্মাচ্ছে বাওবাব!
এইসব গল্প সেখানকার আদিবাসীদের মুখে মুখে ফেরে। এমন আরও অনেক মজার মজার গল্প বাওবাব গাছকে ঘিরে গড়ে উঠেছে।
অতি প্রাচীনকাল থেকে মরুভূমির মানুষের কাছে একটি প্রয়োজনীয় গাছের নাম বাওবাব। গ্রীষ্মকালে যখন তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশী তখন মরুভূমিতে পানি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। মরুভূমির কিছু কিছু বৃক্ষ এবং ক্যাকটাস তাদের শরীরে পানি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। তাদের মধ্যে অন্যতম হল বাওবাব বৃক্ষ। এই বৃক্ষ এত পরিমাণ পানি ধারণ করে রাখতে পারে যা মানুষের ধারনার অতীত। এর পানি ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১ লাখ লিটার। অর্থাৎ ১০০টি এক হাজার লিটার পানির ট্যাঙ্কে যত পানি ধারণ করা সম্ভব একটি বাওবাব বৃক্ষ সেই পরিমাণ পানি সংরক্ষণ করে রাখতে সক্ষম।
বাওবাব গাছ অনেক দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এমন একটি বাওবাব গাছের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল যার বয়স প্রায় ১২৭৫ বছর। অনেক বছর টিকে থাকার জন্য এই গাছকে প্রতিকূল আবহাওয়ার সাথে লড়াই করতে হয়। আর প্রতিকূল আবহাওয়ার সাথে লড়াই করে টিকে থাকার জন্য এই গাছে ঘটেছে বিশেষ ধরনের অভিযোজন।
এর মূলগুলো অনেক মোটা। তাই এটির পানি শোষণ ক্ষমতা অনেক বেশি। এর রয়েছে নিজস্ব পানি ধারণ ক্ষমতা। আফ্রিকায় যখন পানির তীব্র সংকট দেখা যায় তখন সেখানকার যাযাবর মানুষরা এই গাছ থেকে পানি সংগ্রহ করে। অনেক মানুষ সেই পানি খেয়ে জীবন বাঁচায়। বাওবাব গাছের ফল দেখতে লাউয়ের মত। এই ফলের উপরটা শুকনো। বানরের প্রিয় খাবার এই বাওবাব গাছের ফল। তাই বাওবাব গাছকে কেউ কেউ ‘মাংকি ব্রেড ট্রি’ বলেও ডাকে। বাওবাব গাছের বাকল অনেক মোটা হয়। এর বাকল হয় শক্ত ও আঁশ যুক্ত এবং লম্বা। তাই এর বাকল দিয়ে তৈরি করা যায় রশি ও কাপড় তৈরির জন্য সুতা। এই গাছের ফল খাওয়া যায় এবং পাতা থেকে চাটনি তৈরি করা যায়।
এছাড়া এই গাছের পাতা থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধও তৈরি হয়। গাছের কাণ্ড এতো বিশাল যে, এর গুড়ির গর্তে মানুষ বসবাস করতে পারে। মরু ঝড়ে মানুষ এই গাছের গুড়ির গর্তে আশ্রয় নিয়ে থাকে। অর্থাৎ মরুভূমির মানুষের কাছে একটি উপকারী বৃক্ষ বাওবাব গাছ।
বাওবাবের কান্ড এত পুরু যে তা অগ্নি প্রতিরোধী। কান্ড থেকে একধরনের তন্তু পাওয়া যায়। সেগুলো থেকে তৈরি হয় দড়ি, বাদ্যযন্ত্রের তার, জলনিরোধী ব্যাগ, এমনকি ছাতাও। বাওবাব ফুল বেশ বড় এবং দেখতে সাদা রঙের। এদের ফল ১৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়। প্রমাণ সাইজের ফলগুলো থেকে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত শাঁস, যা বেশ সুস্বাদু খাবার। টক-মিষ্টি স্বাদের বাওয়াব ফল দুগ্ধজাত খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
মালাউইয়ের অধিবাসীরা এ ফল দিয়ে তৈরি করে দারুণ এক জুস। ভিটামিন সি তে পরিপূর্ন এই ফল, সাথে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট এবং পর্যাপ্ত আঁশ। এই এন্টি অক্সিডেন্ট কী করে তা কমবেশি সবারই জানা আছে। শরীররে বুড়িয়ে যেতে বাধা দেয় এই এন্টি অক্সিডেন্ট আর আঁশ পাকস্থলীকে সুস্থ রাখতে দারুণ কার্যকরী। বীজ থেকে তৈরি হয় তেল, সৌন্দর্যচর্চায় যার দারুণ চাহিদা রয়েছে। ভেজে খেতেও মন্দ না বাওবাব বীজ।
আর ফলের খোসা! সেগুলো দিয়ে তৈরি হয় পাল্প এজেন্ট। এদের পাতাও ফেলনা নয়। দারুণ স্বাদের চাটনি তৈরি হয় এদের পাতা সিদ্ধ করে। মালাউই, জাম্বিয়া আর জিম্বাবুয়েতে দারুণ জনপ্রিয় এই চাটনি। টাটকা এবং শুকনো- দু’ভাবেই খাওয়া হয় এদের পাতার নির্যাস। উত্তর নাইজেরিয়াতে এদের আলাদা নাম পর্যন্ত আছে- কুকা। কুকা সুপের প্রধান উপাদান এটি।
জাপানি এক কোম্পানী বাজারে ছেড়েছে বাওবাব পেপসি নামে হালকা টক স্বাদযুক্ত ঠান্ডা পানীয়। তবে বাধ সেধেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তারা কেন জানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাওবাব ফলকে। তাই আস্ত ফল পাওয়া যাবে না ইউরোপে। কিন্তু তাই বলে বাওবাব প্রেমীরা মানবে কেন? স্বল্প পরিসরে ছাড়পত্র দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বলতে গেলে বাধ্য হয়েই। ইউরোপের সুপার মার্কেটে তাই পাওয়া যাচ্ছে বাওবাব ফলের শাঁস।
মাদাগাস্কারের প্রকান্ড সব বাওবাব গাছের কোটরে একসময় সেখানকার আদিবাসীরা বসবাস করতো। আর অস্ট্রেলিয়ার বাওবাবগুলো ব্যবহার হতো আরো বৈচিত্র্যময় কাজে। সেখানকার অধিবাসীরা কারাগার হিসেবে ব্যবহার করতো বাওবাবের প্রকান্ড খোঁড়ল। কোনো কোনো কোটরে নাকি ২০-২৫ জন বন্দীও ধরে যেত! ভাবুন তাহলে কতবড় হয় বাওবাব গাছ। এজন্য এদের নাম বাওবাব প্রিজন ট্রি! অস্ট্রেলিয়ার ইউন্ডহ্যাম অঞ্চলে দেখা মেলে এই বাওবাব প্রিজন ট্রির। এখন অবশ্য বন্দী রাখার বন্দোবস্ত নেই। বরং পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় এক জায়গা এটি! রীতিমত সারাবিশ্ব থেকে মানুষ আসে এই গাছগুলো দেখতে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের সাভানুর নামক জায়গায় এমন তিনটি গাছের দেখা মেলে। ধারণা করা হয়, ভারতীয় বুশম্যানরা এখানে আস্তানা গেড়েছিলো এককালে।
Tag :

জনপ্রিয় সংবাদ

রোজা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকশিত করে-লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল।

মরুভূমির এক অদ্ভুত গাছ বাওবাব, যার পানি ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১ লাখ লিটার!

আপডেট টাইম ০৪:৪০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১
বাওবাব গাছের জেনাস নাম Adansonia. এই নামকরণ করা হয়েছে ফ্রান্সের প্রকৃতিবিদ মাইকেল এডানসন এর নাম অনুসারে। তিনিই প্রথম বাওবাব গাছের একটি প্রজাতির নামকরণ করেন Adansonia digitata. প্রজাতির ভিন্নতায় বাওবাব গাছের আকার ও আকৃতির কিছুটা হেরফের হতে পারে। কিন্তু সেটা খুবই সামান্য। বাওবাব গাছের নিচের অংশ গোলাকার এবং কোন শাখাপ্রশাখা নেই বললেই চলে। উপরের দিকে ঝাড়ুর মত কিছু শাখা প্রশাখা রয়েছে। বার মাসের নয় মাসই বাওবাব গাছের কোন পাতা থাকে না।
গাছের পাতা ঝড়ে গেলে মনে হয় এই গাছের ডালপালা সব মাটির নিচে এবং শিকড় গুলো সব মাটির উপরে অর্থাৎ গাছটি উল্টো করে লাগানো। এই কারণে একে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনেক মজার গল্প। যা শুধু রূপকথার বইতেই বেশি মানায়। সব চেয়ে বেশি প্রচলিত গল্পটি এরকম। বাওবাব গাছের আদি নিবাস ছিল স্বর্গে। একদিন শয়তানের মাথায় এক বদ খেয়াল চাপল। সে স্বর্গ থেকে বাওবাব গাছটি উপড়ে এনে পৃথিবীতে উল্টো করে গেড়ে দিল। সেই থেকে বাওবাব গাছে উল্টো হয়ে রয়েছে। আরও একটি কাহিনী প্রচলিত আছে সেটি এরকম।
ধারনা করা হয়, বাওবাব গাছ পৃথিবীর প্রথম ডাঙ্গার গাছ। এরপর আসে তাল, নারিকেল। পাম গাছগুলো যখন সরু কাণ্ড নিয়ে তরতর করে লম্বা হয়ে এ গাছকে ছাড়িয়ে যেতে লাগল, তখন বাওবাব পাম গাছের মতো লম্বা হওয়ার জন্য কান্না জুড়ে দিল। এরপর যখন লাল ফুলের শোভা নিয়ে হাজির হল শিমুল গাছ, তখন বাওবাব গাছ চাইল তার ডালেও যেন ওরকম ফুল ফোটে। এরপর একদিন বাওবাবের দেখা হল অনন্য সুন্দর ডুমুরের সঙ্গে। বাওবাব চাইল ডুমুরের মতো ফল ধরুক। বাওবাবের এত ইচ্ছার কথা শুনে ঈশ্বর রেগে গিয়ে ওটাকে উপড়ে ফেলেন এবং পরে আবার মাটিতে পুঁতে দিলেন উল্টো করে। সেই থেকে নাকি উল্টো হয়ে জন্মাচ্ছে বাওবাব!
এইসব গল্প সেখানকার আদিবাসীদের মুখে মুখে ফেরে। এমন আরও অনেক মজার মজার গল্প বাওবাব গাছকে ঘিরে গড়ে উঠেছে।
অতি প্রাচীনকাল থেকে মরুভূমির মানুষের কাছে একটি প্রয়োজনীয় গাছের নাম বাওবাব। গ্রীষ্মকালে যখন তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশী তখন মরুভূমিতে পানি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। মরুভূমির কিছু কিছু বৃক্ষ এবং ক্যাকটাস তাদের শরীরে পানি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। তাদের মধ্যে অন্যতম হল বাওবাব বৃক্ষ। এই বৃক্ষ এত পরিমাণ পানি ধারণ করে রাখতে পারে যা মানুষের ধারনার অতীত। এর পানি ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১ লাখ লিটার। অর্থাৎ ১০০টি এক হাজার লিটার পানির ট্যাঙ্কে যত পানি ধারণ করা সম্ভব একটি বাওবাব বৃক্ষ সেই পরিমাণ পানি সংরক্ষণ করে রাখতে সক্ষম।
বাওবাব গাছ অনেক দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এমন একটি বাওবাব গাছের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল যার বয়স প্রায় ১২৭৫ বছর। অনেক বছর টিকে থাকার জন্য এই গাছকে প্রতিকূল আবহাওয়ার সাথে লড়াই করতে হয়। আর প্রতিকূল আবহাওয়ার সাথে লড়াই করে টিকে থাকার জন্য এই গাছে ঘটেছে বিশেষ ধরনের অভিযোজন।
এর মূলগুলো অনেক মোটা। তাই এটির পানি শোষণ ক্ষমতা অনেক বেশি। এর রয়েছে নিজস্ব পানি ধারণ ক্ষমতা। আফ্রিকায় যখন পানির তীব্র সংকট দেখা যায় তখন সেখানকার যাযাবর মানুষরা এই গাছ থেকে পানি সংগ্রহ করে। অনেক মানুষ সেই পানি খেয়ে জীবন বাঁচায়। বাওবাব গাছের ফল দেখতে লাউয়ের মত। এই ফলের উপরটা শুকনো। বানরের প্রিয় খাবার এই বাওবাব গাছের ফল। তাই বাওবাব গাছকে কেউ কেউ ‘মাংকি ব্রেড ট্রি’ বলেও ডাকে। বাওবাব গাছের বাকল অনেক মোটা হয়। এর বাকল হয় শক্ত ও আঁশ যুক্ত এবং লম্বা। তাই এর বাকল দিয়ে তৈরি করা যায় রশি ও কাপড় তৈরির জন্য সুতা। এই গাছের ফল খাওয়া যায় এবং পাতা থেকে চাটনি তৈরি করা যায়।
এছাড়া এই গাছের পাতা থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধও তৈরি হয়। গাছের কাণ্ড এতো বিশাল যে, এর গুড়ির গর্তে মানুষ বসবাস করতে পারে। মরু ঝড়ে মানুষ এই গাছের গুড়ির গর্তে আশ্রয় নিয়ে থাকে। অর্থাৎ মরুভূমির মানুষের কাছে একটি উপকারী বৃক্ষ বাওবাব গাছ।
বাওবাবের কান্ড এত পুরু যে তা অগ্নি প্রতিরোধী। কান্ড থেকে একধরনের তন্তু পাওয়া যায়। সেগুলো থেকে তৈরি হয় দড়ি, বাদ্যযন্ত্রের তার, জলনিরোধী ব্যাগ, এমনকি ছাতাও। বাওবাব ফুল বেশ বড় এবং দেখতে সাদা রঙের। এদের ফল ১৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়। প্রমাণ সাইজের ফলগুলো থেকে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত শাঁস, যা বেশ সুস্বাদু খাবার। টক-মিষ্টি স্বাদের বাওয়াব ফল দুগ্ধজাত খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
মালাউইয়ের অধিবাসীরা এ ফল দিয়ে তৈরি করে দারুণ এক জুস। ভিটামিন সি তে পরিপূর্ন এই ফল, সাথে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট এবং পর্যাপ্ত আঁশ। এই এন্টি অক্সিডেন্ট কী করে তা কমবেশি সবারই জানা আছে। শরীররে বুড়িয়ে যেতে বাধা দেয় এই এন্টি অক্সিডেন্ট আর আঁশ পাকস্থলীকে সুস্থ রাখতে দারুণ কার্যকরী। বীজ থেকে তৈরি হয় তেল, সৌন্দর্যচর্চায় যার দারুণ চাহিদা রয়েছে। ভেজে খেতেও মন্দ না বাওবাব বীজ।
আর ফলের খোসা! সেগুলো দিয়ে তৈরি হয় পাল্প এজেন্ট। এদের পাতাও ফেলনা নয়। দারুণ স্বাদের চাটনি তৈরি হয় এদের পাতা সিদ্ধ করে। মালাউই, জাম্বিয়া আর জিম্বাবুয়েতে দারুণ জনপ্রিয় এই চাটনি। টাটকা এবং শুকনো- দু’ভাবেই খাওয়া হয় এদের পাতার নির্যাস। উত্তর নাইজেরিয়াতে এদের আলাদা নাম পর্যন্ত আছে- কুকা। কুকা সুপের প্রধান উপাদান এটি।
জাপানি এক কোম্পানী বাজারে ছেড়েছে বাওবাব পেপসি নামে হালকা টক স্বাদযুক্ত ঠান্ডা পানীয়। তবে বাধ সেধেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তারা কেন জানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাওবাব ফলকে। তাই আস্ত ফল পাওয়া যাবে না ইউরোপে। কিন্তু তাই বলে বাওবাব প্রেমীরা মানবে কেন? স্বল্প পরিসরে ছাড়পত্র দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বলতে গেলে বাধ্য হয়েই। ইউরোপের সুপার মার্কেটে তাই পাওয়া যাচ্ছে বাওবাব ফলের শাঁস।
মাদাগাস্কারের প্রকান্ড সব বাওবাব গাছের কোটরে একসময় সেখানকার আদিবাসীরা বসবাস করতো। আর অস্ট্রেলিয়ার বাওবাবগুলো ব্যবহার হতো আরো বৈচিত্র্যময় কাজে। সেখানকার অধিবাসীরা কারাগার হিসেবে ব্যবহার করতো বাওবাবের প্রকান্ড খোঁড়ল। কোনো কোনো কোটরে নাকি ২০-২৫ জন বন্দীও ধরে যেত! ভাবুন তাহলে কতবড় হয় বাওবাব গাছ। এজন্য এদের নাম বাওবাব প্রিজন ট্রি! অস্ট্রেলিয়ার ইউন্ডহ্যাম অঞ্চলে দেখা মেলে এই বাওবাব প্রিজন ট্রির। এখন অবশ্য বন্দী রাখার বন্দোবস্ত নেই। বরং পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় এক জায়গা এটি! রীতিমত সারাবিশ্ব থেকে মানুষ আসে এই গাছগুলো দেখতে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের সাভানুর নামক জায়গায় এমন তিনটি গাছের দেখা মেলে। ধারণা করা হয়, ভারতীয় বুশম্যানরা এখানে আস্তানা গেড়েছিলো এককালে।